রঞ্জন গগৈ। ফাইল চিত্র।
ঠিক এক বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেছিলেন, অবসরের পরে সরকারি পদে নিয়োগ বিচারবিভাগের স্বাধীনতার গায়ে ক্ষত। সেটা ২০১৯-এর মার্চ। ঠিক এক বছর পরে আজ প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গগৈকে রাষ্ট্রপতির মনোনীত সাংসদ হিসেবে রাজ্যসভায় মনোনীত করা হল। যাতে বিরোধী শিবির থেকে আইনজীবীরা বলছেন, মোদী সরকার কার্যত বিচারবিভাগের স্বাধীনতার কফিনে শেষ পেরেক পুঁতল।
প্রবীণ আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দুষ্মন্ত দাভের মন্তব্য, ‘‘এটা একেবারেই ন্যক্কারজনক। সরকারকে সুবিধা করে দেওয়ার পুরস্কার দেওয়া হল। বিচারবিভাগের স্বাধীনতার যেটুকু আবরণ ছিল, তা-ও ধ্বংস হয়ে গেল।’’ সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধর বিজেপি নেতাদের বিদ্বেষমূলক বিবৃতির বিরুদ্ধে এফআইআর-এর নির্দেশের পরে তাঁকে বদলি করা হয়। এ বার গগৈকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘নমো-র বার্তা হল, হয় রাজ্যপাল, নয়তো রাজ্যসভা। না হলে বদলি সহ্য করো, বা ইস্তফা দাও।’’
সবেমাত্র গত নভেম্বরেই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ অবসর নিয়েছেন। অবসরের আগে থেকেই তাঁর আমলে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। অথচ সুপ্রিম কোর্টের কাজে সরকার নাক গলাচ্ছে বলে এই গগৈ-ই বাকি প্রবীণ বিচারপতিদের সঙ্গে মিলে তাঁর পূর্বসূরি, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করেছিলেন। গগৈয়ের আমলে রামমন্দির মামলার রায় বেরিয়েছে। অসমে এনআরসি প্রক্রিয়াও তাঁর নির্দেশে হয়েছে। রাফাল চুক্তি নিয়ে তিনি দু’বার মোদী সরকারকে ছাড়পত্র দিয়েছেন। তাঁর মেয়াদের শেষ পর্বে গগৈয়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টেরই এক মহিলা কর্মী যৌন হেনস্থার অভিযোগ তোলেন। গগৈয়ের তৈরি করা কমিটিই তাঁকে ছাড় দিয়ে পুলিশ ও তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে এর পিছনে যড়যন্ত্রের তদন্ত করতে বলে। তা নিয়েও সমালোচনা কম হয়নি।
মোদী জমানাতেই প্রথম বার প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি পি সথাশিবমকে কেরলের রাজ্যপাল নিয়োগ করা হয়। সে সময় কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছিল, অমিত শাহের বিরুদ্ধে ভুয়ো সংঘর্ষের মামলার এফআইআর খারিজ করে দিয়েছিলেন বলেই সথাশিবমকে পুরস্কৃত করা হল। কিন্তু বিজেপির যুক্তি, এই ঘটনা প্রথম নয়। ১৯৮৪-তে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্রকে কংগ্রেসের টিকিটেই রাজ্যসভায় আনা হয়েছিল।
কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির জবাব, ‘‘রঙ্গনাথ মিশ্র অবসরের ছ’বছর পরে এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। আর এক প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরকে সম্প্রতি আম আদমি পার্টি রাজ্যসভায় পাঠাতে চেয়েছিল। তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।’’ মনু সিঙ্ঘভি যোগ করেন, ‘‘প্রয়াত অরুণ জেটলি এক সময় বলেছিলেন, অবসরের পরে সরকারি পদের ইচ্ছা অনেক সময় অবসরের আগের রায়ে প্রভাব ফেলে। মোদী সরকার অন্তত জেটলির কথা শুনতে পারত।’’
বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রী যশবন্ত সিন্হা ৃবলেন, ‘‘আমার আশা গগৈ এই প্রস্তাবে না বলবেন। নইলে তিনি বিচারবিভাগের সুনামের অকল্পনীয় ক্ষতি করবেন।’’ যদিও আজ গগৈকে রাজ্যসভায় মনোনীত করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ফেলেছে। এর আগে জানুয়ারি মাসে তাঁর ভাই অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল অঞ্জন গগৈকে উত্তর-পূর্ব পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করে কেন্দ্র। গগৈকে গৌহাটি হাইকোর্ট থেকে দেখে আসছেন মিজোরামের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব। তাঁর কথায়, ‘‘এটা রাজনৈতিক নিয়োগ, বিচারবিভাগকে স্পষ্ট বার্তা।’’