প্রতীকী ছবি।
নভেম্বরের পরেও বিনামূল্যে বাড়তি রেশন মিলবে কি— এখনও তার উত্তর নেই। এ দিকে সরকারি গুদামে ধান-গম রাখার জায়গা নেই। জোর কদমে খরিফ চাষের ধান কেনা চলছে। সেই ধান কোথায় রাখা হবে, তা ভেবে সরকারি কর্তাদের মাথায় হাত। এই পরিস্থিতিতে সরকারি গুদামের অতিরিক্ত চাল ইথানল তৈরির জন্য ডিস্টিলারিগুলোর কাছে বেচে দেওয়ার চেষ্টা নতুন করে শুরু হয়েছে।
এপ্রিল মাসে এফসিআই (ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া)-কে সরকার জানিয়েছিল, সরকারি গুদামে রাখার জায়গা না-থাকলে বাড়তি চাল তারা ইথানল প্রস্তুতকারী ডিস্টিলারি সংস্থাগুলোর কাছে বেচে দিতে পারে। বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন, লকডাউনের পরে রুটিরুজি হারানো গরিবদের মধ্যে চাল-গম বিলি না-করে সরকার তা মদ তৈরির জন্য বেচে দিচ্ছে। সরকারের সাফাই ছিল, মদ নয়। ওই ইথানল থেকে অতিমারি মোকাবিলায় নিত্য-প্রয়োজনীয় সামগ্রী হয়ে ওঠা স্যানিটাইজ়ার তৈরি হবে। ইথানল পেট্রলের সঙ্গে মিশিয়ে তেল আমদানির খরচ কমানো হবে। কিন্তু তার পরেও রাজনৈতিক ভাবে ভুল বার্তা যাবে ভেবে, সেই সিদ্ধান্ত শিকেয় তুলে রাখা ছিল। সরকারি সূত্রের খবর, এখন উপায় নেই দেখে ফের সেই চেষ্টা শুরু হয়েছে।
বিরোধীদের প্রশ্ন— সরকারি গুদামে যখন চাল-ডাল উপচে পড়ছে, তখন এত দিন কেন আরও বেশি করে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হয়নি? লকডাউনের পরে মোদী সরকার বাড়তি রেশন হিসেবে বিনামূল্যে মাথা পিছু ৫ কেজি করে চাল বা গম ও পরিবার পিছু ১ কেজি করে ডাল বিলির ঘোষণা করেছিল। খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-র অন্তর্ভুক্ত ৮০ কোটি পরিবার এমনিতেই সস্তায় রেশন পান। তার সঙ্গে বিনামূল্যে এই বাড়তি রেশন দেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, নভেম্বরে সেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে বিনামূল্যের বাড়তি রেশন মিলবে কি না, তার জবাব নেই। সিপিএম নেতা নীলোৎপল বসুর প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় সরকার ডিসেম্বর থেকে কেন ৫ কেজির বদলে বাড়তি ১০ কেজি করে বিনামূল্যে রেশন বিলি করছে না?
এফসিআই ও রাজ্যের সংস্থাগুলির গুদামে প্রায় ৭৫২ লক্ষ টন খাদ্যশস্য মজুত রাখার ক্ষমতা রয়েছে। বিপদআপদের কথা ভেবে ‘বাফার স্টক’ হিসেবে সরকারের কাছে ৩০৭ লক্ষ টন খাদ্যশস্য রাখার কথা। কিন্তু ১ অক্টোবরের হিসেবে গুদামগুলিতে প্রায় ৬৩০ লক্ষ টন খাদ্যশস্য রয়েছে। এর মধ্যে চালই রয়েছে ১৯৩ লক্ষ টন। ‘বাফার স্টক’ হিসেবে ১০২ লক্ষ টন চাল থাকলেই চলে।
এরই মধ্যে কৃষি মন্ত্রক জানিয়েছে, খরিফ মরসুমে জোর গতিতে ধান কেনা চলছে। ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ২৮৬ লক্ষ টন ধান কেনা হয়ে গিয়েছে। কৃষি বিল আনার পরে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, মোদী সরকার সমর্থন মূল্য দিয়ে চাষিদের থেকে ধান-গম কেনা বন্ধ করে দিচ্ছে। তা ভুল প্রমাণ করতে কেন্দ্র এই মরসুমে প্রায় ৪৯৫ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্য নিয়েছে। পঞ্জাবে কৃষি বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। তাই সেখান থেকে আরও বেশি ধান কেনা হচ্ছে।
এতেই মাথায় হাত এফসিআই কর্তাদের। তাঁদের বক্তব্য, জানুয়ারি মাসের পরে তো গুদাম উপচে পড়বে। সরকার যদি নভেম্বরের পরেও গরিবদের জন্য বাড়তি রেশন দেয়, তা হলেও গুদামে ধান-গম রাখার জায়গা থাকবে না। এফসিআই কর্তাদের আশা, ডিস্টিলারিগুলি রাজি হলে গুদাম থেকে অন্তত ১০০ লক্ষ টন চাল বেচে দেওয়া যাবে।