জসবন্ত সিংহ (১৯৩৮-২০২০)। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
প্রয়াত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জসবন্ত সিংহ। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। রবিবার সকাল ৬ টা ৫৫ মিনিটে দিল্লির সেনা হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালসূত্রে জানানো হয়েছে গত ২৫ জুন থেকে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। সেপসিস এবং মাল্টিঅর্গান ডিসফাংশন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। রবিবার সকালে তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।
তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টুইটবার্তায় মোদী লিখেছেন, ‘‘প্রথমে একজন সেনা এবং তারপর অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে দেশসেবা করেছেন তিনি। অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারে তিনি অর্থমন্ত্রক, বিদেশ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছন। তাঁর প্রয়াণে আমি শোকাহত।’’ দলের সাংগঠনিক দিকেও প্রয়াত রাজনীতিকের অবদান স্মরণ করেছেন মোদী। সমবেদনা জানান তাঁর পরিবারকে।
এদিন রাতে জোধপুরে জসবন্তের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। পুত্র মানবেন্দ্র ও পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি সেখানে হাজির ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
রাজস্থানের বাড়মের জেলার জসোল গ্রামে জসবন্তের জন্ম ১৯৩৮ সালের ৩ জানুয়ারি। মেয়ো কলেজ এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি এবং ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি উত্তীর্ণ জসবন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে। তিনি কর্মরত ছিলেন আর্মার্ড রেজিমেন্টের ‘মেজর’ পদে।
আরও পড়ুন: বিজেপি-সঙ্গ ত্যাগ করল সবচেয়ে পুরনো সঙ্গী শিরোমণি অকালি দল
রাজনীতিতে প্রবেশ ষাটের দশকেরই, শেষ দিকে। ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। রাজ্যসভায় প্রথম পা রাখেন আশির দশকে। ১৯৯৬-এর ১৬ মে থেকে সে বছরের ১ জুন অবধি বাজপেয়ীর সংক্ষিপ্ত মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন অর্থমন্ত্রকের দায়িত্বে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবার তাঁকে দেখা গিয়েছিল ২০০২ সালে। বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় তিনি ১ জুলাই, ২০০২ থেকে ২১ মে ২০০৪ অবধি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯৮ থেকে ২০০২, দীর্ঘ চার বছর। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কার্যভার তিনি পালন করেছেন ২০০০-এর জানুয়ারি থেকে ২০০১-এর অক্টোবর মাস পর্যন্ত।
১৯৯৮-’৯৯ বাজপেয়ীর ১৩ মাসের সরকারের জমানায় জসবন্তই ছিলেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান। সব মিলিয়ে মোট পাঁচবার রাজ্যসভা এবং চার বার লোকসভার সাংসদ হয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৯ সালের লোকসভা ভোটে রাজস্থানের জোধপুর এবং ১৯৯৬ ও ১৯৯১-এ ওই রাজ্যের চিতৌরগঢ় কেন্দ্র থেকে সাংসদ হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জেতেন এ রাজ্যের দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে।
১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী জসবন্ত আফগানিস্তানের কন্দহরে গিয়ে হাইজ্যাকারদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। তাঁর এই ‘সক্রিয়তা’ নিয়ে সে সময় তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ‘টিকার জন্য ৮০ হাজার কোটির পুঁজি আছে তো!’
২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে বাজপেয়ী সরকারের পতনের পরে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা হয়েছিলেন জসবন্ত। কিন্তু ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিঙে জেতার কয়েক মাসের মধ্যেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলি জিন্নার স্তুতি করার অভিযোগে বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত হন। জসবন্ত তাঁর বইয়ে লিখেছিলেন, ভারত ভাগের জন্য জিন্না দায়ী নন। বহিষ্কারের মাস দশেক পরেই বিজেপি নেতৃত্ব ফিরিয়ে নেয় রাজপুত নেতাকে। কিন্তু দলের অন্দরে আর হৃত মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে পারেননি তিনি।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বাড়মের কেন্দ্রে বিজেপির টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হন জসবন্ত। ফের বহিষ্কার করা হয় তাঁকে। ভোটেও হেরে যান। কয়েক বছর পরে জসবন্তের ছেলে তথা বাড়মেরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ মানবেন্দ্র যোগ দেন কংগ্রেসে। গত লোকসভা ভোটে সেখানে কংগ্রেসের প্রার্থীও হন মানবেন্দ্র। জসবন্ত অবশ্য আর সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরেননি।
তাঁর প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘ প্রবীণ বিজেপি নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জসবন্ত সিংহের মৃত্যুতে আমি গভীর ভাবে মর্মাহত। প্রতিরক্ষা-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন বিভিন্ন সময়ে। তিনি ছিলেন একজন সুদক্ষ সাংসদও।’’
দীর্ঘ দিন সাংসদের দায়িত্ব পালন করা রাজনীতিকদের মধ্যে জসবন্ত অন্যতম। ২০১৪ সালের অগস্ট মাসে নিজের বাসভবনে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান জসবন্ত। দিল্লির সেনা হাসপাতালে দীর্ঘ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তার পর তিনি কোমায় চলে যান।