মা একা বড় করেছিলেন মেয়েকে। কিন্তু তাই বলে অপূর্ণ রাখেননি মেয়ের কোনও স্বপ্ন। জীবনের সব ভাঙাগড়ায় পাশে ছিলেন মেয়ের। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিজয়িনী হওয়া থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদের দায়িত্ব গ্রহণ। গরিমা যাদব পাশে পেয়েছেন তাঁর মাকে।
গরিমাও তাঁর মায়ের মতোই লড়াকু। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় সেরার শিরোপা পেয়েও উপেক্ষা করেছিলেন বিনোদন দুনিয়ার রঙিন হাতছানি। পরিবর্তে বেছে নিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর কঠিন জীবন।
সিমলার আর্মি পাবলিক স্কুল থেকে পড়াশোনার পরে গরিমা অর্থনীতি নিয়ে পড়তেন দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে। স্নাতক হওয়ার পরে ইচ্ছে ছিল আমলা হওয়ার। স্বপ্নপূরণে গরিমা সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পাশাপাশি আংশিক সময়ের জন্য কাজ করছিলেন একটি বহুজাতিক সংস্থায়।
এই সময়ে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের প্রস্তাব পান গরিমা। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ‘মিস চার্মিং ফেস’ নামের ওই প্রতিযোগিতায় সেরার শিরোপা পান তিনি।
প্রতিযোগিতার পরের ধাপে তাঁর ইটালি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইটালিতে গিয়ে আবার সৌন্দর্যের শ্রেষ্ঠত্বের দৌড়ে সামিল হওয়ার ইচ্ছে হল না।
তত দিনে গরিমা জেনে গিয়েছেন আইএএস পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে তিনি অনুত্তীর্ণ। তিনি কিন্তু হাল ছাড়লেন না। ফিরেও গেলেন না সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মঞ্চে। পরিবর্তে প্রস্তুতি নিলেন কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিস পরীক্ষার।
এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। চেন্নাইয়ে অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে যোগ দিতে হল প্রশিক্ষণের জন্য। এই প্রশিক্ষণ পর্ব প্রথম থেকে খুব সহজ ছিল না গরিমার জন্য।
ধীরে ধীরে মনের জোরে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করেন তিনি। তাঁর কথায়, মনের জোরে দুর্বলতা দূর করেই সাফল্য পেয়েছেন। প্রশিক্ষণ পর্বের শেষে দেখা যায়, সারা ভারতে প্রশিক্ষণরত মহিলা সেনা অফিসারদের মধ্যে তিনি আছেন প্রথম সারিতেই।
ধাপে ধাপে সব বাধা পেরিয়ে গরিমা গত বছর, যোগ দেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। এখন তিনি কর্মরত লেফটেন্যান্ট পদে।
বিজ্ঞাপন, সিনেমার রঙিন দুনিয়ায় পা না রেখে এই কর্কশ জীবন স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছেন গরিমা। ক্যামেরার আড়ালে থেকে এ ভাবেই জন্মভূমির সেবা করে যেতে চান লেফটেন্যান্ট গরিমা যাদব।