হঠাৎ বৃষ্টি। রবিবার গাজিয়াবাদ সীমানায় তাঁবুর আশ্রয়ে কৃষকেরা। পিটিআই
রবিবার ভোররাত থেকে নাছোড় বৃষ্টি। এমনিতেই বছরের শুরুর দিনটিতে দিল্লির তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রিতে নেমেছিল। তার সঙ্গে বৃষ্টিতে জল থইথই সিংঘু, টিকরি, গাজিপুর। তাঁবুর আশেপাশে জমা জল। মঞ্চের সামনে জল। বৃষ্টির জল ঢুকে ভিজে একসা ট্রাক্টর-ট্রলিতে রাখা কম্বল, তোষক, শীতের পোশাক।
সোমবার মোদী সরকারের সঙ্গে কৃষক নেতাদের সপ্তম বৈঠকের আগে দিনভর এই বৃষ্টিও কৃষকদের মনোবল মিইয়ে দিতে পারল না। বৃষ্টির মধ্যে, ছাতার নীচে কাঠকুটোয় আগুন জ্বালিয়ে হাত সেঁকা চলল। বৃষ্টির মধ্যেই হল কবাডি প্রতিযোগিতা। বৃষ্টির মধ্যেই প্রতিবাদ মঞ্চের সামনে জমায়েত বজায় রইল। শীত ও বৃষ্টির মধ্যেই খালি গায়ে প্রতিবাদও জানানো হল। এই অবস্থায় সোমবার বৈঠকের আগে এ দিন প্রবীণ মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর। সূত্রের খবর, রাজনাথ তাঁকে দ্রুত মধ্যপন্থা বার করে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন।
সন্ধ্যায় কৃষক নেতারা হুঁশিয়ারি দিলেন, মোদী সরকার তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার না-করলে তাঁরা মকর সংক্রান্তির আগে কৃষি আইনের কপি পুড়িয়েই লোহরি (পঞ্জাবের শীতকালীন লোক-উৎসব) পালন করবেন। কৃষক নেতা মনজিত সিংহ রাই বলেন, ‘‘১৩ জানুয়ারি তিন কালো আইনের কপিতে আগুন ধরিয়ে লোহরি পালন হবে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন ২৩ জানুয়ারি কিসান দিবস হিসেবে পালন হবে।’’ জয়পুর-দিল্লি জাতীয় সড়কে হরিয়ানার রেওয়ারিতে এ দিন কৃষকদের দিল্লির পথে ট্রাক্টর মিছিল থামাতে পুলিশ লাঠি চালায়। অন্তত ২০০টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। অন্তত ২২ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। কৃষকদের খাবারে আগুনও লেগে যায়। পঞ্জাবের সাংগ্রুরে কৃষকরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন। পুলিশ পাল্টা লাঠিচার্জ করেছে। মোদী সরকার আইন প্রত্যাহারের দাবি না মানলে কৃষকরা ২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে ট্রাক্টর নিয়ে কুচকাওয়াজ করে ঢুকবেন বলে আগেই ঘোষণা হয়েছে।
রবিবার কৃষকদের বিক্ষোভে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। পঞ্জাবের চাষি শামসের সিংহ সিংঘুতে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছিলেন। হরিয়ানা থেকে আসা কুলবীর সিংহ নামে আরও এক কৃষকের মৃত্যু হয়। কৃষক সংগঠনগুলির দাবি, এই নিয়ে মোট ৫৯ জনের মৃত্যু হল। কৃষক নেতা ওঙ্কার সিংহ বলেন, ‘’৩৭ দিন প্রতিবাদ হয়ে গিয়েছে। তার পরেও সরকার নিজের জেদ ধরে বসে রয়েছে! এত জনের মৃত্যু হচ্ছে। এত জন প্রবল ঠান্ডা সহ্য করছেন। তার পরেও সরকার কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না।’’
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীও আজ বিবৃতি জারি করে মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, স্বাধীনতার পর থেকে এত ‘অহঙ্কারী’ সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসেনি। ‘অন্নদাতা’-র কষ্ট যাদের চোখে পড়ে না। সনিয়ার মতে, এখনও সময় রয়েছে, মোদী সরকার ক্ষমতার অহঙ্কার ছেড়ে আইন প্রত্যাহার করুক।
আজ কৃষক নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, সোমবার বৈঠকে তাঁরা তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার ও এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টির দাবিতে অনড় থাকবেন। কেন্দ্রীয় সরকার দাবি না মানলে তার পরের কর্মসূচিও তৈরি। পঞ্জাবে প্রতি দিনই বিজেপি নেতারা কৃষকদের বয়কট, ঘেরাওয়ের মুখে পড়ছেন। পঞ্জাবের হোসিয়ারপুরে বিজেপি নেতার বাড়িতে গোবর ছোড়ার গটনায় পুলিশ খুনের মামলা দায়ের করায় ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা।
রবিবার অকালি দলের নেত্রী হরসিমরত কউর বাদলও কৃষকদের প্রতিবাদের মুখে পড়েছেন। কৃষি আইনের বিরোধিতা করে মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়া হরসিমরত বুঢালডায় একজন মৃত কৃষকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান। কৃষকদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে, পরিবারের সঙ্গে দেখা না করেই তাঁকে কনভয় নিয়ে চলে যেতে হয়।