taliban

Haqqani-Lashkar: আফগানিস্তানে জাল ছড়াচ্ছে হক্কানি, লস্কর-ই-তইবা, রক্তচাপ বাড়ছে নয়াদিল্লির

জঙ্গি সংগঠনগুলির সক্রিয়তার বিষয়টি নিয়ে দু’দিন ধরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে সরব হয়েছেন সে দেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত রুদ্রেন্দ্র টন্ডন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২১ ০৬:৩১
Share:

আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় নয়াদিল্লি। ছবি রয়টার্স ছবি: পিটিআই

কাবুলে জাঁকিয়ে বসছে লস্কর-ই-তইবা এবং পাকিস্তানের হক্কানি নেটওয়ার্ক। এমনটাই খবর দিচ্ছে গোয়েন্দা সূত্র। বিশ বছর বাদে আফগানিস্তানে তালিবান রাজত্ব ফিরে আসার পরে এই অবশ্যম্ভাবী ঘটনা ভারতের রক্তচাপ বাড়াচ্ছে।

Advertisement

গত কালের পরে আজও বসেছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক। সূত্রের খবর, আফগানিস্তানে ওই জঙ্গি সংগঠনগুলির সক্রিয়তার বিষয়টি নিয়ে দু’দিন ধরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে সরব হয়েছেন সে দেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত রুদ্রেন্দ্র টন্ডন। জানা গিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গত কয়েক মাস ধরে সমান্তরাল ভাবে শুরু হয়েছে লস্করের সঙ্গে ফের তালিবান গোষ্ঠীর আদান-প্রদান। পাকিস্তানের হক্কানি নেটওয়ার্কও সক্রিয়তা বাড়িয়েছে সে দেশে। বিষয়টি রাতারাতি ঘটেছে এমন নয়। তবে কাবুলে এই জঙ্গি সংগঠনগুলির মুখ এত দিন সে ভাবে দেখা যায়নি। তা মূলত ছড়িয়ে ছিল হেরাট, জালালাবাদ, কন্দহর, বামিয়ানের মতো অঞ্চলগুলিতে। আশরফ গনি সরকারের পতনের পরে এ বার তারা খোদ কাবুলেই ডেরা তৈরি করছে কারও তোয়াক্কা না করেই।

বিষয়টির সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা সরাসরি ভাবে যুক্ত। পাকিস্তানের মদতপ্রাপ্ত ভারত-বিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলি এ বার সন্ত্রাসের ‘লঞ্চ প্যাড’ হিসাবে আফগানিস্তানের মাটিকে ব্যবহার করবে বলেই মনে করছে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, জম্মু ও কাশ্মীরের উপরে নতুন করে সীমান্তপারের হামলা শুরু হতে পারে মাসখানেকের মধ্যেই।

Advertisement

কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ভারত বছরের পর বছর আফগানিস্তানের মাটিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পরিস্থিতিতে। বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগও হয়েছে সে দেশের সামাজিক এবং সংযোগ প্রকল্পগুলিতে। আমেরিকান সেনার তৈরি করা নিরাপত্তা বলয়ে নয়াদিল্লির কূটনীতিক এবং অন্যান্য মন্ত্রকের কর্তাদের আনাগোনাও ছিল নিয়মিত। অভিযোগ উঠেছে, এই সুযোগকে নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত সরকার। বিগত এক দশকে এমন কোনও গোপন পরিকাঠামো (ডিপ অ্যাসেট) আফগানিস্তানের বুকে তৈরি করা যায়নি, যা ভারতকে আজ সে দেশে রাজনৈতিক এবং রণকৌশলগত সুবিধা দিতে পারে। সাউথ ব্লকে নিয়মিত ভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে— ভারত চায় আফগানদের নেতৃত্বাধীন, আফগান-নিয়ন্ত্রিত শান্তি প্রক্রিয়া। কিন্তু সেই স্লোগানের মোড়কে নিজেদের উপস্থিতিকে অনিবার্য করতে পারেনি ভারত।

আর তাই তালিবানের উত্থানের পরে পাক সন্ত্রাসবাদীদের বাড়বাড়ন্ত হজম করতে হবে নয়াদিল্লিকে। এত দিন ধরে সে দেশে পড়ে থাকার পরেও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ভারতের হাতে এমন কিছু নেই, যা দিয়ে তারা কোনও রকম দর-কষাকষি করতে পারে। ভৌগোলিক কারণে আফগানিস্তান প্রশ্নে পাকিস্তানের হাতে যা রয়েছে, তা ভারতের নেই। অর্থাৎ ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত নেই। আফগানিস্তানের কোনও বড় বা ছোট বাণিজ্যে ভারতের বিনিয়োগ নেই। সে দেশে কোনও সেনাও ছিল না ভারতের। সংশ্লিষ্ট শিবিরের মতে, সব মিলিয়ে ভারতের হাতে রয়েছে পেনসিল!

অথচ আফগানিস্তান প্রশ্নে ভারতের যে সমস্যা, তা অন্য কোনও দেশেরই নেই। আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, ব্রিটেন বা অন্য কোনও দেশের কাছে তালিবান সমস্যা অনেকটাই আদর্শগত— যা মানবাধিকার, নারী-স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতার মতো বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু ভারতের কাছে বিষয়টি সরাসরি দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে সংযুক্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমস্যা কয়েক দশকের পুরনো। এর দীর্ঘদিনের ভুক্তভোগী ভারত তথা কাশ্মীর। কিন্তু তা সত্ত্বেও যখন সুসময় ছিল, তখনও এর কোনও টোটকা তৈরি করে রাখতে পারেনি নয়াদিল্লি। আগামী দিনে তার খেসারত দিতে হতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement