গুরমিত রাম রহিম।
পঞ্জাবে ভোটের মুখে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত ডেরা সচ্চা সৌদা প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংহকে ২১ দিনের জন্য সাময়িক মুক্তি দিলেন হরিয়ানার জেল কর্তৃপক্ষ। মনে করা হচ্ছে, পঞ্জাবে দলিত নেতা চরণজিৎ সিংহ চন্নীকে কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পরেই ডেরা সমর্থকদের কাছে টানতে বিজেপি এই পদক্ষেপ করেছে।
২০০২ সালে নিজের ম্যানেজারকে খুন, এক সাংবাদিককে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত রাম রহিমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। হরিয়ানার রোহতকে জেলবন্দি ছিল সে। তবে কিছু দিন থেকেই দিল্লিতে রাজনীতির অলিন্দে খবর ভেসে বেড়াচ্ছিল, বিতর্কিত এই ধর্মগুরুকে পঞ্জাবের ভোটে ব্যবহার করতে গেরুয়া শিবির তৎপর হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে চন্নীকে নিয়ে কংগ্রেসের ঘোষণার পরই বিষয়টি গতি পেয়েছে।
আজ রাম রহিমের মুক্তির পর হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর অবশ্য দাবি করেছেন, এর সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, জেলে তিন বছর কাটানোর পর যে কোনও বন্দি সাময়িক মুক্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। সেই মতো রাম রহিমের আবেদনের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। বিজেপি-শাসিত রাজ্যের জেলমন্ত্রী রণজিৎ সিংহ চৌতালা বলেছেন, প্রচলিত নিয়ম মেনেই সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে রাম রহিমকে।
হরিয়ানার সিরসায় ডেরা সচ্চা সৌদার মূল আশ্রমটি অবস্থিত। তবে পঞ্জাবের রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত যাঁরা, তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের ১১৭টি আসনের মধ্যে অন্তত ৬৯টিতে ডেরা অনুগামীদের প্রভাব রয়েছে। তাঁরা তাঁদের ধর্মগুরুর নির্দেশে ভোট দেন বলে রাজনৈতিক শিবিরে ধারণা রয়েছে। ২০০২ সালে ডেরা ভক্তরা কংগ্রেসের কাছাকাছি ছিলেন। ২০০৭ সালের ভোটে কংগ্রেসকে খোলাখুলি ভাবে সমর্থনও করেছিলেন ডেরার সমর্থকেরা। ভোটে তার সুফলও পেয়েছে কংগ্রেস। ২০১৭-য় বিজেপি-অকালি জোটকে সমর্থন করে ডেরা। কিন্তু ভোটে তেমন সুবিধা করতে পারেনি এই জোট।
মনে করা হয়, পঞ্জাবের মালওয়া অঞ্চলের ভাটিন্ডা, মুক্তসর, মানসা, পাতিয়ালা, বারনালা, ফরিদকোট, মোগা, ফিরোজ়পুর, লুধিয়ানা, মোহালি জেলাগুলিতে ভোটারদের মধ্যে রাম রহিমের ডেরা সাচ্চা সৌদার বিশেষ প্রভাব রয়েছে। বিজেপি আশা করছে, ২০ ফেব্রুয়ারি পঞ্জাবের ভোটে ডেরার সমর্থন মিললে দলিতদের কাছে টানা সম্ভব হবে। মনে করা হচ্ছে, এই কারণেই আজ রাম রহিমকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
দু’টি খুনে দোষী সাব্যস্ত রাম রহিমের যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজার পাশাপাশি ধর্ষণের দায়ে কুড়ি বছরের জেল হয়েছিল। তবে এর আগেও তিনবার প্যারোলে মুক্তি পেয়েছে সে। অসুস্থ মা-কে দেখতে ও চিকিৎসার কারণে তাকে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জেলের বাইরে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ বার একেবারে তিন সপ্তাহের জন্য জেলের প্রাচীরের বাইরে বেরিয়ে এল বিতর্কিত এই ধর্মগুরু। পঞ্জাবের ভোট শেষ হবার পরে, ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলে ফিরবে সে।