মুম্বইয়ে আন্দোলনরত কৃষকের ফুটিফাটা পা। সোমবার। ছবি: রয়টার্স।
এই মিছিলে জলপাই উর্দি নেই। সেনার ভারী বুটের শব্দ নেই। আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র তো দূর অস্ত্। আছেন শুধু সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে নাগাড়ে দু’মাস দিল্লির সীমানায় বসে থাকা লাখো কৃষক। সোমবারও যাঁরা দাবি করছেন, কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মতো মিছিলেও তাঁদের অস্ত্র অদম্য জেদ। আর বাহন ‘বিশ্বস্ত’ ট্র্যাক্টর। মুখে মুখে ঘুরছে প্রশ্ন, প্রজাতন্ত্র দিবসে এমন মিছিলের সাক্ষ্মী কি কখনও থেকেছে দেশের রাজধানী?
দিল্লিবাসীরা তো বটেই, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দাদেরও অনেকে মানছেন, এ বার প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীতে তাঁদের চোখ থাকবে দুই মিছিলের দিকে। একটি অবশ্যই বিজয় চকের চিরাচরিত কুচকাওয়াজ। আর দ্বিতীয়টি, দিল্লি সীমানায় বিক্ষুব্ধ কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিল। যার অনুমতি পাওয়ার পরে এ বার বাজেট অধিবেশনের সময়ে সংসদ ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা করছেন চাষিরা।
প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আগের দিন দেওয়া বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেছেন, চাষিদের জন্যই খাদ্যে স্বনির্ভর হতে পেরেছে ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশ। করোনার চ্যালেঞ্জ সামলে দেশবাসীর মুখে খাবার জুগিয়েছেন তাঁরা। রাষ্ট্রপতির দাবি, ‘‘কৃতজ্ঞ দেশ কৃষকদের উন্নতিতে দায়বদ্ধ।’’ মঙ্গলবারের মিছিলের জন্য তৈরি হওয়ার ফাঁকে চাষিদের জিজ্ঞাসা, তা-ই যদি হবে, তবে এই মিছিলের দরকার পড়ল কেন? কেন এক বারও চাষিদের কথা শুনলেন না প্রধানমন্ত্রী?
তেরঙ্গা হাতে: নয়াদিল্লির গাজিপুর সীমানায় কৃষকদের সমাবেশ। সোমবার। ছবি: পিটিআই।
মহারাষ্ট্রে বিক্ষোভকারী কৃষকদের সম্মেলনে হাজির এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের প্রশ্ন, ‘‘ষাট দিন কৃষকেরা শীতের মধ্যে আন্দোলন করছেন। প্রধানমন্ত্রী এক বারও তাঁদের খোঁজ নিয়েছেন কি? এঁরা কি পাকিস্তানের?’’
তবে ‘পাক-তত্ত্ব’ ইতিমধ্যেই জড়িয়েছে চাষিদের মিছিলে। এমনকি সেখানে নাশকতার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না প্রশাসন। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল কমিশনার দীপেন্দ্র পাঠক জানান, ‘‘পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী মিছিলে উস্কানি দিয়ে ঝামেলা বাধাতে তৎপর। দুষ্কৃতীরা ভিড়ের মধ্যে মিশে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে ঝামেলা বাধাতে পারে।’’ তাঁর দাবি, অন্তত দু’শো টুইটার অ্যাকাউন্ট সক্রিয় ভাবে এই গণ্ডগোল পাকানোর তালে। তাদের যোগসূত্র পাকিস্তানের সঙ্গে রয়েছে বলেও পুলিশের দাবি। সমস্যা হলে মুখ পুড়বে বুঝে নজরদারির জন্য ৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে কাল পথে নামাচ্ছেন কৃষকেরাও।
পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে দিনভর বৈঠকের পরে তিনটি রুটে (সিংঘু, টিকরি ও গাজিপুর) মিছিলের অনুমতি মিলেছে। দিল্লিকে কেন্দ্র করে যে আউটার রিং রোড রয়েছে, সেই রাস্তায় মিছিলে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। সূত্রের মতে, যেহেতু বিজয় চকে কুচকাওয়াজ চলবে, তাই দিল্লির প্রাণকেন্দ্রের দিকে ট্র্যাক্টর মিছিলকে এগোতে দেওয়া হবে না। কিষান গণতন্ত্র মিছিল যাওয়ার কথা বৃত্তাকার রিং রোড ধরে।
পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে দিনভর বৈঠকের পরে তিনটি রুটে (সিংঘু, টিকরি ও গাজিপুর) কৃষকদের মিছিলের অনুমতি মিলেছে। ছবি: রয়টার্স।
কৃষক নেতাদের দাবি, আসবে প্রায় ৩ লক্ষ ট্র্যাক্টর। থাকবেন শ’পাঁচেক মহিলা চালক। ক্রান্তিকারি কিষান ইউনিয়নের নেতা দর্শন পাল বলেন, ‘‘কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আমরা অনড়। তা আদায়ে এর পরে বাজেট অধিবেশনের দিনে সংসদ ভবন ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ট্র্যাক্টর মিছিলে সরকার টের পাবে যে, শুধু পঞ্জাব, হরিয়ানা নয়, সারা দেশের চাষিরা আন্দোলনের পাশে রয়েছেন। এ দিন কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো বেশ কিছু রাজ্যে কৃষকেরা আইন বাতিলের দাবিতে পথেও নেমেছেন।
আজ ফের সরকারের তরফে বার্তা দিতে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর বলেন, ‘‘কেন্দ্র দেড় বছরের জন্য কৃষি আইন চালু না-করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তা-ও না মানায় শেষ বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। অথচ এটিই আমার মতে এ পর্যন্ত সেরা প্রস্তাব।’’ তাঁর আশা, দ্রুত আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেবেন বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু কোন শর্তে বা কবে তা হতে পারে, তার দিশা তিনি দিতে পারেননি।