নরেন্দ্র সিংহ।
এভারেস্ট আরোহণ নিয়ে ভুয়ো দাবির অভিযোগ উঠল নরেন্দ্র সিংহ নামে হরিয়ানার এক পর্বতারোহীর বিরুদ্ধে। অথচ এ বছরেই অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের সর্বোচ্চ সম্মান— তেনজিং নোরগে পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।
বছর চব্বিশের নরেন্দ্র ২০১৬ সালে এভারেস্ট অভিযানে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই অভিযানে তাঁর দলনেতা, অসমের পর্বতারোহী নবকুমার ফুকনেরই দাবি, এভারেস্ট সামিট করতেই পারেননি নরেন্দ্র! ফোনে তিনি বলছেন, ‘‘ভুয়ো সার্টিফিকেট আর ছবি নিয়ে নরেন্দ্র বাড়িতে বসে থাকলে আপত্তি ছিল না। কিন্তু এর জন্য এত বড় সম্মান পাচ্ছে, এটা কলঙ্কের।’’
কেন্দ্রীয় যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া মন্ত্রক এবং ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশন (আইএমএফ)-কে ইমেলে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। যদিও এ নিয়ে নরেন্দ্রের সঙ্গে ফোন, মেসেজ এবং হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও জবাব মেলেনি।
আরও পড়ুন: পাচারের আগে উদ্ধার ৩৫ কোটির প্রত্নসামগ্রী
কোথায় অসঙ্গতি
• মুখে অক্সিজেন মাস্ক থাকলেও তাতে নেই অক্সিজেন পাইপ
• নরেন্দ্রের হাতে ধরা পতাকাগুলি স্থির।
অথচ প্রবল হাওয়ায় আশপাশের পতাকাগুলি বিপরীত দিকে উড়ছে
• পাশে বসা অভিযাত্রীর বুটের ছায়া এবং নরেন্দ্রের ছায়া বিপরীত দিকে
• শ্বাসপ্রশ্বাসের কারণে মাস্কের নীচের অংশে বরফ জমে যাওয়ার চিহ্ন নেই
এ বছর তেনজিং নোরগে সম্মান প্রাপকদের তালিকা সম্প্রতি ঘোষণা করে কেন্দ্র। আগামী ২৯ অগস্ট অনলাইনে পুরস্কার দেওয়ার কথা। তবে তেনজিং নোরগের ছেলে জামলিং দার্জিলিং থেকে ফোনে বলছেন, ‘‘নরেন্দ্রের দাবি সত্যি না মিথ্যা, না জেনে মন্তব্য করব না।’’ নবকুমারের বক্তব্য, ২০১৬ সালের ১৯ মে ক্যাম্প ফোর থেকে সামিট পুশে বেরনোর আগে নরেন্দ্র জানিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে যথেষ্ট অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। ফলে নরেন্দ্র এবং দলের আর এক মহিলা সদস্য সামিটের দিকে এগোননি বলেই দাবি তাঁর। ২০ মে ক্যাম্প ফোরে উপস্থিত পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদারও জানাচ্ছেন, নরেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলার সময়ে তাঁর সামিট হয়নি বলেই জেনেছিলেন।
সেই সময়ে ক্যাম্প টু-তে থাকা পর্বতারোহী দেবাশিস বিশ্বাসও বলছেন, ‘‘ওয়াকিটকিতে আগেই শুনেছিলাম, শেরপা ছেড়ে গিয়েছে বলে সামিটে পৌঁছতে পারেনি নরেন্দ্র। ২১ তারিখ ক্যাম্প টু-তে পৌঁছে আমার তাঁবুতে এসে কান্নাকাটিও করে ও। কয়েক ঘণ্টা পরে সামিট সেরে পৌঁছয় নবকুমার। পর দিন নরেন্দ্র নীচে নেমে যায়।’’
এভারেস্ট সামিটের যে ছবি প্রকাশ করেছেন নরেন্দ্র, সেই ছবিতে অসঙ্গতি রয়েছে বলেও দাবি পর্বতারোহী মহলের। ২০১৬ সালে এভারেস্টের শীর্ষ ওই রকম দেখতে ছিল না বলেও জানাচ্ছেন অনেকেই।
মহারাষ্ট্রের পর্বতারোহী কুন্তল জোশিয়ারের আবার প্রশ্ন, ‘‘২০১৭-১৯ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সামিট হলে তবেই কেউ এ বছর এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হতে পারেন। নরেন্দ্র এভারেস্ট ছাড়া কিলিমাঞ্জারো-এলব্রুসে চড়েছে বলে শুনেছি, যা তেমন কঠিন নয়। কীসের ভিত্তিতে নরেন্দ্রকে এই সম্মান দেওয়া হচ্ছে?’’ কেন্দ্রীয় যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া মন্ত্রক সূত্রের খবর, রাজ্য যুবকল্যাণ দফতর, আইএমএফ এবং সেনাবাহিনীর তরফে পাঠানো নামের ভিত্তিতেই পুরস্কারপ্রাপকদের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে।
২০১৬ সালে তাঁর এভারেস্ট সামিটের ছবি চুরি করেছেন বলে পুণের এক দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন সপ্তশৃঙ্গজয়ী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। নরেন্দ্রকে নিয়ে এই নতুন বিতর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটাই যদি ওঁর এভারেস্ট সামিটের ছবি হয়, তবে তা যথেষ্ট সন্দেহজনক। ছবি পরীক্ষা করা গেলেই সত্যিটা বেরিয়ে আসবে।’’