Manipur Violence

‘মণিপুর নিয়ে আলোচনায় সহযোগিতা করুন’, অধীর, খড়্গেকে শাহের চিঠি! তবে নেই মোদী-বিবৃতি প্রসঙ্গ

বাদল অধিবেশনের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলেছিল, মণিপুরকাণ্ডে চাপের মুখে প্রতিআক্রমণের পথে হাঁটবে বিজেপি। কিন্তু সোমবার থেকে শাহের গলায় শোনা গিয়েছে সমঝোতার সুর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৩ ১৯:৩৯
Share:

(বাঁ দিক থেকে) অমিত শাহ, অধীর চৌধুরী এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মণিপুরের হিংসা নিয়ে সংসদে আলোচনার জন্য বিরোধীদের সহযোগিতা চাইলেন অমিত শাহ। মঙ্গলবার রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং লোকসভার বৃহত্তম বিরোধী দল কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীকে চিঠি পাঠিয়ে সংসদ চালাতে সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ। টুইটারে সে কথা জানিয়ে শাহ লিখেছেন, ‘‘আমি আজ সংসদের উভয় কক্ষের বিরোধী নেতা শ্রী অধীরজি এবং শ্রী খড়্গেজিকে মণিপুরের ঘটনা নিয়ে আলোচনার জন্য সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সরকার মণিপুর নিয়ে আলোচনায় সব পক্ষের সাহায্য চায়। আমার আশা, এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানের জন্য সব পক্ষ আমাদের সহযোগিতা করবে।’’

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শাহ তাঁর চিঠিতে অধীরকে ‘বিরোধী নেতা’ বলে সম্বোধন করলেও নরেন্দ্র মোদী সরকার লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতাকে ‘বিরোধী নেতা’র মর্যাদা দেয়নি। এ ক্ষেত্রে বার বারই সরকারের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, ‘‘বৃহত্তম বিরোধী দল কংগ্রেসের কাছে লোকসভার বিরোধী দলনেতার পদ পাওয়ায় জন্য প্রয়োজনীয় ১০ শতাংশ সাংসদ নেই।’’ এই পরিস্থিতিতে শাহের সম্বোধন ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। কারণ মঙ্গলবার সকালেই মোদী বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’-কে নিষিদ্ধ দুই কট্টরপন্থী গোষ্ঠী ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ এবং ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’-র সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’র তুলনা টানেন। সেই সঙ্গে তোলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’র প্রসঙ্গও। তিনটি ক্ষেত্রেই ‘ইন্ডিয়া’ নাম রয়েছে বলে জানিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, মণিপুরকাণ্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতির দাবিতে সংসদের বাদল অধিবেশনে ধারাবাহিক বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিরোধী সাংসদেরা। ফলে গত পাঁচ দিন ধরে দফায় দফায় মুলতুবি হয়েছে লোকসভা এবং রাজ্যসভা। এই আবহে শাহের চিঠিকে ‘চাপের মুখে সমঝোতার বার্তা’ বলে মনে করা হচ্ছে। সোমবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ বলেছিলেন, ‘‘মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে সরকারের কোনও আপত্তি নেই।’’ যদিও সেই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী মোদী অংশ নেবেন কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। কোন ধারায় সেই আলোচনা হবে, সে বিষয়েও সুস্পষ্ট ভাবে কিছু জানাননি তিনি। এই পরিস্থিতিতে মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিবৃতির দাবিতে অনড় ‘ইন্ডিয়া’ জোট শাহের প্রস্তাব মানতে রাজি হয়নি।

Advertisement

মণিপুরে গত পৌনে তিন মাসের হিংসাপর্ব এবং দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ভিডিয়ো (যার সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) এবং গণধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে মঙ্গলবারও লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সরব হন বিরোধী সাংসদেরা। ২৬৭ ধারায় লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সব কর্মসূচি বন্ধ রেখে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ‘ঘটনা’-সহ মণিপুরের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ভোটাভুটি-সহ আলোচনার দাবিতে শুক্রবার নোটিস দিয়েছিল কংগ্রেস-সহ কয়েকটি বিরোধী দল। কিন্তু তাতে এখনও রাজি হয়নি মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী ২৬৭ ধারার পরিবর্তে ১৭৬ ধারায় আলোচনা চেয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধীরা তাদের দাবিতে অনড়।

এই পরিস্থিতিতে শাহ সোমবার বলেছিলেন, ‘‘আমরা সভায় এই বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আমি বিরোধীদের অনুরোধ করছি এই বিষয়ে আলোচনা করতে দিন। এই স্পর্শকাতর বিষয়ে দেশ যাতে সত্য জানতে পারে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ সেই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমি জানি না, কেন এমন সংবেদনশীল বিষয়ে আপনারা (বিরোধী পক্ষ) আলোচনা হতে দিতে চান না।’’ শাহি প্রস্তাব খারিজ করার কথা ঘোষণা করে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ সোমবার রাতে বলেন, ‘‘খবরের শিরোনামে থাকতেই এখন উনি এ সব করছেন।’’ ফলে সরকারপক্ষ অবস্থান না বদলালে শুধুমাত্র শাহের চিঠিতে সংসদের অচলাবস্থা কাটার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে ‘ইন্ডিয়া’ শিবিরের একটি সূত্র জানাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement