দীর্ঘ দিন ধরে সারাইয়ের পর চার দিন আগে গুজরাতি নববর্ষের দিন খুলে দেওয়া হয়েছিল গুজরাতের মোরবী শহরের ঝুলন্ত সেতুটি। তার পরেই ঘটে গেল এত বড় বিপর্যয়! এখনও পর্যন্ত ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। নিখোঁজও বহু।
দরবারগড় রাজবাড়ি ও নজরবাগ রাজবাড়িকে জুড়তেই আমদাবাদ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে মাচ্ছু নদীর উপর সেতুটি তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। প্রায় ১৪০ বছর আগে।
মোরবীর দেশীয় রাজারা সেতুটি বানিয়েছিলেন। উনিশ শতকে মোরবির শাসক ওয়াঘজি রাজাজি ঠাকোর সেতুটি নির্মাণ করেন। শোনা যায়, সেতু তৈরি করতে ইংল্যান্ড থেকে জিনিসপত্র আনিয়েছিলেন ওয়াঘজি।
১৮৭৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সেতু উদ্বোধন করেন তৎকালীন বম্বে প্রেসিডেন্সির গভর্নর রিচার্ড টেম্পল। সেই সময় সেতুটি তৈরি করতে খরচ পড়েছিল প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। স্বাধীনতার পর এই সেতু গুজরাতের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসাবে নজর কাড়ে।
এই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে জয়সুখজি উদ্ধবজি পটেলের মালিকানাধীন ওরেভা গ্রুপ। সেতু সারাইয়ের কাজ নিয়ে ওই গোষ্ঠীর অন্তর্গত সংস্থা অজন্তা ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে মোরবী পুরসভার চুক্তি হয়।
সারাইয়ের জন্য গত মার্চ মাস থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেতুটি। স্থির হয়, অন্তত আট থেকে ১২ মাস সেতুটি বন্ধ রাখা হবে। তার পরেও কেন সাত মাসের মাথায় জনসাধারণের জন্য সেটি খুলে দেওয়া হল, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রশ্ন উঠছে, মেরামতির কাজ শেষ হয়েছে না হয়নি, তা ভাল করে খতিয়ে না দেখে পুরসভার ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ ছাড়াই কেন সেতুটি গত ২৬ অক্টোবর খুলে দেওয়া হল?
গুজরাতে সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। বিরোধীদের প্রশ্ন, ভোটের দিকে নজর রেখেই কি তাড়াহুড়ো করে সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছে? মেরামতিতেও গলদ ছিল কি না, সেই প্রশ্নও উঠে স্বাভাবিক ভাবেই।
ওরেভার অজন্তা সংস্থাই ১৫ বছরের জন্য সারাই এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে। ২০২০ সাল থেকে লাগাতার আলোচনার পর চলতি বছরের মার্চেই সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
স্থির হয়, ২০৩৭ সাল পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ দেখাশোনার পাশাপাশি সেতু দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য টিকিটের দাম ঠিক করার দায়িত্ব ওই সংস্থারই। রবিবার যাঁরা সেতুতে জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদেরও ১৭ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হয়েছিল বলে খবর পুরসভা সূত্রে।
পুরসভা সূত্রেই খবর, মেরেকেটে ১২৫ জনের ভার বহনের ক্ষমতা ছিল গুজরাতের মোরবীর ঝুলন্ত সেতুটি। তা সত্ত্বেও কেন ৪৫০-৫০০ জন মানুষ ওই পায়ে হাঁটার সেতুতে উঠে পড়েছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
স্থানীয়দের দাবি, টিকিট বিক্রি করা হলেও, ভিড় নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থাই করেনি স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সারাইয়ের দায়িত্বে থাকা ওই বেসরকারি সংস্থাটি।
দুর্ঘটনার পর প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, মানুষজন ভিড় করায় বিপজ্জনক ভাবে দুলছিল সেতুটি।
ভোটের আগে এই ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই মুখ পুড়েছে গুজরাত সরকারের। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী ব্রিজেশ মেরজা তাই কোনও তরজায় না গিয়ে বলেছেন, ‘‘সরকার এই দুর্ঘটনার দায় নিচ্ছে।’’
তদন্ত কমিটি গড়ার কথাও বলেছে গুজরাত সরকার। পুরসভার তত্ত্বাবধানে থাকা এই সেতুর মেরামতি সরকারি দরপত্র ডেকেই করানো হয়েছে। পাঁচ দিনের মাথায় তা ভেঙে পড়ায় মেরামতির গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।