কেদারনাথ মন্দির। —ফাইল চিত্র।
সোনা নাকি শুধুই পিতল? মন্দিরের গর্ভগৃহের দেওয়ালে চকচক করছে যে ধাতুটি, সেটি আসলে কী? এই বিতর্ক নিয়েই আপাতত উত্তাল হিন্দুদের অন্যতম তীর্থস্থান কেদারনাথের মন্দির।
উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের উপর মন্দাকিনী নদীর তীরে স্থাপিত শিবমন্দিরটি তীর্থযাত্রীদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র। তীব্র শীতের জন্য প্রতি বছর দীপাবলি থেকে অক্ষয় তৃতীয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকে মন্দিরটি। বছরের বাকি সময়ে সেখানে ভিড় করেন পুণ্যার্থীরা। সেই মন্দিরের গর্ভগৃহের দেওয়াল মুড়ে ফেলা হয়েছে সোনার চাদরে। আর বিবাদ সেখানেই। প্রশ্ন উঠেছে, এ সব কি সত্যিই সোনার নাকি নিছকই পিতলের?
চারধাম মহাপঞ্চায়েতের সহ-সভাপতি ও কেদারনাথের বর্ষীয়ান তীর্থপুরোহিত আচার্য সন্তোষ ত্রিবেদী অভিযোগ করেছেন, কেদারনাথের গর্ভগৃহে লাগানো সোনা বদলে গিয়েছে পিতলে! তাঁর আরও অভিযোগ, গোটা বিষয়টিতে অন্তত সোয়াশো কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এই নিয়ে একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে সামনে এসেছে। ত্রিবেদী সেখানে গর্ভগৃহের সোনার পাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই বিষয়ে মন্দির কমিটি ও আধিকারিকদের নিশানা করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, বদ্রীনাথ-কেদারনাথ মন্দির সমিতি বা বিকেটিসি কিংবা প্রশাসন— এই কাজ যারা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। ত্রিবেদী জানিয়েছেন, এক সময় মন্দিরের গর্ভগৃহে সোনা লাগানোর বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। ত্রিবেদীর দাবি, রাতে ভগবান শয়ানে গিয়েছেন, সেই সময় চুরি করে গর্ভগৃহে সোনা লাগানো হয়। এর ফলে মন্দিরের ঐতিহ্যে আঘাত করা হয়েছে। সোনা লাগানোর আগে পরীক্ষা করে নেওয়া হয়নি কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ত্রিবেদী। তিনি জানান, এর পরেও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত না হলে আন্দোলনে নামবেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যমেও অনেকে সরব হয়েছেন। অভিযোগ, এর আগেও উত্তরাখণ্ডের একাধিক মন্দিরে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু রাজ্য বা কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তা ধামাচাপা দিতে চেয়েছে।
এই গুরুতর অভিযোগের মধ্যে বদ্রীনাথ কেদারনাথ মন্দির কমিটির কর্তা আর সি তিওয়ারি মাঠে নেমেছেন। তীর্থপুরোহিত সন্তোষ ত্রিবেদীর অভিযোগ খণ্ডন করেছেন তিনি। জানান, কেদারনাথ মন্দিরের গর্ভগৃহকে সোনার চাদরে মুড়ে দেওয়ার কাজ গত বছর এক দানী ভক্তের সহযোগিতায় করা হয়েছিল। তিওয়ারির দাবি, ভুল তথ্য সামনে এনে ভক্তদের মনে আঘাত করার চেষ্টা হচ্ছে। বিকেটিসি জানিয়েছে, কেদারনাথের গর্ভগৃহে ২৩,৭৭৭.৮০০ গ্রাম সোনা লাগানো হয়েছিল। যার বর্তমান মূল্য ১৪ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। আর এই কাজে জুড়ে থাকা তামার প্লেটের ওজন প্রায় এক হাজার কিলোগ্রাম। যার দাম ২৯ লক্ষ টাকা। তিনি জানান, ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য উপযুক্ত নিয়মানুসারে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।