২ হাজার টাকার নোট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল সরাসরি কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। —ফাইল চিত্র।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-এর ২ হাজার টাকার নোটবন্দির সিদ্ধান্তে সরগরম সারা দেশ। মোদী সরকারকে দায়ী করতে বাকি রাখেননি বিরোধী দলের রাজনীতিবিদেরা। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালও সরাসরি কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। শিক্ষার যোগ্যতা নিয়েও মন্তব্য করতে পিছপা হননি অরবিন্দ।
শুক্রবার রাতে টুইট করে আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো লেখেন, ‘‘প্রথমে বাজারে দু’হাজার টাকা আনা হল। এর ফলে নাকি দুর্নীতি বন্ধ হবে। আবার এখন দু’হাজার টাকার সেই নোটগুলি তুলে নেওয়া হবে। এ বার নাকি দুর্নীতি পুরোপুরি আটকানো যাবে। ঠিক এই কারণেই আমি বলি, প্রধানমন্ত্রীর পড়াশোনা জানা প্রয়োজন। যে কেউ যখন খুশি অশিক্ষিত প্রধানমন্ত্রীকে যা খুশি বলে যাবেন। উনিও কিছু বোঝেন না। সাধারণ জনতাকে সমস্যার মুখে পড়তে হয়।’’
মোদী সরকারকে বিঁধেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তৃণমূল নেত্রীর টুইট বার্তা, ‘‘তা হলে ওটা ২০০০ টাকার ধামাকা ছিল না। ১০০ কোটি ভারতীয়কে ১০০ কোটি ডলারের ধোঁকা ছিল ওটা। প্রিয় ভাইবোনেরা জেগে উঠুন। নোট বাতিলের যে দুর্ভোগ আমাদের সহ্য করতে হয়েছে তা ভোলার নয়। যাদের প্ররোচনায় তা হয়েছে, তাদেরও ক্ষমা করা উচিত নয়।’’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘তুঘলকি শাসনে এমনই হয়। মোদীজির রাজত্বে এ রকমই হয়।’’ তবে নোট বাতিলের জেরে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের এবং আদানি-অম্বানীদের লাভ হয়েছিল, দাবি করে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আর তাতে দগ্ধ হন গরিব ও সাধারণ মানুষ।’’
মোদীকে কটাক্ষ করে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের মন্তব্য, ‘‘আমাদের স্বঘোষিত বিশ্বগুরুর মতো। আগে কাজ করো, তার পরে ভাবো। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরে তুঘলকি ফরমানের সময়ের ঢাকঢোল পিটিয়ে আনা ২০০০ টাকার নোট প্রত্যাহার করা হচ্ছে।’’ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দাবি, এই নোট যে লেনদেনের জনপ্রিয় মাধ্যম হতে পারে না, তা তাঁরা চালুর সময়েই বলেছিলেন। এখন সেটা সত্যি প্রমাণ হল। তাঁর কথায়, ‘‘নোটবন্দির বোকার মতো সিদ্ধান্তকে আড়াল করতে ‘ব্যান্ড-এডের’ মতো ছিল ২০০০ টাকা। নতুন ৫০০ টাকার নোট ফিরেছে। এখন ১০০০ টাকা ফিরলেও অবাক হব না। নোট বাতিলের পুরো বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।’’
তৃণমূলের কটাক্ষ, ‘‘সাত বছর বাদে ২০০০ টাকার নোট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এটা কি তবে আরও একটা মোদিনমিক-এর মাস্টারস্ট্রোক?’’ কংগ্রেস নেতা পবন খেরার ক্ষোভ, দেশকে তাড়া করতে ২০১৬ সালের সেই ভূত আবার ফিরে এল। তিনি বলেন, ‘‘২০০০ টাকার নোটের সুবিধা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নৈতিক উপদেশ দিয়েছিলেন। আজ যখন তা ছাপানো বন্ধ হচ্ছে, কোথায় গেল সেই সব প্রতিশ্রুতি? এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য কী, সরকারকে তা বলতেই হবে। সরকার গরিব বিরোধী, জনগণ বিরোধী কর্মসূচি চালাচ্ছে।’’
তবে বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক তথা অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ি আবার ভিন্ন মন্তব্য করেছেন। তাঁর দাবি, অনেকেই মনে করছেন ২০১৬ সালে যেমন নগদ টাকার ‘শর্টেজ’ হয়েছিল, সেই পরিস্থিতিই আবার তৈরি হল। কিন্তু তা যে একান্ত ভাবে অপপ্রচার এবং ২০০০ টাকার নোট বাতিল নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে তা জানালেন অশোক। তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময় বড় বড় নোট অনেক দেশ অবৈধ বলে ঘোষণা করে। কানাডা করেছিল ২০১০-এ, সিঙ্গাপুর করেছিল ২০১৪-য়, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক করেছিল ২০১৬-য়। আমরাও করেছি।’’ তার কারণও জানালেন তিনি। অশোকের মতে, বড় নোট থাকলে যাঁরা দুর্নীতি করেন, চোরাকারবারির সঙ্গে যুক্ত তাঁদের সুবিধা হয়। তাই তাঁরাই আপত্তি করতে পারেন। সাধারণ মানুষের কোনও অসুবিধা হবে না। এমনকি, ২০১৬ সালে টাকার যে ‘শর্টেজ’ হয়েছিল তা এ বার হবে না বলে আশ্বাস দেন তিনি। ২০১৬ সালে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার যে নোট তুলে নেওয়া হয় তার পরিমাণ ৮৫ শতাংশ। কিন্তু ২০০০ টাকার যে নোট তোলা হবে, তার পরিমাণ বাজারে মাত্র ১১ শতাংশ। আরবিআই অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে আশঙ্কার কোনও কারণ নেই বলে জানান তিনি।
বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে ২ হাজার টাকার সমস্ত নোট। শুক্রবার সন্ধ্যায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (আরবিআই) এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসায় আবার চাঙ্গা হয়ে উঠল নোটবন্দি নিয়ে দেশবাসীর হয়রানির স্মৃতি। ২০১৬ সালে রাতারাতি ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদের একাংশ। আবার যেন সাড়ে ছ’বছর আগেকার স্মৃতি তরতাজা হয়ে উঠল।
২০১৬ সালে নোটবন্দির সময় মোদী সরকারের দাবি ছিল, বাজার থেকে কালো টাকা এবং জাল টাকা উদ্ধারের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই তড়িঘড়ি বাজার থেকে নোট তুলে নেওয়া হয়েছিল। তবে পরে দেখা যায়, বাজারে যত টাকা ছিল, প্রায় তার পুরোটাই ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে চলে আসে। উপরন্তু নোটবন্দি করতে এবং নতুন নোট ছাপাতে খরচও হয় সরকারের। সব মিলিয়ে নোটবন্দি করে যে অর্থনীতির অগ্রগতি হয়েছিল বা সে সময় বিপুল কালো টাকা ধরা পড়েছিল, তা বলা যায় না।
এ বার ব্যাঙ্কে নোট জমা দেওয়ার জন্য দেশবাসীকে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। ২৩ মে থেকে ব্যাঙ্ক এবং আরবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরগুলিতে গিয়ে ২ হাজারের নোট জমা দেওয়া যাবে। আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ২ হাজার টাকার নোটে লেনদেন করতে পারবেন। ২ হাজার টাকার নোটের আইনি বৈধতা থাকবে। তবে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ২ হাজারের সমস্ত নোট ব্যাঙ্কে জমা দিতে হবে গ্রাহকদের।