বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইনের পক্ষে সওয়াল করলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ছবি: সংগৃহীত।
দিল্লির গাজিপুর এবং সিংঘু সীমানা যখন কৃষক আন্দোলনে উত্তাল, তখন সংসদের সেন্ট্রাল হলে লালকেল্লা-কাণ্ডের নিন্দা করলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। সেই সঙ্গে বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইনের পক্ষে সওয়াল করতেও দেখা গেল তাঁকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই কৃষি আইনকে কেন্দ্র করেই আজ রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা বয়কট করেছে ১৯টি বিরোধী দল। গত কাল মনস্থির করতে না পারলেও আজ শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের বয়কটে যোগ দিয়েছেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এই পরিস্থিতিতে লালকেল্লার হামলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মোদী সরকার বুঝিয়ে দিল, অধিবেশনের আগামী দিনে এই বিষয়টিকে ঘিরে তারা পাল্টা চাপ বাড়াবে কংগ্রেস, তৃণমূল, এসপি-সহ বিরোধী শিবিরের উপর।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তৃতায় কৃষি ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের বিভিন্ন যোজনাগুলির বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং প্রশংসা করার মাঝেই বলেন, ‘আমার সরকার গণতন্ত্র এবং সংবিধানের পবিত্রতা সম্পর্কে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিয়ে চলে। তিনটি কৃষি আইন নিয়ে ক্রমাগত ভুল বোঝানোর চেষ্টা চলছে। আমার সরকার সর্বদাই বাকস্বাধীনতাকে সম্মান দিয়ে এসেছে। গণতান্ত্রিক কাঠামোয় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সমস্যা নেই। কিন্তু প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো মর্যাদাপূর্ণ দিনে যে ভাবে জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হল, তা দুর্ভাগ্যজনক।’ তাঁর কথায়, ‘আমার সরকার এটা স্পষ্ট করে দিতে চায় যে, এই তিনটি আইন আনার ফলে এত দিন যে সুযোগ-সুবিধাগুলি ছিল, তা কোনও ভাবেই লঙ্ঘিত হবে না। বরং সরকার কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে কৃষকদের সামনে নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা এনে তাঁদের শক্তিশালী করবে।’
সংসদে আগামী দিনে কৃষি আইন নিয়ে সংঘাত যে তুঙ্গে উঠবে, তা আজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে ২০২২ সালের বিধানসভা ভোটের অন্যতম বড় বিষয় যে এটা হয়ে উঠতে চলেছে, তা আঁচ করেই আজ শেষ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন মায়াবতী। একই পথে হাঁটেন এসপি নেতা অখিলেশও। পাশাপাশি তিনি পুরো শক্তি নিয়ে কৃষক ইউনিয়নের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন আজ। শুধু অখিলেশ নন, আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধরিও আজ গাজিপুর সীমানায় গিয়ে রাকেশ টিকায়েতের সঙ্গে দেখা করেছেন।
আজ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধী নেতারা তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে চলা প্রতিবাদ এবং অশান্তি নিয়ে আলোচনা দাবি করেন। সূত্রের খবর, স্পিকার তাঁদের বলেছেন, রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপর বিতর্ক চলবে ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সে সময় বিরোধীরা এই বিষয়গুলি তুলতে পারেন। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপর বিতর্কের জবাব ৫ ফেব্রুয়ারি দেবেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকে সর্দল বৈঠক হবে। সেখানেও বিষয়টি তুলতে পারেন তাঁরা।
এর মধ্যেই আজ এনডিএ-র জোট সঙ্গী রাজস্থানের রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টি (আরএলপি)-ও সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। সেন্ট্রাল হলে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার সময়ে সরব হন আরএলপি সাংসদ হনুমান বেনিওয়াল। তাঁকে দেখা যায় পোস্টার হাতে কৃষি আইনের প্রতিবাদে চিৎকার করতে। পিন পতনের নীরবতায় ভাষণ পড়ছিলেন রাষ্ট্রপতি। হনুমানের চিৎকার শুনে তাঁর দিকে ঘুরে তাকাতে দেখা যায় সরকারের শীর্ষ নেতাদের। আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহও কৃষি আইন বিরোধী স্লোগান দেন সংসদ চত্বরে।