Manipur Clash

রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা, নতুন অভিযোগ মণিপুরে

মণিপুরের সেরোও গ্রামে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামী চূড়াচাঁদ সিংহের স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতার পরিবার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

ইম্ফল শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৩ ১৫:০৫
Share:

মণিপুর হিংসার একটি ছবি। —ফাইল চিত্র।

হিংসা উপদ্রুত মণিপুর থেকে আর এক নৃশংস ঘটনার কথা প্রকাশ্যে এল। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামী এস চূড়াচাঁদ সিংহের বয়স্কা স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। থানায় অভিযোগও দায়ের করেছে মৃতার পরিবার।

Advertisement

এনডিটিভি-র একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ, ঘটনাটি গত ২৮ মে-র। অভিযোগ, ওই দিন কাকচিং জেলার সেরোও গ্রামে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু ব্যক্তি হাতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একটি বাড়ির দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেই সময় ওই বাড়ির ভিতরে ছিলেন ওই স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রী, ৮০ বছর বয়সি ইবেটোমবি। বেশ কিছু সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আগুন নেভান গ্রামবাসীরা। বাড়ির ভিতর থেকে মেলে ওই বৃদ্ধার দেহাবশেষ। এই প্রসঙ্গে বৃদ্ধার নাতি প্রেমকাঁটা এনডিটিভি-কে জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা তাঁকেও হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। ঠাকুমাকে বাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে হাতে গুলি লাগে তাঁরও। প্রেমকাঁটার কথায়, “আমি ঠাকুমাকে বাঁচাতে গেলে তিনি বলেন, এখন পালিয়ে যা। কিছু সময় পরে আমায় নিতে আসবি।” কিন্তু ঠাকুমাকে আর তিনি রক্ষা করতে পারেননি, আক্ষেপ ঝরে পড়ে নাতির গলায়।

ওই ঘটনার প্রায় দু’মাস পরে জ্বালিয়ে দেওয়া সেই বাড়ির কাছে গিয়েছিলেন প্রেমকাঁটা। সেখানে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে একটি ছবি উদ্ধার করেন তিনি। সেই ছবিতে তাঁর ঠাকুরদার সঙ্গে রয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কালামও। মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত সেরোও রাজ্যের হিংসাদীর্ণ গ্রামগুলির মধ্যে শীর্ষ তালিকায় রয়েছে। ছবির মতো সুন্দর গ্রামটির নানা দিকে এখন বুলেটের দাগ, আধপোড়া ধ্বংসস্তূপ।

Advertisement

প্রসঙ্গত, গত বুধবারই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মণিপুরের একটি ভিডিয়ো ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় দেশ জুড়ে। ভিডিয়োতে দেখা যায়, দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরাচ্ছে উন্মত্ত জনতা। যদিও ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। ওই দুই মহিলার মধ্যে এক মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয় বলেও অভিযোগ। মণিপুর পুলিশের দাবি, ছবিটি গত ৪ মে তোলা। দুই নির্যাতিতার এক জন ইতিমধ্যেই গত ৪ মের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, খুনের ভয় দেখিয়ে দুষ্কৃতীরা সে দিন তাঁদের জনসমক্ষে পোশাক খুলতে বাধ্য করেছিল। সেই ঘটনায় গত ১৮ মে সাইকুল থানায় ‘জ়িরো এফআইআর’ দায়ের করে খুন, ধর্ষণ-সহ একাধিক অভিযোগ এনেছিলেন নির্যাতিতা। অভিযোগ আনা হয়েছিল ৮০০ থেকে ১০০০ জন অজ্ঞাতপরিচয় সশস্ত্র দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। কিন্তু সমাজমাধ্যমে ভিডিয়ো ছড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ।

মণিপুরের ওই ঘটনায় দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মণিপুরের গোষ্ঠীহিংসার সূচনা পর্বেই দুই মহিলা গণধর্ষণ এবং হিংসার শিকার হলেও ৭৭ দিন পরে কেন পুলিশ সক্রিয় হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের দাবি, ঘটনার কয়েক দিন পরেই এ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই বিজেপি শাসিত রাজ্যে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই কুকি, জ়ো-সহ বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই হিংসার সূচনা হয় সেখানে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement