মাচ্ছু নদীর উপর ভেঙে পড়া সেতু। ছবি: রয়টার্স।
ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না। ভোট মাথায় রেখে দীপাবলিকে উপলক্ষ দেখিয়ে সাততাড়াতাড়ি মোরবী শহরের মাচ্ছু নদীর উপরে সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছিল জনসাধারণের জন্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে সেতু ভেঙে ১৪১ জনের মৃত্যুর পরে প্রশ্ন উঠছে, দোষ কার? বিজেপি সমর্থকেরা বলছেন, দায়ী সাধারণ মানুষই। তাঁদের বক্তব্য, লোকজন ক্রমাগত ঝুলন্ত সেতুটি ঝাঁকানোর চেষ্টা করেছেন। তাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেতু। এর ভিডিয়োও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে অবশ্য জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো পুরনো।
আমদাবাদের এক পরিবার রবিবার দুপুরে ওই সাসপেনশন ব্রিজটি দেখতে গিয়েছিল। তারা জানিয়েছে, কিছু যুবক ঝুলন্ত সেতুটি ঝাঁকানোর চেষ্টা করছিল। তাদের আশঙ্কা, এর জন্য সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। সেতু এতই দুলছিল যে পরিবারটি ভয় পেয়ে যায়। তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা রক্ষীদের অভিযোগও করেছিল। কিন্তু তাঁরা তেমন গুরুত্ব দেননি। আমদাবাদের বাসিন্দা বিজয় গোস্বামী তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে মোরবী শহরে গিয়েছিলেন। গত কাল দুপুর ৩টে নাগাদতিনি ওই সেতু দেখতে যান। বিজয় জানিয়েছেন, সে সময়ে সেতুর উপরে দেড়শো থেকে দু’শো মানুষ ছিলেন। তিনি যখন সেতুর উপর দিয়ে হেঁটে ফিরে আসছিলেন, একদল যুবক জোরে জোরে সেতুটি দোলানোর চেষ্টা করছিল। তাতে সেতু দুলছিল। অনেকেই তাতে ভয়ে কিছু ধরে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। বিজয় এ-ও জানান, নিরাপত্তা রক্ষীদের কাছে অভিযোগ করে কোনও লাভ হয়নি। তিনি ৪টে নাগাদ মোরবী ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। রাতে আমদাবাদের বাড়িতে ফিরে দুর্ঘটনার খবর পান।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কিছু লোকের এমন প্রচেষ্টায় যদি সেতু ভেঙে পড়তে পারে, তা হলে সেটি যথেষ্ট মজবুত ছিল না। সরকারের নজর কী ভাবে তা এড়িয়ে গেল! এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘দীপাবলির ছুটিতে অনেক মানুষ মোরবী এসেছিলেন। এটি পর্যটকদের জন্য ভাল জায়গা। ওই দুর্ঘটনার সময়ে সেতুর উপরে অনেক মানুষ উঠেছিলেন। হয়তো ওই ভিড়ের চাপেই সেতু ভেঙে পড়েছে।’’ এখানেও প্রশ্ন, এক সঙ্গে কী করে অত মানুষ সেতুর উপরে উঠেছিলেন। সন্দেহ করা হচ্ছে, ঘটনার সময়ে অন্তত চার-পাঁচশো মানুষ সেতুতে ছিলেন।
শাসক দলের সমর্থকেরা প্রশাসনের ভুলচুক না দেখলেও বেশ কিছু বিষয় সামনে এসেছে, যা কি না দুর্ঘটনার কারণ হতেই পারে। এক, ২৩০ মিটার লম্বা ঝুলন্ত সেতুটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা হয়েছিল। ১৮৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেতুর উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুম্বইয়ের গভর্নর রিচার্ড টেম্পল। সেতুর এত বয়স তার দুর্বল হয়ে পড়ার কারণ হতে পারে। যা উপেক্ষা করেছে প্রশাসন। দুই, রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য ছ’মাস বন্ধ ছিল সেতুটি। গত ২৬ অক্টোবর খোলে। হয়তো মেরামতির কাজ ঠিকমতো হয়নি। তিন, সেতুটির ফিটনেস সার্টিফিকেট না থাকা সত্ত্বেও সেটি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। কেন? তার জবাব নেই। আপাতত জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।