পরিকাঠামোয় ভর করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু সময় মতো প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়াটা বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কোথায় জমি অধিগ্রহণ, কোথাও ঠিকাদারের অভাব, কোথাও আবার আইনি জটিলতা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মনমোহন জমানার শুরুতে পূর্ব ও পশ্চিম পণ্যবাহী রেল করিডরের পরিকল্পনা হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদী সরকারের এক বছর কেটে যাওয়ার পরেও সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে, তা নিশ্চিত নয়। এ দিকে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় খরচ বেড়েছে। আজ তাই নতুন করে ওই দুই পণ্যবাহী করিডরের জন্য বর্ধিত খরচ বরাদ্দ করতে হল মোদী সরকারকে। যার পরিমাণ ৮১,৪৫৯ কোটি টাকা। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এত দিন ঠিক ছিল, ২০১৭-র মার্চের মধ্যে করিডরের কাজ শেষ হবে। এখন ২০১৭ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে দফায় দফায় কাজ শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
পরিকাঠামো ক্ষেত্রের প্রকল্পগুলির কাজ কেমন কী এগোচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে আজ বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে ভিডিও-কনফারেন্স করেন মোদী। সেখানে একের পর এক মামলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ আটকে থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। মন্ত্রকের কর্তাদের নির্দেশ দেন, এই সব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সক্রিয় হতে হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় সাধারণ মানুষের কী ধরনের অসুবিধা হচ্ছে, তা তুলে ধরতে হবে। রেল, সড়ক, বিদ্যুৎ, কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রকের প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজে কত দূর অগ্রগতি হয়েছে, তারও খোঁজখবর নেন মোদী।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে কাজের তদারকি করলেও বাস্তবে প্রকল্পের রূপায়ণ করতে হোঁচট খেতে হচ্ছে। পূর্ব ও পশ্চিম পণ্যবাহী করিডরের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার হয়ে ওই রেল করিডরের পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত যাওয়ার কথা। কিন্তু বহু জায়গাতেই, বিশেষ করে পূর্ব করিডরে কোথাও ঠিকাদারের অভাব, কোথাও স্থানীয় সমস্যায় কাজ আটকে যাচ্ছে। তার ফলেই প্রকল্পের খরচ বেড়েছে। সংশোধিত হিসেব মেনে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ৮১ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকার আনুমানিক খরচের অনুমোদন দিয়েছে। যার মধ্যে ৭৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা খরচ হবে রেল পরিকাঠামো নির্মাণে। বাকি টাকা জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে। তা-ও এর মধ্যে পূর্ব পণ্যবাহী করিডরের বিহারের শোননগর থেকে পশ্চিমবঙ্গের ডানকুনি পর্যন্ত অংশের খরচ ধরা নেই। কারণ ওই অংশটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে (পিপিপি) তৈরি হবে বলে ঠিক হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম পণ্যবাহী করিডরের মোট দৈর্ঘ্য ৩ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। তার জন্য ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দু’টি করিডর মিলিয়ে মাত্র ১ হাজার ৫২৬ কিলোমিটার রেলপথ তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে। সিগন্যাল ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিকরণ ও অন্যান্য কাজের জন্য বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই সংশোধিত খরচের অনুমোদন দরকার ছিল।