প্রতীকী ছবি।
মেঘালয়ে ইচামাটি গ্রামে জঙ্গি ও খাসি সংগঠনগুলি নিশানা করছে বাংলাভাষী পরিবারগুলিকে। এই পরিবারগুলির পুরুষেরা গ্রামছাড়া। হেনস্থা করা হচ্ছে অসহায় মহিলা ও শিশুদের। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরে এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে। জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন বিষয়টি নিয়ে ৭ অক্টোবরের মধ্যে মেঘালয়ের ডিজিপি ও এসপির কাছে রিপোর্ট চেয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে মেঘালয়ের পূর্ব খাসি হিল জেলার ইচামাটি এলাকায় সিএএ-বিরোধী এক জনসভা চলার সময় স্থানীয় বাংলাভাষীদের সঙ্গে খাসি ছাত্র সংগঠনের হাতাহাতি হয়। মারা যায় খাসি ছাত্র সংগঠনের সমর্থক এক ট্যাক্সিচালক। এতে উত্তেজনা ছড়ায়। ইচামাটি, ভোলাগঞ্জ, কালিবাড়ি, কালাতক গ্রামের পুরষেরা সেই যে গ্রামছাড়া হয়েছেন, অধিকাংশই আর ফেরেননি। জঙ্গি সংগঠন এইচএনএলসি-ও সব ‘বহিরাগত’ বাংলাভাষীকে অবিলম্বে মেঘালয় ছাড়ার হুমকি দিয়েছিল। ওই ঘটনায় তিন গ্রামের ৭০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পর থেকেই কার্যত স্থানীয় অ-জনজাতিদের কাজকর্ম বন্ধ।
ইচামাটিতে এখন আছেন মূলত মহিলা ও বাচ্চারা। অভিযোগ, খাসি ছাত্র সংগঠন ও সশস্ত্র এইচএনএলসি জঙ্গিরা তাদের নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে। বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা ও অত্যাচার করা চলছে। ভয়ে পুরুষরা গ্রামে ফিরতে পারছেন না। শুধু তা-ই নয়, ভূমিপুত্র না-হওয়ায় পুলিশ-প্রশাসনও তাঁদের নানা ভাবে হেনস্থা করছে। অভিযোগে আমল দিচ্ছে না। ইচামাটির ঘটনার পর থেকে পুলিশ-প্রশাসন ও স্থানীয় সংগঠনগুলি সেখানে বাংলাভাষীদের বৈধ ব্যবসা বা কাজ চালাতে দিচ্ছে না।
অ-জনজাতিদের উপরে স্থানীয় জনজাতি সংগঠন ও জঙ্গিদের এমন ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ হেনস্থার প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রকে অভিযোগ জানিয়েছিলেন সমাজকর্মী গায়ত্রী বরপাত্রগোঁহাই। পশ্চিমবঙ্গের একাধিক মানবাধিকার এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও কলকাতার মেঘালয় হাউসে ইচামাটির বাংলাভাষী পরিবারগুলির উপরে অত্যাচারের প্রতিবাদে স্মারকলিপি জমা দেয়। রাসেল স্ট্রিটে মেঘালয় হাউসের সামনে বিক্ষোভও প্রদর্শন করা হয়। স্মারকপত্র পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা ও রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের কাছেও।
জাতীয় মহিলা কমিশনের অভিযোগ পেয়ে ডিজিপি পূর্ব খালি হিলের এসপিকে অবিলম্বে বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছেন। জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন নির্দিষ্ট করে জানতে চেয়েছে, কত জন শিশু এই হিংসা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে? কোন কোন সংগঠন অত্যাচার চালাচ্ছে? কোন পুলিশকর্মী বা কর্তা শিশুদের হেনস্থা করেছেন? স্থানীয় শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? কমিশন এসপিকে নির্দেশ দিয়েছে, এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা কড়া হাতে রক্ষা করতে হবে, কোনও মহিলা-শিশুর হেনস্থার ঘটনা জানতে পারলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।