রাকেশ আস্থানা।
কোনও প্রবীণ রাজনীতিকের বদলে অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস-কে পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী রাজ্যপালের পদে দেখা যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরমহলের খবর, নরেন্দ্র মোদীর আস্থাভাজন বলে পরিচিত রাকেশ আস্থানার পাল্লা আপাতত সবথেকে ভারী। গুজরাত ক্যাডারের এই আইপিএস অফিসার গত ৩১ জুলাই দিল্লির পুলিশ কমিশনার হিসেবে অবসর নিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই তাঁকে প্রথমে সিবিআইয়ের অতিরিক্ত ডিরেক্টরের পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। এর পরে দীর্ঘ দিন সিবিআইয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ, স্পেশাল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। সে সময় পশ্চিমবঙ্গের সারদা, রোজ ভ্যালির মতো ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারির তদন্তেও আস্থানা বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় নেওয়া বিজেপির পোড়খাওয়া নেতা মুখতার আব্বাস নকভির নাম পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী রাজ্যপাল হিসেবে জল্পনায় উঠে এসেছিল। আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের নামও এসেছে। কিন্তু সরকারি সূত্রের খবর, কোনও প্রাক্তন আইএএস বা আইপিএস-কে রাজভবনে পাঠানো নিয়ে প্রথম থেকেই চিন্তাভাবনা চলছে। এই সূত্র ধরেই অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস কিরণ বেদীর নাম উঠে এসেছিল। চিন্তাভাবনা হয় পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের দু’-এক জন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস-এর নাম নিয়েও। রাকেশ আস্থানা গত ৩১ জুলাই অবসর নেওয়ার পরে তাঁর নাম নিয়ে চর্চা সবথেকে বেশি। অনেকেরই ধারণা ছিল, দিল্লির পুলিশ কমিশনার পদে তাঁর মেয়াদ বাড়বে। তা না হওয়ায় বিজেপি নেতাদের বিশ্বাস, অন্য গুরুদায়িত্ব অপেক্ষা করছে।
জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় দক্ষিণের বিজেপি নেতা, মণিপুরের রাজ্যপাল লা গণেশনকে আপাতত পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, তাঁকে পাকাপাকি রাখায় আপত্তি নেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শীর্ষ স্তরের। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, রাজ্যপাল ধনখড়কে সামনে রেখে কেন্দ্র রাজ্য সরকারকে হেনস্থা করেছে। আস্থানাকে রাজ্যপাল করে পাঠালে মোদী সরকার ফের সেই কৌশলে চলবে, মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
অতীতে অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস-দের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। বাম জমানায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রাক্তন কর্তা টি ভি রাজেশ্বর রাজ্যপাল হয়েছিলেন। বাম জমানার শেষে এবং মমতার সরকারের গোড়ায় কে আর নারায়ণন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ছিলেন। ইউপিএ-সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নারায়ণন কাজ করেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গত শুক্রবার একান্ত বৈঠকে রাজ্যপালের নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, তা নিয়ে অবশ্য কেউই মুখ খুলতে চাননি।
সিবিআইয়ে কাজ করার সময় প্রতারণায় অভিযুক্ত ওষুধ সংস্থা স্টার্লিং বায়োটেক ও ব্যবসায়ী মইন কুরেশির থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল আস্থানার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তৎকালীন সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মার সঙ্গে আস্থানার সংঘাত চরমে পৌঁছেছিল। সিবিআই নিজেই অবশ্য পরে তদন্ত করেদুর্নীতির অভিযোগ থেকে আস্থানাকে ‘ক্লিন চিট’ দেয়। সিবিআই থেকে সরিয়ে আস্থানাকে প্রথমে পাঠানো হয়েছিল বিমান পরিবহণের নিরাপত্তার দায়িত্বে। পরে বিএসএফের ডিজি হন। গত বছর অবসরের চার দিন আগে চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে দিল্লির পুলিশ কমিশনার করা হয়।