কৃষকদের বিক্ষোভে তছনছ হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের বক্তৃতা মঞ্চ। রবিবার করনালে। ছবি: পিটিআই।
মঞ্চের পিছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের হাসিমুখের ছবি। কিন্তু সেই মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী কোথায়! তাঁর জন্য রাখা চেয়ার ভাঙা হচ্ছে। একের পর এক চেয়ার মঞ্চ থেকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। গোটা মঞ্চ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। মঞ্চের শামিয়ানা খুলে বাঁশের কাঠামো বেরিয়ে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য হেলিপ্যাড তৈরি হয়েছিল। তা খুঁড়ে ফেলা হয়েছে। নামতে না-পেরে মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার আকাশে চক্কর কাটছে। পুলিশ অসহায়। বিক্ষোভকারীদের মারমুখী মনোভাব দেখে মুখ্যমন্ত্রী নামারই সাহস দেখালেন না। ফিরে গেল কপ্টার। বাতিল হয়ে গেল ‘কিসান মহাপঞ্চায়েত’।
হরিয়ানার বিজেপির জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী খট্টর তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আঁচ হাতে-কলমে টের পেলেন। তা-ও একেবারে নিজের বিধানসভা কেন্দ্র, করনালে। রবিবার বিজেপি করনালের কৈমলা গ্রামে ‘কিসান মহাপঞ্চায়েত’-এর ডাক দিয়েছিল। ঠিক ছিল, খট্টর কৃষকদের সঙ্গে তিনটি কৃষি আইন নিয়ে কথাবার্তা বলবেন। তাঁদের মতামত শুনবেন। কিন্তু কৃষক সংগঠনগুলি অভিযোগ তোলে, বিজেপি সমর্থকদের চাষি সাজিয়ে হাজির করে কৃষি আইনের পক্ষে কৃষকদের সমর্থনের নাটক হচ্ছে। সেই ক্ষোভের জেরেই অনুষ্ঠানে হাঙ্গামা হয়। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে হরিয়ানা পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, লোহার ব্যারিকেড ব্যবহার করে। পুলিশ লাঠি চালালেও বিক্ষোভকারীরা পিছু হটেননি। রাস্তায় বাধা পেয়ে কৃষকেরা খেতের মধ্য দিয়ে মঞ্চের সামনে হাজির হন।
মুখ্যমন্ত্রী খট্টর শুধু নন, দিন পনেরো আগে হরিয়ানার উপ-মুখ্যমন্ত্রী দুষ্যন্ত চৌটালাও তাঁর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র জীন্দের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। সেখানেও তাঁর জন্য তৈরি হেলিপ্যাড খুঁড়ে দেওয়া হয়। কৃষকদের দাবি ছিল, দুষ্যন্তের জননায়ক জনতা পার্টি বিজেপি সরকারের থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করুক। পুরভোটের প্রচারের সময়ে খট্টরকে অম্বালায় কালো পতাকা দেখানো হয়েছিল। এ দিন পঞ্জাবের জালন্ধরেও বিজেপির রাজ্য সভাপতি অশ্বিনী শর্মা ও অন্যদের কৃষক-বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। বিজেপি সূত্রের খবর, পঞ্জাব-হরিয়ানা, দুই রাজ্যের বিজেপি নেতারাই কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের দ্রুত সমাধানসূত্র চাইছেন। না-হলে তাঁদের রাজনীতি করাই কঠিন হয়ে উঠছে। খট্টর গত সপ্তাহেই অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিজেপি নেতাদের আশঙ্কা, যে কোনও সময়ে কৃষক সংগঠনগুলির ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে পারে। রবিবারের ঘটনা তারই প্রমাণ।
আরও পড়ুন: রিলায়্যান্সের চুক্তি চাষের চুক্তি কর্নাটকে, দানা বাঁধছে বিতর্ক
আরও পড়ুন: মহিলাদের জন্য প্রথম ‘পিরিয়ড রুম’, চালু ঠাণেতে
নিজের বিধানসভা কেন্দ্রেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না-পেরে খট্টর এ দিন অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘এই বিক্ষোভের পিছনে কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টির হাত রয়েছে।’’ ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা গুরনাম সিংহ চাদুনীও কৃষকদের উস্কানি দিয়েছেন বলে তাঁর অভিযোগ।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ শুনে দিল্লির সীমানায় কৃষকদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা গুরনামের মন্তব্য, ‘‘উনি ঠিকই বলেছেন। আমারই হাত রয়েছে। আইন প্রত্যাহার না-করে, বিজেপির লোকেদের কৃষক সাজিয়ে কৃষি আইনের পক্ষে খাড়া করা হলে মুখ্যমন্ত্রীকে আবার এ রকম বিরোধের মুখে পড়তে হবে।’’
গুরনামের অভিযোগ, চাপ দিয়ে, পঞ্চায়েতে অর্থ বরাদ্দের লোভ দেখিয়ে কিসান মহাপঞ্চায়েত আয়োজন করানো হচ্ছে। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী খট্টর এই কিসান মহাপঞ্চায়েতের নাটক বন্ধ করুন। সত্যিই কথা বলতে হলে, ৪৬ দিন ধরে দিল্লির সীমানায় বসে থাকা কৃষকদের কাছে যান।’’
কৃষকেরা এ দিন পঞ্জাবের বিজেপি নেতা হরজিৎ গ্রেওয়াল এবং সুরজিৎ জিয়ানিকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, কৃষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আন্দোলনে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করছেন এই দুই নেতা। তাঁদের পঞ্জাবে ঢোকার বিরোধিতা করেছেন কৃষকেরা। কৃষকদের সমস্যাকে বিজেপি আমল দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন পঞ্জাবের বিজেপি নেতা পরমজিৎ রাই।