মোদী-মমতা দ্বৈরথ। ফাইল চিত্র।
তাঁর গোয়া যাত্রার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈরথ জমে উঠল নরেন্দ্র মোদীর। মমতার আক্রমণের লক্ষ্য দশ বছরের বিজেপি শাসনে গোয়ার মানুষের ‘ভোগান্তি’। আর মোদীর দাবি— একমাত্র ‘ডবল ইঞ্জিন’ই (কেন্দ্র ও রাজ্যে একই সরকার) উন্নয়ন ঘটাতে পারে গোয়ায়।
আগামী ২৮ অক্টোবর গোয়া যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। এ দিন সে কথা জানিয়ে শনিবার টুইট করে মমতা বলেছেন, ‘দশ বছরের বেশি সময় ধরে গোয়ার মানুষ অনেক ভুগছেন। আমরা সরকার গড়ে গোয়ায় নতুন ভোর আনব। মানুষের সরকার গড়ব। সেই সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে সেই সরকার।’ আবার এ দিনই ‘আত্মনির্ভর ভারত স্বয়ংপূর্ণ গোয়া’ প্রকল্পে একটি ভিডিয়ো কনফারেন্স উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘‘কেন্দ্রের সঙ্গে গোয়াতেও ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার চালিয়ে যাওয়া জরুরি। কেন্দ্রের ও রাজ্যের উন্নয়নের সবরকম সুযোগ সুবিধা নিতে পারলেই গোয়া ‘স্বয়ংপূর্ণ’ হতে পারবে। গোয়াতে প্রাণশক্তিতে ভরপুর নেতৃত্ব দরকার।’’
গোয়া সফরের কথা জানিয়ে নিজের লক্ষ্য স্পষ্ট করে এ দিনের টুইট- বার্তায় সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের কথা লিখেছেন মমতা। তিনি বলেছেন, ‘বিভাজনের রাজনীতিকে পরাস্ত করতে বিজেপি- বিরোধী সব ব্যক্তি, সংগঠন ও দল একযোগে আসুক।’ তবে এ দিনও কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেস যেনতেন ভাবে মমতাকে হারাতে চেয়েছে। সে জন্য কখনও সিপিএম, কখনও আইএসএফের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।’’
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস সম্পর্কে তৃণমূলের চূড়ান্ত অবস্থান ঠিক কী হতে চলেছে? সেক্ষেত্রে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট গড়ার বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। এ নিয়েই তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘বিজেপি- বিরোধী দলগুলি যাতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে, সেই জন্য কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বলছে তৃণমূল।’’ অভিষেকের আক্রমণ প্রসঙ্গে অধীর বলেন, ‘‘বিজেপিকে হারাতে চাইলে তৃণমূল তাদের বিরুদ্ধে কথা বলত। মোদী- দিদি চুক্তি হয়েছে— দিল্লি আমার, কলকাতা আমার। তাই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কথা বলছে তৃণমূল।’’
এ দিন গোসাবা ও খড়দহ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রচারে এসে দুটি সভাতেই কংগ্রেসকে বিঁধেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপিকে হারাতে পারেন একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেসের দ্বারা তা হবে না।’’ জবাবে তৃণমূলনেত্রীকে নিশানা করে অধীর বলেন, ‘‘বিরোধীরা একজোট হলে বিপদ। তাই মোদীর রণকৌশল হল, দালাল ধরতে হবে। যাতে বিরোধীদের জোট না হয়ে যায়। অন্যতম দালাল হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি গোয়া যাচ্ছেন। খুশি কে হচ্ছেন? নরেন্দ্র মোদী।’’
গত বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হলেও খড়দহ ও গোসাবার দুই তৃণমূল প্রার্থী মারা যান। সেই দুই কেন্দ্রে দলের প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং সুব্রত মণ্ডলের হয়ে এ দিন দুটি সভা করেন অভিষেক। সভায় তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল এখন আর দার্জিলিং থেকে কাকদ্বীপের দল নেই। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত আওয়াজ উঠেছে দেশ কা নেত্রী ক্যায়সি হো, মমতাদিদি য্যায়সি হো। এই দুটি কেন্দ্র থেকে আপনারা তৃণমূল প্রার্থীদের জিতিয়ে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে দিন।’’ তাঁর ঘোষণা, ‘‘ত্রিপুরা ও গোয়ায় বিজেপিকে হারিয়ে তৃণমূলই সরকার গড়বে। এ ছাড়া আরও পাঁচ রাজ্যে সংগঠন বিস্তারের কাজ শুরু করবে।’’
তৃণমূলের এই লক্ষ্য নিয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর কটাক্ষ, ‘‘এই প্রতিভা শুধু দেশের মধ্যে আটকে থাকবে কেন! গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হোক। রাজনৈতিক দলের অগ্রগতি বাণিজ্যিক ঢঙের স্লোগানে হয় না।’’