কৃষকদের ডাকা ভারত বন্ধকে প্রায় ২৪টি রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছিল। ছবি: পিটিআই।
কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষক সংগঠনগুলির বন্ধকে সমর্থনের পরে এ বার বিরোধী দলের নেতারা রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করতে যাচ্ছেন। সেই সূত্র ধরেই সাম্প্রতিক অতীতে এই প্রথম বিরোধী দলের নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠকেও বসছেন।
বুধবার ২৪টি রাজনৈতিক দলের হয়ে পাঁচ জন প্রতিনিধি রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করবেন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, এনসিপি-প্রধান শরদ পওয়ার ছাড়াও ওই প্রতিনিধি দলে থাকবেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের ডি রাজা এবং ডিএমকে-র টি কে এস এলানগোভান। আজ পওয়ার বলেন, ‘‘যে সব রাজনৈতিক দল কৃষি আইনের বিরোধিতা করছে, তারা নিজেদের মধ্যে বসে, আলোচনা করে, কৃষি আইনের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেবে। তার পরেই তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিকেল পাঁচটায় দেখা করবে।’’
কৃষকদের ডাকা ভারত বন্ধকে প্রায় ২৪টি রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছিল। এই ২৪টি দলের তরফেই এ বার রাষ্ট্রপতির কাছে কৃষি আইন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হবে। এই ২৪টি দলের মধ্যে তৃণমূলও রয়েছে। তবে প্রাথমিক ভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে যে পাঁচ জন যাবেন, বলে ঠিক হয়েছে, তার মধ্যে তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি থাকছেন না।
আরও পড়ুন: ট্রাক্টর নিয়ে ঢুকব প্রজাতন্ত্র দিবসের কুজকাওয়াজে, হুঙ্কার কৃষক নেতার
আরও পড়ুন: অমিত শাহের পুলিশের হাতে কি গৃহবন্দি কৃষক সমব্যথী কেজরী
তৃণমূল সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, কোভিড অতিমারির বিধিনিষেধের জন্যই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মাত্র পাঁচ জন দেখা করতে যাবেন। কে যাবেন, কে যাবেন না, তা নিয়ে কোনও তিক্ততার প্রশ্ন নেই। কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোটাই আসল বিষয়। প্রয়োজন হলে তৃণমূলের কোনও নেতাও প্রতিনিধি দলে থাকতে পারেন।
কৃষি আইনের বিরোধিতাকে সামনে রেখে ফের জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী জোটের সলতে পাকানো শুরু হবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক স্তরে জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ রাহুল গাঁধী এত দিন সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে গোয়ায় ছিলেন। সনিয়াকে চিকিৎসকরা দিল্লির বায়ুদূষণ এড়াতে বাইরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সনিয়া দিল্লি ফিরে এসেছেন। মঙ্গলবার মধ্যপ্রদেশের নেতা কমল নাথ তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। রাহুলও নিজেই বিরোধী নেতাদের বৈঠকে থাকতে চেয়েছেন।
বিরোধী জোটে পওয়ারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুঙ্গে। বুধবার তাঁর দিল্লির বাড়িতেই রাহুলরা বৈঠকে বসবেন বলে ঠিক রয়েছে। গত দু’দিন বিজেপি অভিযোগ তুলছিল, পওয়ার ইউপিএ-সরকারের কৃষিমন্ত্রী থাকার সময় মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখে কৃষি সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। মঙ্গলবার সকালে পওয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পরে অবশ্য পওয়ার জানিয়েছেন, তিনি পুণে বিমানবন্দরের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন।
এ দিন বিজেপি তথা সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, কংগ্রেস এখন কৃষি বিলের বিরোধিতা করছে। কিন্তু হরিয়ানায় কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিংহ হুডা মুখ্যমন্ত্রীদের গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১০-এ কৃষি সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। হুডার জবাব, ‘‘কিছু সংস্কার দরকার। কিন্তু এই সব আইনে সেই সংস্কারের কোনও প্রতিফলন নেই।’’
হুডা পাল্টা চালে হরিয়ানায় রাজ্যপালকে চিঠি লিখে বিধানসভার অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছেন। পঞ্জাবের সঙ্গে হরিয়ানার কৃষকরাও দিল্লি অবরোধ করেছেন। হরিয়ানার বিজেপি-জেজেপি সরকারে দুষ্যন্ত চৌটালার জেজেপি-র উপরে সরকার ছাড়ার জন্য প্রবল চাপ তৈরি হয়েছে। হুডার দাবি, ১০ জন জেজেপি বিধায়কের মধ্যে ৬-৭ জন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে। সরকারকে সমর্থনকারী চার নির্দল বিধায়কের মধ্যে দু’জন আগেই সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন। বিজেপি-জেজেপি সরকার রাজ্যের মানুষ ও বিধানসভার আস্থা হারিয়েছে। অধিবেশনের প্রথম দিনেই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে।
কংগ্রেসের এই চালে শঙ্কিত হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর মঙ্গলবার দিল্লিতে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে দুষ্যন্তের ভাই দিগ্বিজয় সিংহ চৌটালার দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের উদ্বেগের কথা শুনছে। জেজেপি সমর্থন প্রত্যাহার করছে বলে খবরকে ভুল বলে দাবি করে তাঁর যুক্তি, এখনও সেই পরিস্থিতি আসেনি।