নিতিন গডকড়ী
ভোট ফলের মাত্র তিন সপ্তাহ হয়েছে। নিতিন গডকড়ীর মুখ থেকে ফের ছুটে এল খোঁচা!
দিল্লিতে এক বণিকসভার অনুষ্ঠানে নিতিনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল শিল্পমহল ও সরকারের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার ঘাটতি নিয়ে। জবাব দিতে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে হঠাৎই টেনে আনলেন রাজনীতির প্রসঙ্গ। বললেন, ‘‘সব বিষয়েরই একটি চক্র হয়। যেমন রাজনীতিতে, তেমন ব্যবসাতেও। সিনেমায় যেমন বলা হয়, ‘কভি খুশি কভি গম’। কোনও কিছুই স্থায়ী নয়। বদলাতে থাকে। আজ যিনি খুশিতে আছেন, পাঁচ বছর পরে কাঁদবেন। আজ যিনি কাঁদছেন, পাঁচ বছর পর খুশি হবেন।’’
শুধু এটুকু বলেই কৌশলী গডকড়ী আবার শিল্পের প্রসঙ্গে ফিরে গিয়েছেন। যদিও সেখানেও ‘অচ্ছে দিন’ ‘বুরে দিন’-এর কথা টেনে এনেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘যাদের এখন অচ্ছে দিন (সুদিন), তাদের বদলে যাদের ‘বুরে দিন’ (দুর্দিন) চলছে, তাদের দিকেই সরকার আগে নজর দেবে। কোনও দেশেই সব ক্ষেত্র একশো শতাংশ ভাল চলছে, সেটি হতে পারে না। সকলে মিলেই কাজ করব। সরকারের যেমন আপনাদের উপর আস্থা আছে, আপনাদেরও সরকারের উপর।’’
গডকড়ী সবসময়ই সোজাসাপটা কথা বলেন, দলে এমনই তাঁর পরিচিতি। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের নির্বাচনে বিজেপির হারের পর থেকে যে রকম ধারাবাহিক ভাবে তিনি একের পর এক তির্যক মন্তব্য করেছেন, তার পর বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। বিরোধীদের কথায়, সে সব মন্তব্য আসলে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের প্রতি খোঁচা। মোদী যদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসতে না-পারতেন, সেই পরিস্থিতির জন্য নিজেকে তৈরি করছিলেন নিতিন। কিন্তু আগের থেকেও বেশি শক্তিশালী হয়ে ফিরেছে মোদী-শাহ জুটি। এ বারেও সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ নিতিনকে প্রধান চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের বাইরে রাখা হয়েছে। মিলেছে সড়ক ও পরিবহণ এবং ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রক। ঠাঁই হয়নি মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটিতেও। অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজও মন্ত্রিসভায় নেই। রাজনাথ সিংহ থাকলেও তাঁর ডানা ছাঁটার চেষ্টা হচ্ছে। ফলে দলের ভিতরের অসন্তোষটি কোনও না কোনও ভাবে বেরিয়েই আসছে।
ঠিক এক মাস আগে, ভোট যখন মধ্যগগনে, সেই সময় এই নিতিনই বিজেপি দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছিলেন, ‘‘কুকথার তরজা ছেড়ে সকলে শুধু উন্নয়ন নিয়ে কেন কথা বলতে পারি না?’’ ভোটের সময় এই মন্তব্য মোদীর উদ্দেশেই ছিল বলে অনেকে মনে করেছিলেন। ঠিক যেমন তিন রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিজেপির হারের পর গডকড়ী বলেছিলেন, ‘‘আমি সভাপতি হলে হারের দায় নিতাম।’’ কিংবা এমনও বলেন, ‘‘স্বপ্ন দেখানোর নেতাকে লোকের ভাল লাগে। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণ না হলে জনতাই তাঁকে পেটায়।’’ অথবা ‘‘ভাল বক্তা হলেই ভোটে জেতা যায় না।’’
বিজেপির এক নেতার কথায়, এই মুহূর্তে মোদী-শাহ জুটির শক্তির কাছে দলের কারও কোনও ভাবে মুখ খোলার ক্ষমতা নেই। নেই অসন্তোষ প্রকাশের পরিসরও। নিতিন কি সে কারণেই পালাবদলের জন্য আরও পাঁচ বছর অপেক্ষার কথা বললেন?