ফ্লোরেনটাইন ডায়মন্ড। এ দেশের খনি থেকে উদ্ধার হওয়া বহুমূল্য হিরেগুলোর অন্যতম। আকারে এবং দামে কোহিনুরের থেকেও যা কয়েক গুণ বেশি। অথচ কোহিনুরের মতো এই মূল্যবান হিরেও হারিয়ে গিয়েছে ভারত থেকে। কোহিনুর শোভা পাচ্ছে লন্ডনের মিউজিয়ামে। কিন্তু ফ্লোরেনটাইন কোথায় আছে, কী অবস্থায় রয়েছে তা একেবারেই অজানা।
১০৫.৬ ক্যারেট কোহিনুরের ওজন ২১.১২ গ্রাম। হলুদ রঙের এই ফ্লোরেনটাইন হিরে ১৩৭.২৭ ক্যারেটের এবং ওজন ২৭.৪৫ গ্রাম। পাঁচ শতক বছর আগে নাকি গোলকোণ্ডায় এক খনি শ্রমিক খোঁজ পান এই হিরের।
দুর্মূল্য এই হিরের হাতবদলের ইতিহাস নিয়ে অনেক কিছুই কথিত রয়েছে। যেমন অনেক ইতিহাসবিদের মতে, ডিউক অফ বার্গানডি চার্লস দ্য বোল্ড যখনই যুদ্ধে যেতেন অস্ত্রশস্ত্রের সঙ্গে নিজের পছন্দের এই রত্ন সঙ্গে নিয়ে যেতেন। রত্ন তাঁর কাছে সৌভাগ্যের প্রতীক ছিল। কিন্তু ফ্লোরেনটাইন ডায়মন্ড তাঁকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। তবে চার্লসের কাছে এই হিরে কী ভাবে এল, তার কোনও তথ্য পাওয়া যায় না।
১৪৭৬ সালে ২২ জুন শত্রুর হাতে তিনি নিহত হন। তারপর এক সেনা যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর মৃতদেহের পাশে মাটিতে এই উজ্জ্বল রত্ন পড়ে থাকতে দেখেন। কাচের টুকরো ভেবে সেটা মাত্র ২ ফ্রাঁ-র বিনিময়ে ফ্রান্সে এক সুইস ব্যক্তির কাছে বেচে দেন। অবশেষে পরপর কয়েকবার হাতবদল হয়ে ফ্লোরেন্সের মেডিসি ট্রেজারিতে জায়গা পায় এই হিরে।
আবার একাংশের মতে, বিজয়নগরের রাজার কাছ থেকে এই হিরে গোয়ার পর্তুগিজ গভর্নর উপহার হিসাবে পেয়েছিলেন। সেখান থেকে হাতবদল হয়ে ফ্লোরেন্সের ডিউক ফার্দিনান্দের হাতে পৌঁছয়। এই পর্যন্ত ফ্লোরেনটাইন হিরে নিয়ে কোনও তথ্য নথিভুক্ত নয়। নথিভুক্ত তথ্য শুরু হয়েছে ফার্দিনান্দো দি মেডিসি থেকে যিনি গ্র্যান্ড ডিউক অব তাসখনি ছিলেন।
১৬৫৭ সালে গ্রান্ড ডিউক অব তাসখনির শোভাযাত্রায় এই হিরে দেখা গিয়েছিল। তারপর হাত ঘুরে তা চলে যায় ভিয়েনায়। তখনই তার মূল্য ছিল প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রিয়া সাম্রাজ্যের পতনের পর অস্ট্রিয়ার শাসক প্রথম চার্লস নিজের সঙ্গে এই হিরে সুইৎজারল্যান্ডে নিয়ে যান।
১৯১৮ সালে রয়্যাল পরিবারেরই এক ঘনিষ্ঠ মূল্যবান এই রত্ন চুরি করে নেন। তিনি দক্ষিণ আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন বলে নথিভুক্ত রয়েছে ইতিহাসে। তারপর হিরে অনেক টুকরো করে বেচে দিয়েছিলেন। সেই টুকরোগুলো কোথায় রয়েছে তার কোনও তথ্য আর পাওয়া যায়নি।
ফ্লোরেনটাইনের মতো কোহিনুরও হাতবদল হয়ে লন্ডনে পৌঁছেছিল। তথ্য অনুযায়ী, ১৮৪৯ সালে পঞ্জাব দখলের পর রণজিৎ সিংহের নাবালক ছেলে ১১ বছরের দলীপ সিংহের সঙ্গে লাহৌর চুক্তি করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সেই চুক্তিমাফিক পঞ্জাবের বালক রাজা দলীপ সিংহের কাছ থেকে উপহার হিসেবে কোহিনুর নিজেদের হেফাজতে নেয় কোম্পানি।
একপাক্ষিক এই চুক্তিতে দলীপ সিংহের কাছ থেকে প্রায় জোর করেই কেড়ে নেওয়া হয়েছিল এই হিরে, এমনটাই মত অধিকাংশ ইতিহাসবিদের। সেই কুখ্যাত লাহৌর চুক্তির তিন নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা ছিল, ‘শাহ সুজা-উল-মুলুকের কাছ থেকে রণজিৎ সিংহ যে কোহিনুর হিরে নিয়েছিলেন, সেই হিরে ইংল্যান্ডের মহারানিকে দেবেন দলীপ সিংহ।’
বর্তমানে লন্ডনে জুয়ের হাউসে কোহিনুর রাখা রয়েছে। প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মানুষ কোহিনুর দেখতে ভিড় জমান সেখানে। সম্প্রতি কোহিনুর ফেরত চেয়ে জনস্বার্থ মামলাও হয়। তবে সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলা খারিজ করে দিয়েছে।