ছবি পিটিআই
অসমের ২৬টি জেলার ১০৮৯টি গ্রাম বন্যা কবলিত। বন্যা দুর্গতে সংখ্যা চার লক্ষাধিক। দুর্যোগের জেরে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের পরীক্ষা পিছিয়ে দিল অসম উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পরিষদ৷ পরিষদের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পঙ্কজ বরঠাকুর জানান, আগামী ২১ মে পর্যন্ত নির্ধারিত পরীক্ষাগুলি স্থগিত রাখা হয়েছে৷ ধসে বিচ্ছিন্ন ডিমা হাসাও জেলায় পরীক্ষা স্থগিত থাকছে আগামী ১ জুন পর্যন্ত৷
রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সূত্রের খবর, বন্যা ও ধসে এখন পর্যন্ত ১০০৫টি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। ১৭৮টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন কমবেশি ৪০ হাজার মানুষ। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা আট। দেহ না মেলায় এখনও তিন জনকে নিখোঁজের তালিকায় রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অসমের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। টুইটে জানান, তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে পরিস্থিতির খবর নিয়েছেন।
ডিমা হাসাও জেলার অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। ধস ও হড়পা বানে বিধ্বস্ত হাফলং, নিউ হাফলং। ধসে বন্ধ জেলার সব ক’টি সড়ক। বাকি রাজ্য থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ডিমা হাসাও। পাহাড় লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১৮টি ট্রেন বাতিল ও ১০টির যাত্রা শর্ট টার্মিনেটেড করা হয়েছে। ধসে বিচ্ছিন্ন ডিমা হাসাওয়ে পণ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে৷ কিন্তু বাজারে আনাজ তো বটেই এমনকি, আলুরও আকাল। আজ থেকে রান্নার গ্যাসও অমিল৷ জেলার মজুত ফুরিয়ে গিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ দিন ফের ডিমা হাসাও পরিদর্শনের উদ্দেশে রেরিয়েছিলেন তফসিলি জাতি উন্নয়ন মন্ত্রী যোগেন মোহন৷ কিন্তু গত কালের মতোই আজও ধসে রাস্তা বিচ্ছিন্ন থাকায় মাইবাঙ থেকে ফিরতে হয় তাঁকে৷ মন্ত্রী ঘোষণা করেন, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে চার লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে৷ বেশি ক্ষতিগ্রস্তেরা পাবেন এক লক্ষ টাকা করে৷ সামান্য পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে যাঁদের, তাঁদের দেওয়া হবে পরিবার পিছু ৩০,৮০০ টাকা৷
দুর্যোগে রেললাইনের যা অবস্থা, কবে তা ফের চলাচলের যোগ্য হয়ে উঠবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল৷ গত কালই সেনাবাহিনীর সাহায্যে লামডিঙে পৌঁছন হয়েছে৷
ডিমা হাসাওয়ের মতো বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অসমের বরাক উপত্যকা, ত্রিপুরা, মিজোরামও৷ ডিমা হাসাওয়ে রেললাইন বিপর্যস্ত, মেঘালয়ের উপর দিয়ে সড়কপথে চলাচল বন্ধ৷ হোজাই ও কাছাড় জেলাতেও বন্যার চেহারা ভয়াবহ। কাছাড়ের বরখোলায় মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। বৃষ্টির জেরে গুয়াহাটির বিস্তৃর্ণ এলাকা, সোনাপুরের একাংশ জলমগ্ন।
অসমের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন মুখ্যসচিব জিষ্ণু বরুয়া। পরে তিনি জানান, গুয়াহাটি থেকে হাফলং পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ যত দ্রুত সম্ভব চালু করতে জাতীয় হাইওয়ে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।