বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে কটাক্ষ নরেন্দ্র মোদীর (বাঁ দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে আক্রমণ করতে গিয়ে এ বার নিষিদ্ধ জঙ্গি দল ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের প্রসঙ্গ টানলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই সঙ্গে তুলনা করলেন ব্রিটিশদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গেও। বললেন, ‘‘ইন্ডিয়া নাম নিলেই কিছু হয় না।’’
মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের লাগাতার বিক্ষোভে অচল সংসদের বাদল অধিবেশন। প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে সরব ‘ইন্ডিয়া’। এই নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে বিরোধী জোট। এমন আবহে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে বিজেপির সংসদীয় দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকেই বিরোধী জোটকে কটাক্ষ করেন মোদী। সংসদীয় দলের বৈঠকে মোদী বলেন, ‘‘ইন্ডিয়া নাম নিলেই কিছু হয় না। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতেও ‘ইন্ডিয়া’ শব্দ ছিল। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সঙ্গেও ‘ইন্ডিয়া’র নাম রয়েছে।’’ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে রাজ্যসভায় পাল্টা বলেছেন, ‘‘মণিপুর নিয়ে আমরা আলোচনা চাইছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়ে কথা বলছেন।’’
বৈঠক শেষে বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গর্বিত। ২০২৪ সালে আমরাই ক্ষমতায় ফিরছি। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন যে, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৈরি করেছেন বিদেশি। এখন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, ইন্ডিয়ান পিপলস ফ্রন্টের মতো নামকরণ করছে লোকেরা। উপর উপর কোনও কিছুকে দেখা এবং ভেতরে ঢুকে তার সত্য অর্থ বোঝা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।’’ বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বলেছেন, ‘‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস তৈরি করেছেন এও হিউম, তিনি এক জন বিদেশি নাগরিক। মুজাহিদিনরা নিজেদেরকে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন বলে উল্লেখ করে। পিএফআই-এর পুরো নাম পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া। যে কোনও কিছুর সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দ জুড়ে দেওয়া একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওরা (বিরোধী) শহুরে নকশাল। নিজেদের বৈধ করতে ইন্ডিয়া শব্দ জুড়ছে।’’
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদী বাহিনীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে একজোট হয়েছে বিজেপি বিরোধী দলগুলি। বেঙ্গালুরুতে বিরোধীদের বৈঠকে জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়ান্স) ঠিক করা হয়েছে। বিরোধীদের জোট নিয়ে আগেও আক্রমণ শানিয়েছিলেন মোদী। সে বার তিনি বলেছিলেন, ‘‘নব্বইয়ের দশক থেকেই দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে রাজনৈতিক জোটকে ব্যবহার করেছে কংগ্রেস। কখনও সরকার বানিয়েছে, কখনও ফেলেছে।’’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘নেতিবাচক কর্মসূচির উপর গড়ে ওঠা কোনও জোট সফল হতে পারে না। ওটা তো দুর্নীতি এবং পরিবারতন্ত্রের জোট। কেউ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হলেই বিরোধী জোটে প্রবেশাধিকার পেয়ে যান।’’
‘ইন্ডিয়া’ নামকরণ নিয়ে কৌশলে মোদী সরকারকে ‘চাপে’ ফেলেছেন বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে বার বার শোনা যায় ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগান। এ বার সেই ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটিই বিজেপি বিরোধী জোটের নামের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে। এর ফলে পদ্মশিবিরের অস্বস্তি বেড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ‘ইন্ডিয়া’র বিরুদ্ধে কী ভাবে লড়বে মোদী বাহিনী— এমনই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী জোটের নাম নিয়ে মঙ্গলবার সংসদীয় বৈঠকে যে ভাবে কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রী, তা এই পর্বে নতুন মাত্রা যোগ করল।