কৃষকদের সঙ্গে কথা মমতার।
দিল্লির উপকণ্ঠে আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে শুক্রবার কথা বললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিক্ষোভকারী কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিতে শুক্রবার দলের রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনকে হরিয়ানায় পাঠান তৃণমূলনেত্রী। নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে হরিয়ানা-দিল্লি সিঙ্ঘু সীমানার বিভিন্ন জায়গায় কৃষকরা টানা অবস্থান করছেন। ট্রাক্টর নিয়ে চলছে অবস্থান-বিক্ষোভ। শুক্রবার সেখানে প্রায় ঘণ্টা চারেক কাটান ডেরেক। তাঁর ফোন থেকে মোট চারবার কৃষকদের সঙ্গে কথা হয় বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। তৃণমূল সূত্রে খবর, হরিয়ানা এবং পঞ্জাবের একাধিক কৃষক সংগঠনের নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন তৃণমূলনেত্রী। মমতাকে কৃষকরা জানান, তাঁদের একটাই দাবি— কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা ধন্যবাদ জানান পাশে থাকার জন্য।
ঘটনাচক্রে, শুক্রবার সকালেই মমতা একটি টুইটে লেখেন, ‘১৪ বছর আগে ৪ ডিসেম্বর ২০০৬ আমি কলকাতায় ২৬ দিন অনশন শুরু করেছিলাম। কৃষিজমি জোর করে ছিনিয়ে না নেওয়ার দাবিতেই ছিল সেই অনশন। কেন্দ্রের কড়া কৃষিআইনবাতিলের দাবিতে বর্তমানে দেশে কৃষকরা যে আন্দোলন করছেন, তাকে আমি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা না করে এই বিল পাশ করানো হয়েছে’। যা থেকে স্পষ্ট যে, মমতা বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলকে আবার কৃষক-আন্দোলনমুখী করে তুলতে চাইছেন। অর্থাৎ, তিনি চান তৃণমূল আরও বেশি করে গ্রামের দিকে নজর দেবে। তার উদাহরণ হিসেবে তৃণমূল নেতৃত্ব বলছেন, আগামী সোমবার ৭ ডিসেম্বর তাঁর মেদিনীপুরের সভাকে মমতা আন্দোলনরত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর সভা হিসাবে দেখতে চাইছেন। ওই সভা থেকেও তিনি কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি তাঁর সমর্থন আরও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাইছেন। শুক্রবার ডেরেককে দিল্লি-হরিয়ানা সীমানার পাঠানো এবং তাঁর ফোন থেকে বিক্ষুব্ধ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলা তারই প্রস্তুতি হিসেবে দেখতে চাইছেন তৃণমূলের শীর্ষনেতারা।
শুক্রবারের টুইট সম্পর্কে তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বের অভিমত, ওই টুইটে মমতা তাঁর সুদীর্ঘ আন্দোলন-লড়াইয়ের ইতিহাস আরও একবার দলের নেতা-কর্মীদের মনে করিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ, যে কৃষিজমি অধিকার রক্ষার আন্দোলন তাঁর উত্তরণের ভিত্তিভূমি, বিধানসভা ভোটের আগে তিনি আরও একবার সেই জমিতেই যে ফিরে যাচ্ছেন, এই টুইটে যেন তারই ইঙ্গিত। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারও একাধিক টুইটে মমতা দিল্লির উপকণ্ঠে কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। লিখেছিলেন, ‘কৃষকদের জীবন-জীবিকা নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগে রয়েছি। ভারত সরকারের উচিত নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহার করে দেওয়া। এই মুহূর্তে ওই আইন প্রত্যাহার না করা হলে আমরা রাজ্য ও দেশজুড়ে আন্দোলনে নামব। আমরা প্রথম থেকেই এই কৃষক বিরোধী বিলের বিরোধিতা করে আসছি’। কৃষকরা মমতার এই অবস্থানকেই কুর্নিশ জানিয়েছেন। এর পর রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেককে আন্দোলনকারী কৃষকদের কাছে পাঠানো এবং তাঁর ফোন থেকে কৃষকদের সঙ্গে মমতার কথা তাই বিশেষ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
আরও পড়ুন: কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে ট্রুডোর মন্তব্যের জের, কানাডার হাইকমিশনারকে তলব
আরও পড়ুন: ‘চাষিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’র প্রতিবাদে পদ্মবিভূষণ ফেরালেন প্রকাশ সিংহ বাদল