ফাইল চিত্র।
চলতি অর্থ বছরে মোদী সরকারের ১০০ টাকা আয় হলে তার মধ্যে প্রায় ৩৯ টাকাই পুরনো ঋণের সুদ মেটাতে খরচ হচ্ছে। আগামী অর্থ বছরে ১০০ টাকা আয়ের মধ্যে ৪২.৬৪ টাকাই ঋণের উপরে সুদ মেটাতে খরচ হয়ে যাবে।
গত বছর আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ) বলেছিল, ভারতে জিডিপি-র তুলনায় মোট ঋণের হার কোভিডের সময়ে ৭৪ থেকে ৯০ শতাংশে চলে যাবে। কিন্তু অর্থনীতি চাঙ্গা হলে তা ফের ৮০ শতাংশে নেমে আসবে বলেও আইএমএফ-এর আশা ছিল। সেই আশঙ্কাই সত্যি করে আজ আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা ফিচ রেটিংস জানিয়েছে, আগামী অর্থ বছরে দেশের জিডিপি-র তুলনায় মোট ঋণের বোঝার হার ৯০ শতাংশের থেকে সামান্য কম হবে।
কোভিডের প্রথম বছর, ২০২০-২১-এ জিডিপি-র তুলনায় ঋণের অনুপাত ছিল ৮৭.৮ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরে তা সামান্য কমলেও ৮৭.৪ শতাংশে থাকছে। কিন্তু অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পরিকাঠামোয় বেশি খরচ করতে হবে বলে এ বারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রাজকোষ ঘাটতিতে খুব বেশি রাশ টানার চেষ্টা করেননি। ৬.৪ শতাংশের বিপুল রাজকোষ ঘাটতি পূরণ করতে বাজার থেকে প্রায় ১১.১৯ লক্ষ কোটি টাকা নতুন করে ঋণ নিতে হবে অর্থমন্ত্রীকে। স্বল্প সঞ্চয় তহবিলের ৫.৬৭ লক্ষ কোটি টাকাও কাজে লাগানো হবে। কিন্তু এর ফলে সামগ্রিক ভাবে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। সুদ মেটাতে খরচও বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বাম জমানার শেষে পশ্চিমবঙ্গের ঘাড়ে যে বিপুল পরিমাণ ঋণ ও সুদের বোঝা চেপেছিল, এখন মোদী সরকারেরও সেই অবস্থা। সুদ মেটাতেই রাজস্ব আয়ের বড় অংশ খরচ হয়ে যাচ্ছে। ফলে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য পরিকাঠামোয় খরচের অর্থ সংস্থান করতে আবার বাজার থেকে ধার করতে হচ্ছে।
কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার মূলত বন্ড ছেড়ে ঋণ সংগ্রহ করে। সরকারকে বেশি ঋণ নিতে হলে সুদও বেশি হারে দিতে হয়। বাজেটে বিপুল পরিমাণে ঋণ নেওয়া হবে বলে ঘোষণার পরেই তাই বন্ডে সুদের হার বেড়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, পুরনো ধার শোধ করতে যেহেতু অনেক ঋণ নিতে হচ্ছে, তাই সুদের উপরে খরচও বাড়বে। ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত সরকারি ঋণপত্রে সুদের গড় হার ছিল ৬.২২ শতাংশ। গত বছরের এই সময় ওই সুদের হার ৫.৭৯ শতাংশ ছিল।
শুধু সুদ নয়। আগামী কয়েক বছরে ঋণের আসলেরও অনেকখানি শোধ করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। আর্থিক বিশ্লেষক সংস্থা ক্রিসিল-এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ ডি কে জোশীর বক্তব্য, বাজেটের সঙ্গে ‘ফিস্কাল রেসপন্সিবিলিটি বাজেট ম্যানেজমেন্ট’ বিবৃতি পেশ হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারকে আগামী পাঁচ অর্থ বছরে পুরনো ঋণের ৩০ শতাংশের বেশি শোধ করতে হবে। রাজকোষ ঘাটতি সামান্য কমলেও ঋণ-জিডিপি অনুপাত কিন্তু বাড়ছে।
আজ ফিচ রেটিংস সংস্থা সরকারকে এই বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা কমানোর দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ফিচ-এর মূল্যায়নে ভারত যে সব উঠতি অর্থনীতির দেশগুলির সঙ্গে এক সারিতে রয়েছে, তাদের মধ্যে ভারতের ঋণ-জিডিপি অনুপাত সবথেকে বেশি। ফলে সরকারের হাতে খরচের অর্থ সীমিত। এই ঋণের বোঝা না কমালে ভারতের সম্পর্কে নেতিবাচক মূল্যায়ন থেকে সরে আসাও কঠিন হবে বলে ফিচ-এর বক্তব্য।