ফাইল চিত্র
পাঁচ রাজ্যে ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দলে গান্ধী পরিবারের প্রতি বিক্ষুব্ধরা সক্রিয় হয়ে উঠলেন। সনিয়া গান্ধীকে সভানেত্রীর পদে বসিয়ে রেখে রাহুল গান্ধীর পিছন থেকে দল চালানোয় ক্ষুব্ধ দলের নেতারা কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে দাবি তুলবেন, দ্রুত সভাপতি পদের নির্বাচন সেরে ফেলা হোক। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল যদি নিজে সভাপতি না হয়ে তাঁর কোনও ‘হাতের পুতুল’-কে শীর্ষপদে বসিয়ে এখনকার মতোই পিছন থেকে দল চালাতে চান, তা হলে তার বিরোধিতা করা হবে। প্রয়োজনে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর কাউকে রাহুলের ‘প্রক্সি’-র বিরুদ্ধে প্রার্থী করার কথাও ভাবা হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতাদের জি-২৩ গোষ্ঠীর প্রধান মস্তিষ্ক গুলাম নবি আজাদের বাড়িতে হাজির হন মণীশ তিওয়ারি, কপিল সিব্বল। সূত্রের দাবি, আনন্দ শর্মা, ভূপেন্দ্র সিংহ হুডাও বৈঠকে হাজির ছিলেন। সনিয়াকে চিঠি লিখে কংগ্রেসের যে নেতারা সক্রিয় নেতৃত্ব, সাংগঠনিক সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন, এঁরা সকলেই সেই দলের নেতা। তাঁদের প্রধান ক্ষোভ, রাহুল সভাপতির পদের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নিজের কিছু হাতেগোনা লোককে নিয়ে দল চালাচ্ছেন। সবাইকে সিদ্ধান্তে শামিল করছেন না। দলে ক্ষমতার ভাগবাঁটায়োরাও করছেন না।
আগামী ১৫ এপ্রিল থেকেই এআইসিসি-র সদস্যদের সূচি প্রকাশ করে কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। সভাপতি পদে নির্বাচন হবে ২১ অগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। কিন্তু পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, মণিপুরে কংগ্রেসের হার ও উত্তরপ্রদেশে একইরকম খারাপ ফলের পরে রাহুল আর সভাপতির পদে ফিরতে চাইবেন না বলে তাঁর অনুগামীদের আশঙ্কা। সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নিলেই রাহুলকে নভেম্বর-ডিসেম্বরে গুজরাত, হিমাচলের ভোট সামলাতে হবে। কংগ্রেস হারলে তার দায়ও নিতে হবে তাঁকে।
বিক্ষুব্ধদের বক্তব্য, গান্ধী পরিবার নিজেদের কোনও হাতের ‘পুতুল’কে সভাপতি করতে চাইলে তা মেনে নেওয়া হবে না। সভাপতি নির্বাচন পিছিয়েও দেওয়া চলবে না। বিধানসভা ভোটের ময়নাতদন্তে সনিয়া খুব শীঘ্রই ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকবেন। সেখানে বিক্ষুব্ধরা সাংগঠনিক সংস্কারের দাবি তুলবেন। গুলাম নবি, শশী তারুররা ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। উল্টোদিকে কর্নাটকের নেতা ডি কে শিবকুমারের বক্তব্য, ‘‘গান্ধী পরিবারই কংগ্রেসকে একজোট রাখতে পারে। কংগ্রেস দেশের মানুষকে একজোট করতে পারে।’’ গুজরাতের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র নেতা রঘু শর্মার যুক্তি, ‘‘রাহুল, প্রিয়ঙ্কাই দলের নেতানেত্রী ছিলেন। তাঁরাই থাকবেন।’’
উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড—তিন রাজ্যেই প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ভোটে হেরে গিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ নেতাদের মতে, উত্তরপ্রদেশে প্রিয়ঙ্কা অনেক দেরিতে সক্রিয় হয়েছেন। পুরো সময়ও দেননি। ৪০ শতাংশ আসনে মহিলা প্রার্থী দিতে গিয়ে লড়াকু প্রার্থীরা বাদ পড়েছেন। উত্তরাখণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে হরিশ রাওয়তের নাম ঘোষণা হয়নি। রাওয়াত নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। রাহুল-প্রিয়ঙ্কাই সেখানে প্রচারে কম সময় দিয়েছেন। গোয়াতেও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে কাউকে তুলে ধরা হয়নি। শেষবেলায় তৃণমূলের
জোটের প্রস্তাব মেনে নিলে ভোট কাটাকুটিও হত না। তার বদলে শক্তিক্ষয় হয়ে যাওয়া গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টির সঙ্গে জোটের ভরসায় থেকেছে কংগ্রেস।