Ahmedabad

Gujrat: ব্রেন টিউমার নিয়েই গুজরাতের দফতর সামলালেন ১৩ বছরের জেলাশাসক ফ্লোরা

গদি আঁটা চেয়ারে কালো শ্যুট আর সাদা শার্ট পরে বসে থাকা ওই কিশোরীর ছবি নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছে আমদাবাদের জেলা প্রশাসন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

আমদাবাদ শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:০৫
Share:

একদিনের জেলা শাসক ফ্লোরা আসোডিয়া। ছবি: টুইটার

একমাথা লম্বা চুল ছিল। সাত মাস আগেও ছবি তুলতে বললে এক গাল হেসে সটান দাঁড়িয়ে পড়ত ক্যামেরার সামনে। এখন সে চেয়ারে ঠিক করে বসতে পারে না। মাথা বেশিক্ষণ সোজা রাখতে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসকেরা সাধের লম্বা চুলও কেটে দিয়েছেন অস্ত্রোপচারের জন্য। তবু অসুস্থতা নিয়েই গুজরাতের জেলাশাসকের দায়িত্ব সামলাল ১৩ বছরের এক কিশোরী। তাকে এক দিনের জন্য জেলাশাসনের দায়িত্ব দিয়েছিল গুজরাত প্রশাসন।

১৩ বছরের ওই কিশোরী ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। কিছু দিন আগে মাথায় অস্ত্রোপচারও হয়েছে। কিন্তু অস্ত্রোপারের পর আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। অবশ্য অসুস্থ হলেও তাকে দেওয়া দায়িত্ব সামলাতে পিছিয়ে আসেনি। শনিবার গুজরাতের আমদাবাদের জেলাশাসকের দায়িত্ব রীতি মেনেই সামলেছে ওই কিশোরী। সারাদিন নিজের দফতর ছেড়ে এক পা-ও কোথাও যায়নি সে।

চামড়ায় মোড়া গদির চেয়ারে কালো শ্যুট আর সাদা শার্ট পরে কিছুটা ক্লান্ত ভাবে বসে থাকা ওই কিশোরীর একটি ছবি নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছে আমদাবাদের জেলা প্রশাসন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কিশোরীর মাথার সামনে অংশের চুল প্রায় নেই। তার চোখে মুখেও অসুস্থতার ছাপ স্পষ্ট।

Advertisement

ছবিটি আমদাবাদের জেলা শাসকের ঘরের। তাঁর আসনেই বসেছে ১৩ বছরের কিশোরী। তার সামনে রাখা একটি অশোকস্তম্ভ। আর একটি পিতলের নেমপ্লেট। যাতে খোদাই করা রয়েছে তার নাম— ফ্লোরা আসোডিয়া। শনিবার ফ্লোরাই আমদাবাদের একদিনের জেলাশাসকের ভূমিকা পালন করেছে।

ক্লাস সেভেনের ছাত্রী ফ্লোরার বরাবরই ইচ্ছে ছিল, বড় হয়ে সে জেলাশাসক হবে। পড়াশোনায় মেধাবী কিশোরী যে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত, তা ধরা পড়ে মাস সাতেক আগে। এরপর চিকিৎসা শুরু হয়। গত মাসে ফ্লোরার মস্তিষ্কে অস্ত্রপচারও করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু তারপর সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে।

ফ্লোরার অসুস্থতা আর তার জেলাশাসক হওয়ার ইচ্ছের কথা আমদাবাদ প্রশাসনের কাছে জানিয়েছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বিষয়টি জেনেই ফ্লোরার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আমদাবাদের জেলাশাসক সন্দীপ সাঙ্গেল। ফ্লোরাকে একদিনের জেলাশাসক করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনিই। যদিও প্রথমে এই প্রস্তাবে রাজি হতে চায়নি তার পরিবার।

Advertisement

সন্দীপকে ফ্লোরার বাবা-মা জানিয়েছিলেন, মেয়ের সুস্থতাই আপাতত তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য। তাকে বাড়ি থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া মানে অতিরিক্ত শারীরিক ধকল। সেই ধকল তাঁরা মেয়ের উপর দিতে চান না। অন্য দিকে, সন্দীপও অসুস্থ কিশোরীর ইচ্ছে অপূর্ণ রাখতে চাননি। ফ্লোরার পরিবারকে শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি করিয়ে ফেলেন।

১৩ বছরের কিশোরী শনিবার সন্দীপের থেকে জেলাশাসকের দায়িত্ব বুঝে নেন। সারাদিন ছোট খাট কাজও করেন। ওই দিনই জেলাশাসকের দফতরে জন্মদিনও পালন করা হয় ফ্লোরার। সন্দীপ বলেছেন, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ফ্লোরার জন্মদিন। সে কথা আমরা জেনেছিলাম। বিশেষ দিনে তাই ফ্লোরার জন্মদিনেরও আগাম উদ্‌যাপন করা হয়েছে।

জন্মদিনের ভিডিয়োয় ফ্লোরাকে আশীর্বাদ করে সন্দীপকে বলতে শোনা যায়, ‘‘দ্রুত সুস্থ হও। স্বপ্নপূরণের জন্য তোমায় অনেক পরিশ্রম করতে হবে।’’ দিনের শেষে আপ্লুত ফ্লোরার বাবা অপূর্ব আসোডিয়াও বলেন, ‘‘যাঁরা আজ আমার মেয়ের স্বপ্নপূরণে অংশগ্রহণ করলেন, যাঁরা ওর ইচ্ছে বাস্তবে পরিণত করতে সাহায্য করলেন, তাঁদের প্রত্যেককে আমার অকুণ্ঠ ধন্যবাদ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement