প্রতীকী ছবি।
কৃষক সংগঠনগুলি ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টির দাবি তোলায় কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি ছিল, সব ফসল কিনতে হলে সরকারের ১৭ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের অর্ধেক অর্থ ফসল কিনতেই খরচ হয়ে যাবে। আজ কৃষক সংগঠনগুলির মঞ্চ সংযুক্ত কিসান মোর্চা অভিযোগ তুলল, সরকার এ সব বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সরকারের ঘাড়ে বিপুল আর্থিক বোঝা চাপবে বলে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। আসলে ফসলের ন্যূনতম দামের গ্যারান্টি দিতে সরকারের এর থেকে অনেক কম খরচ হবে।
তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের মন্ত্রীদের কথাবার্তার ফাঁকে এক বার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও কৃষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। সেই সময় থেকেই কৃষক নেতারা দাবি তোলেন, এমএসপি-র আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে। কারণ, তিন কৃষি আইন এনে সরকার আসলে ভবিষ্যতে এমএসপি তুলে দিতে চাইছে। কৃষক নেতাদের দাবি, সে সময়ই শাহ বলেছিলেন, সরকার ২৩টি ফসলের এমএসপি ঘোষণা করে। কিন্তু খাদ্য সুরক্ষা আইন মেতাবেক, রেশনে বিলির জন্য সরকার মূলত চাল-গম, কিছু পরিমাণে ডাল কিনে থাকে। সরকার যদি ২৩টি ফসল এমএসপি-তে কিনতে যায়, তা হলে বছরে ১৭ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে। সরকারের বাজেটই ৩৪ লক্ষ কোটি টাকার মতো।
কিসান মোর্চার অন্যতম নেতা যোগেন্দ্র যাদবের যুক্তি, ‘‘আজই কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে জানিয়েছে, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে কর্পোরেট সংস্থার ৪৬ হাজার ৩৮২ কোটি টাকার ঋণ কার্যত মকুব করে দিয়েছে বা ব্যাঙ্কের ঋণের হিসেবের খাতা থেকে মুছে দিয়েছে। মোটামুটি এই পরিমাণ অর্থই বছরে এমএসপি দিতে অতিরিক্ত খরচ হত। কিন্তু তার জন্য সরকারের বাজেটে অর্থ নেই।’’ যোগেন্দ্রর অভিযোগ, এটা অগ্রাধিকারের প্রশ্ন। কর্পোরেট না কৃষক? উল্টো দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, চাষিদের চাল-গম কিনতে কেন্দ্রের এখনই ২.৫ লক্ষ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়।
কেন্দ্রীয় সরকার প্রথমে এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টির প্রশ্ন একেবারেই খারিজ করে দিয়েছিল। কিন্তু কৃষকদের সঙ্গে সঙ্গে দর কষাকষির সময় লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতেও রাজি হয় যে, এমএসপি বজায় থাকবে। কিন্তু চাষিরা এমএসপি পাবেনই, তার আইনি গ্যারান্টি দিতে কেন্দ্র এখনও তৈরি নয়। তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের পরে কৃষক সংগঠনগুলি এ বার এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টির দাবি তুলেছে। আজ কংগ্রেস-সহ সব বিরোধী দলও সংসদে সেই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে। বিরোধীরা এই দাবিতে সংসদে সরব হতে চাইছে।
কৃষি মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, সরকার ২৩টি ফসলের এমএসপি ঘোষণা করে। তার মধ্যে সাতটি হল ধান, গম, ভুট্টার মতো খাদ্যশস্য। পাঁচ রকম ডাল, সাতটি তৈলবীজ ও বাকি সাতটি আখ, পাটের মতো বাণিজ্যিক ফসল। এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি দিতে হলে বেসরকারি সংস্থাকে এমএসপি-তে ফসল কিনতে বাধ্য করতে হবে। অথবা বেসরকারি সংস্থা এমএসপি-র তুলনায় কম দামে ফসল কিনলে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করতে হবে।