লাঙল টানছে দু’বোন। ফাইল চিত্র
বলদ ভাড়া করার পয়সা জোটেনি। তাই শক্ত হাতে জোয়াল ধরে খেতের উপর দিয়ে এগিয়ে চলেছে দুই মেয়ে। লাঙল ধরে আছেন বাবা। আর মা বীজ ছড়িয়ে দিচ্ছেন জমিতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সোনু সুদ। এ বার ওই দুই মেয়ের পড়াশোনার সব দায়িত্ব নিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু।
ভিডিয়োটি অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তোর জেলার। এই জেলারই রাজুভারিপল্লি থাকেন নাগেশ্বর রাও। দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার। ছোট্ট একটা চায়ের দোকান রয়েছে নাগেশ্বরের। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে চায়ের দোকান বন্ধ করে দিতে হয়েছে তাঁকে। যত্সামান্য যে জমি রয়েছে তাঁর গ্রামে ফিরে সেই খেতেই কাজ শুরু করেন। আর্থিক অনটনের জেরে বলদ ভাড়া করার সুযোগ জোটেনি। তাই দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়েই নেমে পড়েছিলেন চাষের কাজে। বলদের জায়গায় দুই মেয়ে জোয়াল তুলে নেন নিজেদের হাতে। চাষের এই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই এগিয়ে আসেন সোনু সুদ। ওই কৃষক পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন ট্রাক্টর।
ভিডিয়োটি দেখার পর সোনু প্রথমে টুইট করে বলেন, “আগামী কালই ওই কৃষক পরিবার বলদ দিয়ে চাষ করতে পারবেন। মেয়েগুলো পড়াশোনায় মন দিক। কৃষকরা আমাদের দেশের গর্ব। ওঁদের রক্ষা করা উচিত।” পরে তিনি আরও একটি টুইট করেন। সেখানে সোনু বলেন, “বলদ নয়, ওই কৃষক পরিবারকে ট্রাক্টরের ব্যবস্থা করে দেব।” তার পরই নাগেশ্বরের পরিবারের কাছে ট্রাক্টর পৌঁছে দেন সোনু।
নাগেশ্বরের বড় মেয়ে ভেনেলা বলেন, “আমরা মদনপল্লিতে গত ১৫ বছর ধরে রয়েছি। সেখানে একটা চায়ের দোকানও রয়েছে। কিন্তু লকডাউনের জেরে বাবা চায়ের দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। যেটুকু টাকা হাতে ছিল তা নিয়েই গ্রামে ফিরে আসি। কিন্তু চাষ করতে ট্রাক্টর ভাড়া করার জন্য পর্যাপ্ত টাকা ছিল না আমাদের হাতে। তাই বাবাকে সাহায্য করতে দুই বোন এগিয়ে আসি।” অন্য দিকে, নাগেশ্বরের স্ত্রী ললিতা বলেন, “ট্রাক্টর ভাড়া করার মতো সামর্থ আমাদের ছিল না। ট্রাক্টর ভাড়া ১৫০০ টাকা প্রতি ঘণ্টায়। অত টাকা পাব কোথায়? তাই নিজেরাই হাল টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।”
ট্রাক্টর পাওয়ার পর খুশি নাগেশ্বরের পরিবার। ছবি: সংগৃহীত।
সোনু সুদ ট্রাক্টর পৌঁছে দেওয়ার পর এগিয়ে আসেন চন্দ্রবাবু নায়ডুও। রবিবার রাতে টুইটারে চন্দ্রবাবু জানিয়েছেন, সোনু সুদ যে ভাবে ওই পরিবারের হাতে ট্রাক্টর তুলে দিয়েছেন, তাতে তিনি অনুপ্রাণিত। বিষয়টি নিয়ে সোনুর সঙ্গে তাঁর কথাও হয়েছে। পরিবারটির দুর্দশার দিকে তাকিয়ে তিনি ঠিক করেছেন, নাগেশ্বর রাওয়ের দুই মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নেবেন। যাতে তাঁরা তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন।