আন্দোলন দীর্ঘ হবে ধরে নিয়ে রাস্তার ধারে ঘর ৈতরি করছেন কৃষকেরা। শনিবার টিকরি সীমানায়। ছবি: পিটিআই
হাড় কাঁপানো শীত উধাও। আগুনে গরমের দিন আসছে। এই অবস্থায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় কৃষকেরা আরও দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। উত্তর ভারতের তীব্র গরম থেকে নিজেদের বাঁচাতে দিল্লি লাগোয়া টিকরি, সিংঘু-তে এ বারে অনেক জায়গায় ইটের পাকা ঘর তৈরি করছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বিজেপি সরকারের পুলিশ-প্রশাসন এ কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে সফল না হয়ে এখন মামলার পথে হাঁটছে।
চার মাস আগে দিল্লি সীমানায় যখন আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন সবে শীত পড়তে শুরু করেছে। এই অবস্থায় অস্থায়ী ছাউনি বানিয়ে বা ট্র্যাক্টরে ত্রিপল চাপা দিয়েই শীত মোকাবিলা করে আন্দোলন করছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু সামনে যে প্রবল গরমের দিন আসতে চলেছে! দিল্লি লাগোয়া উত্তর ভারতের প্রবল গরমের মধ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সহজ নয়। এপ্রিল-মে মাসে ওই সব এলাকায় বেলার দিকে রীতিমতো লু বইতে শুরু করে। সে সময় তাঁবুতে বা ট্র্যাক্টরে ত্রিপল টাঙিয়ে থাকা সহজ নয়। এই অবস্থায় দিল্লি-হরিয়ানা সীমানার আন্দোলনস্থল টিকরির বাহাদুরগড় জাতীয় সড়কের ধারে রীতিমতো ইটের পাকা ঘর বানাচ্ছেন কৃষকেরা। সিংঘুতেও আন্দোলনস্থলে এই ধরনের পাকা কাঠামো তৈরি করছেন তাঁরা। সূত্রের খবর, একেকটি এই ধরনের কাঠামো তৈরি করতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাগছে। সেই টাকাও নিজেদের মধ্যে থেকেই জোগাড় করছেন কৃষকরা। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয়েছে হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার। আন্দোলনস্থলে কৃষকদের পানীয় জলের জন্য নলকূপ খনন বা গরম থেকে বাঁচতে পাকা ঘর তৈরির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে পুলিশের তরফে।
দিল্লি সীমানায় প্রস্তুতি জোরদার করার পাশাপাশিই দেশজুড়ে মহাপঞ্চায়েত ডেকে তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন কৃষক নেতারা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও এই আন্দোলন নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কৃষি আইন নিয়ে এমপি-রা আলোচনা করায় ক্ষুব্ধ ভারত। ইতিমধ্যেই সে দেশের হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়ে প্রতিবাদও জানিয়েছেন বিদেশ সচিব। কিন্তু তাতে চুপ থাকতে নারাজ ব্রিটেনের লেবার পার্টির ভারতীয় বংশোদ্ভুত এমপি তনমনজিৎ সিংহ ঢেসি। কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে পার্লামেন্টের ভিতরে-বাইরে সমান ভাবে সরব ঢেসি একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন শিখরা লঙ্গর চালিয়ে মানুষকে খেতে দিলে ভাল, কিন্তু তাঁরা প্রতিবাদে সুর চড়ালেই খলিস্তানি বলে দাগিয়ে দেওয়াটা যন্ত্রণার। পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বা কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ নিয়েও সরব ঢেসির প্রশ্ন, ‘‘আমরা যদি অন্যের অধিকার নিয়ে সরব না হই, তা হলে রাজনীতি বা সংবাদ জগতে আমাদের ভূমিকাটা ঠিক কী!’’