ভারতের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে সু-স্বাদ। প্রতিটি রাজ্যেই খাবারে তারতম্য রয়েছে। স্বাদের তারতম্যের জন্যই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রান্তে প্রচুর রেস্তরাঁ গড়ে উঠেছে। তাদের কোনওটা আবার পসার জমাতে শুরু করেছে স্বাধীনতার অনেক আগে থেকে।
এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু দেশীয় রেস্তোরাঁর সন্ধান রইল যা ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো।
পুরনো দিল্লির জামা মসজিদের কাছে ঐতিহ্যশালী রেস্তোরাঁ করিম’স হোটেল। ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১-এর এপ্রিলে দিল্লির বাইরে পা রেখেছে রেস্তরাঁটি। বেঙ্গালুরুতেও একটি শাখা খুলেছে। বিভিন্ন ধরনের কাবাব, পোলাও, নান, মাংসের নানা পদ এখানে পাবেন। শেষ পাতে ক্ষীর বেনজির সত্যিই নজিরবিহীন।
মুঘল সম্রাটের হেঁসেল সামলাতেন মহম্মদ আজিজ। তিনি ছিলেন প্রধান রাঁধুনি। তাঁরই বংশধরের রেস্তোরাঁ এটি। তাই রান্নার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে শাহি ব্যাপারটা। শোনা যায়, বাহাদুর শাহ জাফরের মৃত্যুর পর মহম্মদ আজিজ দিল্লি ছেড়ে মেরঠ চলে যান। পরে সেখান থেকে গাজিয়াবাদে চলে যান।
১৯১১ সালে রাজা পঞ্চম জর্জের রাজ্যাভিষেকের সময় আজিজের এক ছেলে হাজি করিমউদ্দিন অভিনব পরিকল্পনা নিয়ে দিল্লি ফিরে আসেন। দিল্লিতে মুঘল ধাবা খোলেন তিনি। আলু গোস্ত (আলু আর খাসির মাংসের পদ) এবং ডাল এই দুটো পদ বিক্রি করতে শুরু করেছিলেন রুমালি রুটির সঙ্গে। এর দু’বছর পর ১৯১৩ সালে জামা মসজিদের কাছে করিম হোটেল গড়ে তুলেছিলেন।
খাবারের শাহি স্বাদের জন্য প্রথম থেকেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে রেস্তরাঁটি। ১৯৯০ সালে প্রথম শাখা খোলে পশ্চিম নিজামুদ্দিনে, তার পর কৈলাস কলোনি, নয়ডা, গুরুগ্রাম, কমলা নগর, দ্বারকাতেও শাখা খোলে। এখন মহম্মদ আজিজের চতুর্থ বংশধর এই রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন।
টুন্ডে কেবাবি। লখনউয়ে ১৯০৫ সালে গড়ে উঠেছিল রেস্তোরাঁটি। এর মূল পদ টুন্ডে কে কাবাব। একে বাফেলো মিট গলৌটি কাবাবও বলা হয়। শোনা যায়, অযোধ্যার রাজা ওয়াজিদ আলি শাহের পছন্দের পদ ছিল এটি।
লখনউ শহরে পা রাখলেই গলৌটি কাবারের সুগন্ধ আপনাকে এই রেস্তরাঁয় টেনে নিয়ে যাবে। গোমাংস, দই, গরম মশলা, আদা, রসুন, দারুচিনি, এলাচ, ঘি, শুকনো পুদিনা পাতা, পেঁয়াজ, ভিনিগার, কেশর, গোলাপ জল, লেবু, চিনি-সহ মোট নাকি ১৬০ রকম মশলা দিয়ে তৈরি হয় এই কাবাব।
দার্জিলিঙের গ্লেনারি। সেই ব্রিটিশ যুগ থেকেই ব্রেকফাস্টের জন্য জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ এটি। দার্জিলিং ম্যাল রোডে অবস্থিত এই রেস্তোরাঁ দার্জিলিঙের ল্যান্ডমার্ক। ভাদো নামে এক ইটালীয় প্রথম এই বেকারি এবং রেস্তরাঁ চালু করেন। এখনও রেস্তরাঁর প্রতিটি কোনায় ব্রিটিশ ছাপ স্পষ্ট।
শেখ ব্রাদার’স। ১৮৮০ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলির বাসিন্দা শেখ গুলাম ইব্রাহিম গুয়াহাটির উজান বাজারে পৌঁছন। তাঁর পিছু পিছু দুই ভাইও সেখানে পৌঁছন। অসমে তখন কোনও বেকারি ছিল না। অসমের মানুষের কাছে কেক মানে ছিল চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি পিঠে। শেখ গুলামই অসমের মানুষের সঙ্গে কেক, পাউরুটির পরিচয় করালেন।
১৮৮৫ সালে তিন ভাই মিলে চালু করলেন শেখ ব্রাদার’স বেকারি। নয়ের দশকে অসমবাসীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই বেকারি। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৯০৫ সাল নাগাদ ঘোড়ার গাড়ি করে শেখ ব্রাদার’স-এর বেকারি থেকে নিত্য খাবার যেত শিলং-এ। ১৯৫০ সালে অসমের সার্কিট হাউসে জওহরলাল নেহরু সেখ ব্রাদার’স-এর চিজ স্ট্র খেয়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। অসমের পান বাজারে শেখ গুলামের বংশধরেরা এখন এটি চালাচ্ছেন।
মু্ম্বইয়ের লিওপোল্ড ক্যাফে অ্যান্ড স্টোরস। মুম্বইয়ের কোলাবায় রয়েছে এই ক্যাফে। ১৫০ বছরের পুরনো এই ক্যাফে ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার পর প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে দিন এখানেই প্রথম হামলা হয়েছিল। হামলার আগে মূলত বিদেশিরাই এখানে যেতেন। হামলার পর ভারতীয়দের মধ্যেও সেটি জনপ্রিয় হয়। হামলার স্মৃতি হিসাবে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত অংশ আজও মেরামত করেননি কর্তৃপক্ষ।
১৮৭১ সালে ইরান থেকে ভারতে আসা একদল ইরানি এই ক্যাফে চালু করেছিলেন। প্রথম রান্নার তেল বিক্রির দোকান হিসাবেই আত্মপ্রকাশ করেছিল এই দোকান। পরবর্তী কালে সেটি খাদ্যপ্রিয় মানুষের পছন্দের ঠিকানা হয়ে ওঠে।
১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পুণের রেস্তোরাঁ দোরাবজি অ্যান্ড সনস। পার্সি খাবারের জন্য জনপ্রিয় এই রেস্তরাঁ। মটন পায়া, ধনশাক এখানের জনপ্রিয় পদ। ১৪৩ বছর আগে সোরাবজি দোরাবজি প্রথম একটি চায়ের দোকান খুলেছিলেন। পরে সেটিই হযে ওঠে পার্সি রেস্তোরাঁ।
ইলাহাবাদের হরিরাম অ্যান্ড সন্স। ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। ইলাহাবাদের সবচেয়ে ভাল জলখাবারের ঠিকানা এটিই। সবচেয়ে জনপ্রিয় এর গরম শিঙারা।