কড়া তল্লাশি চলছে উপত্যকায়। ফাইল চিত্র।
সরকার দিয়েছে সুরক্ষার আশ্বাস। ফারুক আবদুল্লার মতো প্রবীণ নেতারা আর্জি জানিয়েছেন, ১৯৯০-এর দশকের মতো উপত্যকা ছেড়ে না যেতে। কিন্তু জঙ্গিরা বেছে বেছে উপত্যকায় সংখ্যালঘুদের নিশানা করার পরেই জম্মুর দিকে রওনা দিয়েছেন সংখ্যালঘুদের বড় অংশ।
সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে গোটা উপত্যকায় ৯০০ জনেরও বেশি সন্দেহভাজনকে আটক করেছে বাহিনী। তার মধ্যে পাথর ছোড়া ও অন্য সমাজ-বিরোধী কাজে যুক্ত ব্যক্তিরা রয়েছে বলে দাবি পুলিশের। এদের জেরা করে খুনিদের সম্পর্কে সূত্র পাওয়ার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বুরোর এক কর্তাকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে সমন্বয়ের জন্য কাশ্মীরে পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি কাশ্মীরে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে গুলি করে খুন করা হয়। তার পরে খুন হন একটি স্কুলের শিখ প্রিন্সিপাল ও হিন্দু শিক্ষক। তার পরেই শ্রীনগরের সরকারি আবাসন থেকে জম্মুর দিকে রওনা দিয়েছেন অনেক সরকারি কর্মী ও শিক্ষক। সুরক্ষার আশ্বাস দিয়ে ওই আবাসনে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করেছিল সরকার। কিন্তু সেখানে সিআরপি-র প্রহরা থাকলেও নিরাপত্তায় বিশেষ আস্থা নেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওই সদস্যদের।
শুক্রবার ভোরে শ্রীনগর থেকে মোটরবাইকে জম্মু এসেছেন শিক্ষা দফতরের আধিকারিক সুশীল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কাশ্মীরে রাস্তায় চলতে চলতে প্রত্যেকের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাতে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যে কেউ আমাদের গুলি করবে।’’
১৯৯০-এর দশকে হিন্দু পণ্ডিতদের হত্যাকাণ্ডের পরে সিদ্ধান্ত রায়নার (নাম পরিবর্তিত) পরিবার যখন শ্রীনগর ছেড়ে জম্মুতে চলে যায় তখন তাঁর বয়স মাত্র দুই। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী যোজনার অধীনে শিক্ষা দফতরের চাকরি নিয়ে তিনি ফের কাশ্মীরে আসেন। অনন্তনাগে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘শুক্রবার গোটা রাত আমি ঘুমোতে পারিনি। শনিবার সকালে জম্মুতে চলে এসেছি। শান্তির কথা বলা হয়েছে। সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি। শিক্ষকদের কাছে গিয়ে তাঁদের পরিচয়পত্র দেখে তার পরে খুন করা হয়েছে। তা হলে আমাদের মতো হিন্দু পণ্ডিত সম্প্রদায়ের কর্মচারীদের সুরক্ষার কী ব্যবস্থা করা হয়েছে?’’
সুশীল জানাচ্ছেন, তাঁর মুসলিম সহকর্মীরা তাঁকে সাহায্য করেছেন। কিন্তু নিরাপত্তার আশ্বাস সরকারকেই দিতে হবে। সংখ্যালঘুদের একাংশ এ ভাবে উপত্যকা ছাড়ায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘নয়া কাশ্মীর’-এর দাবি অনেকটাই ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতিকেরা। আজ নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এআইসিসি-তে জম্মু-কাশ্মীরের দায়িত্বে থাকা রজনী পাটিল। তিনি বলেন, ‘‘উপত্যকা যাতে ১৯৯০-এর পথে না হাঁটে সে জন্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত।’’
জম্মু-কাশ্মীর সরকার অবশ্য প্রধানমন্ত্রী যোজনার অধীনে উপত্যকায় নিযুক্ত কর্মীদের একাংশের জম্মুতে ফিরে যাওয়ার কথা মানতে নারাজ। তাদের দাবি, ওই কর্মীদের নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংবাদ সংস্থা