গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কৃষি আইন নিয়ে এ বার সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুললেন মহুয়া মৈত্র। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার ও কৃষকদের মধ্যে অচলাবস্থা কাটানোর জন্য চার সদস্যের যে কমিটি গড়েছে শীর্ষ আদালত, বরাবর কৃষি আইনের সমর্থনেই গলা ফাটাতে দেখা গিয়েছে তাঁদের প্রত্যেককে।
কেন্দ্রীয় সরকার ও আন্দোলনকারী কৃষকদের মধ্যে অচলাবস্থা কাটানোর জন্য সোমবার শীর্ষ আদালত কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করতেই টুইটারে ফুঁসে ওঠেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া। তিনি লেখেন, ‘কৃষকদের ন্যায্য বিচার পাইয়ে দেওয়ার যে ভান চলছে, সুপ্রিম কোর্ট ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করার পরই তা নিয়ে যাবতীয় বিভ্রান্তি ভেঙে গিয়েছে। ওই চার জনের রেকর্ড দেখুন। এটা পক্ষপাতিত্ব নয় তো কী’!
মহুয়া আরও লেখেন, ‘আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যা বুঝলাম, ২ মাস অতিরিক্ত সময় পাওয়া গেল, কৃষকদের বাড়ি পাঠানোর ফন্দি, যাতে কোণঠাসা অবস্থা থেকে সরকারকে ফিরিয়ে আনা যায় এবং শেষ মেষ কমিটির রিপোর্ট এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেবে। তত দিনে আন্দোলনের গতিই হারিয়ে যাবে’।
কৃষি অর্থনীতিবিদ অশোক গুলাটি, ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন(মান)-এর সভাপতি ভূপিন্দর সিংহ মান, শেতকরি সংগঠনের সভাপতি অনিল ঘানওয়াত এবং ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রমোদকুমার জোশীকে নিয়ে সোমবার ওই কমিটি গঠন করে শীর্ষ আদালত। কৃষি আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষপাতিত্ব বোঝাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কৃষি আইন নিয়ে ওই ৪ জনের মতামতও তুলে ধরেন মহুয়া, যেখানে প্রত্যেকেই সরকারি সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
এর মধ্যে, কৃষিকাজকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ কৃষকদের, তা নিয়ে সাফাই দিতে দেখা গিয়েছিল অশোক গুলাটিকে। অক্টোবরের শুরুতে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে অশোক লেখেন, ‘কৃষিকাজে কর্পোরেট বিনিয়োগ বাড়লে, ফসল মজুতেও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। ফসল নষ্ট হওয়া বন্ধ হবে, দাম পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তাও কাটবে’। কেন্দ্রীয় আইনকে ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক সংস্কারের সঙ্গেও তুলনা করেন তিনি। যদিও এই আইন যাতে সুষ্ঠু ভাবে কার্যকর হয়, তা নিয়ে সতর্কও করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: নতুন ৩ কৃষি আইনই স্থগিত করে দিল সুপ্রিম কোর্ট, রফার খোঁজে কমিটি
বাকি তিন জনকেও নানা সময়ে কৃষি আইনের পক্ষে সরব হতে দেখা যায়। ভূপিন্দর যুক্তি দেন, ‘কৃষিকাজকে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে সংশোধন জরুরি’। কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরের সঙ্গে দেখা করে কৃষি আইনে সমর্থন জানাতে দেখা যায় তাঁর সংগঠনকেও। আইনে সংশোধন ঘটানোর পক্ষে মত দিলেও আপাতত কৃষি আইনটি স্থগিত রাখা উচিত বলে সম্প্রতি নিজের মতামত জানিয়েছিলেন অনিল। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্দেশই দিয়েছে। কৃষকরা বিভ্রান্ত বলে সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে লিখেছিলেন প্রমোদ।
তাই শুধু মহুয়াই নন, কমিটির সদস্য বাছাই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সব মহলেই। কৃষকদের অধিকার রক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন যে রমনদীপ সিংহ মান, তিনি বলেন, ‘‘কৃষি আইনের কমিটিতে অশোক গুলাটিকে রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। উনি তো কৃষি আইনের সমর্থক হিসেবেই পরিচিত! তার উপর আবার ভূপিন্দর সিংহ মান। একেবারে ভুল সিদ্ধান্ত। কৃষকদের সমস্যা তুলে ধরারই তো কেউ নেই! আমরা এই সিদ্ধান্ত মানছি না। আইন প্রত্যাহার করলে তবেই আন্দোলন উঠবে।’’
গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীর উপকণ্ঠে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়া কৃষকরাও শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্ত মানতে রাজি নন। কোনও কমিটির সঙ্গে কথা বলবেন না, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। তার পরেও এ দিন সুপ্রিম কোর্ট কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পঞ্জাব ফার্মার্স ইউনিয়নের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত মানছি না আমরা। কমিটির চার সদস্যই কেন্দ্রের সমর্থক। শুরু থেকে এই আইনের পক্ষে সওয়াল করে এসেছেন। আমাদের ধারণা, কেন্দ্রীয় সরকারই সুপ্রিম কোর্টকে দিয়ে এই কমিটি তৈরি করাচ্ছে। কমিটি গড়ে নজর ঘোরানোর চেষ্টা চলছে।’’ কমিটির সদস্য পরিবর্তন করা হলেও, কোনও রকম আলোচনায় যাবেন না এবং আইন প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: গোলাপি কাঞ্জিভরম, শাঁখা-পলা-সিঁদুরে দক্ষিণেশ্বরে নুসরত, ফ্রেমে যশ ও মদন
মাস চারেক আগে পঞ্জাবে কৃষি আইন বিরোধী আন্দোলন মাথাচাড়া দেওয়ার সময় থেকেই আন্দোলনকারীদের পাশে রয়েছেন প্রখ্যাত লেখকর আমন বালি। তাঁর মতে, ‘কমিটির গড়ে চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে নিজেদের দূরে রেখে একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষক সংগঠনগিলি। কারণ কমিটির ওই ৪ সদস্যই সরকারি নীতির ঘোর সমর্থক হিসেবে পরিচিত।’’
যুব কংগ্রেসের নেতা শ্রীবাস্তব টুইটারে লেখেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের কমিটিতে নিযুক্ত ৪ সদস্য প্রকাশ্যে কৃষি বিলকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এই ধরনের কমিটি গড়ার দরকারই বা কী? কেন্দ্র কি সুপ্রিম কোর্টকে সদস্যদের নামও ধরিয়ে দিয়েছিল? গোটা ম্যাচটাই ফিক্সড।’
আগামী দু’মাসের মধ্যে ওই কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তার ১০ দিনের মধ্যে এ নিয়ে প্রথম আলোচনা বসবে বলে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।