গুজরাত হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
পুলিশ কমিশনার এবং জেলাশাসকরা নিজেদের রাজা ভাবেন। কেউ কেউ নিজেদের দেবতা মনে করেন। একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে এমনই মন্তব্য করল গুজরাত হাই কোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, সাধারণ মানুষকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেন না বেশির ভাগ জেলাশাসক এবং পুলিশ কমিশনার। তাঁদের কাছে সরাসরি কোনও সাধারণ মানুষ অভিযোগ জানাতে পারেন না। গেলে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক বা পুলিশ কমিশনারের অফিসের বাইরে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়। তার পরেও সাক্ষাৎ হয় কি না, সন্দেহ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গুজরাত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে প্রধান বিচারপতি সুনীতা আগরওয়াল এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ মায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
সম্প্রতি রাতের বেলা বেড়াতে বেরোনোয় এক যুগলকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওই যুগলের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা আদায় করেছে পুলিশ। এ নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলায় গুজরাত সরকারের তৈরি করা বিশেষ পুলিশ সেল নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত। বলা হয়, ওই সেলে তো কোনও পুলিশ অফিসার বা পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো যেত। তার অবস্থা কী? শুক্রবার এ নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও মন্তব্য করে গুজরাত হাই কোর্ট। প্রধান বিচারপতি আগরওয়াল জানান, অনেক পুলিশ কমিশনার এবং জেলাশাসক আছেন, যাঁদের সঙ্গে দেখা করাই দায়। কোনও সাধারণ নাগরিক সরাসরি থানায় গিয়ে অভিযোগ জানানোর কথা দু’বার ভাবেন। জেলাশাসকদের কাছে তো অভিযোগই জানানো যায় না। জেলাশাসক এবং পুলিশ কমিশনারদের ব্যবহারই এমন যে, তাঁরা যেন কোনও রাজা বা দেবতা। বিচারপতির কথায়, ‘‘আপনার অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না কেউ? কে বা তাঁদের ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেবেন? আপনার (সরকার) জেলাশাসক এবং কমিশনাররা তো ভাবেন যে তাঁরা ভগবান। তাঁদের ব্যবহারও ভগবান বা রাজার মতো।’’
সংশ্লিষ্ট মামলার প্রেক্ষিতে গুজরাত সরকারকে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর সেল সক্রিয় করার পরামর্শ দিয়েছে হাই কোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এমন একটা ব্যবস্থা করা উচিত, যেখানে সবাই নিজেদের মতামত জানাতে পারেন। অভিযোগ করতে পারেন। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘বাস্তব পরিস্থিতিটা সবাই জানেন। এক জন সাধারণ নাগরিক ভাবতেই পারেন না যে, তাঁরা হেঁটে গিয়ে সোজা পুলিশ কমিশনার বা জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। আমরা বিচারপতিরাও একটা সময় আর পাঁচজনের মতো সাধারণ ছিলাম। পুলিশ এবং প্রশাসনের এই দিক সম্পর্কে আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে।’’
ওই মামলার শুনানিতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার বা কর্মীদের ভর্ৎসনা করে আদালত বলে, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ জানাতে হলে কার কাছে যাবেন, কার সঙ্গে দেখা করতে হবে বা কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, সেটা সরকারেরই ঠিক ভাবে বলে দেওয়া উচিত।’’