অগ্নিদগ্ধ সেই গাড়ি। ছবি: সংগৃহীত।
কবর থেকে দেহ চুরি করেছিলেন। সেই দেহ নিজের গাড়ির চালকের আসনে বসান। তার পর আগুন ধরিয়ে দেন। রাস্তার মাঝে অগ্নিদগ্ধ গাড়ি এবং সেটির ভিতরে ঝলসানো দেহ উদ্ধার হওয়ায় হুলস্থুল পড়ে যায় গুজরাতের বনাসকান্থা জেলার ওয়াডগাম গ্রামে। পুলিশ এসে দেহ এবং গাড়িটি উদ্ধার করে। জানা যায়, গাড়িটি ব্যবসায়ী দলপত সিংহ পারমারের। তাঁর পরিবারকেও ডাকা হয় ঘটনাস্থলে। গাড়ি দেখে তাঁরাও দাবি করেন, দেহটি দলপতেরই।
এ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু তদন্তকারীদের একটু খটকা লাগে। ঝলসে যাওয়া দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হয়। দলপতের পরিবারের সদস্যদেরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই ঝলসে যাওয়া ব্যক্তির সঙ্গে দলপতের পরিবারের সদস্যদের নমুনা না-মেলায় একটা সন্দেহ তৈরি হয়। ওই দেহ তা হলে কার? তা খুঁজে বার করা পুলিশের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
তদন্তকারী এক আধিকারিক জানিয়েছেন, যে জায়গা থেকে পুড়ে যাওয়া গাড়ি এবং দেহ উদ্ধার হয়েছে, তার আশপাশে কোনও সিসিটিভি আছে কি না তা দেখা হয়। একটি সিসিটিভি ক্যামেরা নজরে আসে তাঁদের। সেই ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান তদন্তকারীরা। তাঁরা দেখেন, কবর থেকে এক ব্যক্তির দেহ চুরি করছেন কয়েক জন। তার পর সেটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর এখান থেকেই তদন্ত মোড় নেয়। পুলিশের সন্দেহ, ওই দেহটিই দলপতের গাড়িতে বসিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দলপত-সহ চার জনকে চিহ্নিত করে পুলিশ। তল্লাশি চালিয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করে তারা। তাঁদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, মৃতদেহ চুরি এবং গাড়িতে বসিয়ে তা জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা দিয়েছিলেন দলপত। কিন্তু কেন তিনি এ কাজ করলেন, তখনও স্পষ্ট হয়নি পুলিশের কাছে।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, বাজারে কয়েক কোটি টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল দলপতের। দেড় কোটি টাকার জীবন বিমা ছিল তাঁর নামে। কিন্তু সেই টাকা কী ভাবে হাতাবেন তার উপায় খুঁজছিলেন। তার পর নিজের গাড়িতে কবর থেকে চুরি করা দেহ জ্বালিয়ে দিয়ে নিজেকে মৃত বলে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। পরিবারের কাছে বিমার টাকা পৌঁছনোর অপেক্ষা করছিলেন। সেই টাকা দিয়ে দেনা মেটানোর ছক ছিল। কিন্তু তার আগেই সব ভেস্তে যায়। পুলিশ জানিয়েছেন, গাড়ি থেকে যে ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়েছে চার মাস আগে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর।