পাটন পাটোলা। অনেক ভারতীয়ের কাছেই এই নামটা অজানা। অথচ সারা বিশ্বে ভারতের এই শিল্পের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া।
বিশ্বের বিলাসবহুল পোশাকের সঙ্গে একই সারিতে বসানো হয় এই পাটন পাটোলা শাড়িকে।
পাটন পাটোলার কাহিনি শুরু হয় ৯০০ বছর আগে। বলা হয় রাজা কুমারপালার হাত ধরেই এর আত্মপ্রকাশ।
গুজরাতের পাটন জেলা থেকেই সূত্রপাত এই শিল্পের। তাই এমন নাম। পাটনের রাজা কুমারপালার অত্যন্ত পছন্দের ছিল এই ফ্যাব্রিকের পোশাক। তিনি মন্দিরে প্রার্থনা করার আগে রোজ আলাদা আলাদা পাটোলা ফ্যাব্রিকের পোশাক পরতেন।
রাজার বিশ্বাস ছিল, পাটোলা শাড়ি শুদ্ধতার প্রতীক। এই পোশাক পরে প্রার্থনা করলে অশুভ কিছু ঘটবে না।
তখন অবশ্য গুজরাতের পাটন জেলায় এই পাটোলা শিল্প গড়ে ওঠেনি। মূলত মহারাষ্ট্রের জালনার কারিগরদের কাছ থেকে তা আমদানি করতেন রাজা।
কুমারপালা পরে জানতে পারেন, তাঁর কাছে বিক্রি করার আগে জালনার রাজা সেগুলোকে বিছানার চাদর হিসাবে ব্যবহার করতেন। তার পরই সেই জেলা থেকে সেগুলো বিক্রির উদ্দেশে অন্যত্র পাড়ি দিত।
এটা জানার পর রাজার সম্মানে আঘাত আসে। মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটক থেকে ৭০০ পাটোলা শিল্পীর পরিবারকে নিজের রাজ্যে নিয়ে চলে আসেন।
তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হয় পাটন জেলায়। তখন থেকেই ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গুজরাতের পাটন পাটোলা।
খুব জটিল পদ্ধতিতে তৈরি এই পোশাক বানাতে সময় লাগে অন্তত ৭ মাস। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, রাজা এই পোশাক নিয়ে এতটাই নাছোড়বান্দা ছিলেন যে, প্রতি দিনই একটা করে নতুন পোশাক পরতেন প্রার্থনার আগে।
এই শাড়ি বুননের পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল। সিল্ক সুতোয় বোনা হয় শাড়ি। যে কোনও সাধারণ কারিগরের পক্ষে তা করা প্রায় অসম্ভব।
শাড়ি ছিঁড়ে যাবে, তবু রং যাবে না- এই শাড়ি নিয়ে গুজরাতে এমন কথাই প্রচলিত।
এক একটা শাড়ি বুনতে সময় লাগে অন্তত ৭ মাস আর একটা কাস্টমাইজড শাড়ি বুনতে সময় লাগে অন্তত ২ বছর।
সে কারণে আসল পাটোলা শাড়ির দামও আকাশছোঁয়া। দাম শুরু হয় দেড় লাখ টাকা থেকে।
পাটোলা শিল্পীদের যে ৭০০ পরিবার ছিল, তাদের মধ্যে একটি পরিবার ছাড়া অন্যেরা সকলেই ধীরে ধীরে নানা পেশায় চলে গিয়েছেন।
গুজরাত বা বলা যায় ভারতে এখন একমাত্র সালভি পরিবারই ৯০০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় এই কাজ করে আসছে।
এই পরিবারই একমাত্র সাবেকি পদ্ধতিতে এবং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক দ্রব্যের ব্যবহার করে পাটোলা শাড়ি বুনে থাকেন।
হলুদ, এক বিশেষ ধরনের গাছের শিকড়, গাঁদা ফুল, বেদানা ইত্যাদি ব্যবহার করেই শাড়ির মধ্যে ফুটিয়ে তোলা হয় নানা রং।
সুক্ষ কাজে ঠাসা এই শাড়ি দেখতে ভারী লাগলেও আদতে তা খুবই হালকা। এক একটা শাড়ির ওজন মাত্র ৪৫০ গ্রাম।