ছবি: পিটিআই।
কারও প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘ইয়া মরেঙ্গে ইয়া জিতেঙ্গে’ (হয় মরব, নয়তো জিতব)। কেউ লিখেছেন, ‘কানুন ওয়াপিস তো হাম ঘর ওয়াপিস’ (আইন ফিরিয়ে নিলে, তবেই বাড়ি ফিরব আমরা)।
শুক্রবার কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার টেবিলেও এই চড়া সুর ধরে রাখলেন কৃষক নেতারা। বক্তব্য স্পষ্ট, নতুন কৃষি আইন ফিরিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কিছু নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন তাঁরা। উল্টো দিকে, আইন না-ফেরানোর বিষয়ে অনড় সরকার। তাই বিজ্ঞান ভবনে দু’পক্ষের ‘উত্তপ্ত আলোচনার’ পরেও বৈঠক নিষ্ফলা।
মোদী সরকারের কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর চাইছেন, তিন কৃষি আইন সংশোধন নিয়ে কথা চালিয়ে যেতে। কিন্তু কৃষক নেতারা তাতে নারাজ। তাঁরা মৌনব্রত নিয়েছেন। দাবি একটাই, আইন প্রত্যাহার। উল্টো দিকে, কৃষিমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, তার প্রশ্নই নেই। কৃষক নেতা বলবীর সিংহ রাজেওয়াল গলা চড়িয়ে বলেছেন, কেন্দ্রের সাংবিধানিক অধিকারই নেই কৃষি আইন জারি করার। কৃষিমন্ত্রীর পাল্টা চ্যালেঞ্জ, আইনের সাংবিধানিক দিক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। কৃষক নেতারা তাহলে তার রায়ের জন্য অপেক্ষা করুন। জবাবে কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা জানিয়েছেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাইনি। যাবও না। সরকার আইন প্রত্যাহার করুক।’’
এ দিন কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষক নেতাদের অষ্টম রাউন্ডের বৈঠকে সমাধান সূত্রের দেখা পাওয়া তো দূর, উল্টে দু’পক্ষের রীতিমতো কথা কাটাকাটি হল। যার পরে কৃষক নেতারা বৈঠকের মধ্যেই মৌনব্রত নিলেন। মন্ত্রীরা মানতে না-চাইলেও, তাঁরা জানালেন, বৈঠক পুরোপুরি ‘শান্তিপূর্ণ’ হয়নি। ‘উত্তপ্ত’ কথাবার্তা হয়েছে। সিদ্ধান্ত একটিই। ফের ১৫ জানুয়ারি বৈঠক হবে।
বেলা দু’টোর বৈঠকে মন্ত্রীরা প্রায় ৪০ মিনিট দেরিতে এসেছিলেন। তার পরেও তা শেষ বিকেল পাঁচটায়। কৃষি মন্ত্রক সূত্রের খবর, বড়জোর দেড় ঘণ্টা কথা হয়েছে। আট দফায় এই প্রথম এত কম। কথা কাটাকাটির পরে কৃষক নেতারা মৌনব্রত নেওয়ায়, কৃষিমন্ত্রী চা পানের বিরতির প্রস্তাব দেন। সেই সময়ে বৈঠক থেকে বেরিয়ে তোমর, খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল ফোনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেন বলে সূত্রের খবর। কিন্তু বিরতির পরেও কথাবার্তা এগোয়নি। কৃষিসচিব সঞ্জয় আগরওয়াল কয়েক জন কৃষক নেতার সঙ্গে আলোচনা শুরুর চেষ্টা করেন। কিন্তু লাভ হয়নি।
চাষিদের ধারণা, মোদী সরকার এখন সুপ্রিম কোর্টের ঘরে বল ঠেলতে চাইছে। প্রধান বিচারপতি দু’পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার কমিটি তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। কৃষক নেতারা সাড়া দেননি। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি কৃষক-অবরোধের এলাকায় কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ফের শুনানি। কৃষক নেতাদের ধারণা, কেন্দ্র আশা করছে, শীর্ষ আদালত কোভিডের কারণ দেখিয়ে আন্দোলন তোলার নির্দেশ দেবে। কিন্তু কৃষক নেতা দর্শন পাল বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট বললেও আন্দোলন উঠবে না।’’ আর এক নেতা রাকেশ টিকায়েত বলেন, ‘‘প্রয়োজনে ২০২৪ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’’ কৃষিমন্ত্রীর যুক্তি, সংসদে পাশ হওয়া আইন একমাত্র সুপ্রিম কোর্টই বিচার করতে পারে। কৃষি আইনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সরকারও সুপ্রিম কোর্টের প্রতি দায়বদ্ধ। গতকাল তোমর শিখ ধর্মগুরু বাবা লাখি সিংহের মাধ্যমে মৌখিক প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, কেন্দ্র আইন রূপায়ণের অধিকার রাজ্যের উপরে ছেড়ে দিতে পারে। কিন্তু এ দিনের বৈঠকে তিনি সে প্রসঙ্গ তোলেননি। কৃষক নেতা যোগিন্দর উগ্রহণ বলেন, ‘‘বৈঠকে না কোনও ‘বাবা’ ছিলেন, না ছিল প্রস্তাব। এ সব ট্র্যাক্টর র্যালি থেকে নজর ঘোরানোর কৌশল।’’
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ-পঞ্জাব-হরিয়ানার লক্ষাধিক কৃষক ৪৪ দিন ধরে দিল্লি সীমানায় অবরোধে বসে থাকায় এই সব রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের রক্তচাপ বেড়েছে। গতকাল পঞ্জাবের বিজেপি নেতারা শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও দিল্লিতে এসে বুধবার তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পরে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আলোচনা হয়েছে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের সঙ্গেও।
কৃষক নেতাদের মতে, সরকার টালবাহানার অস্ত্রে আন্দোলনকারীদের ক্লান্ত করতে চাইছে। হান্নান বলেন, ‘‘ওরা টালবাহানা করে আশা করছে, আন্দোলন ব্যর্থ হবে। কিন্তু ওরা এই আন্দোলনকে হাল্কা ভাবে নিচ্ছে।’’ তোমরের যুক্তি, পঞ্জাব-হরিয়ানা বাদে অধিকাংশ রাজ্যের চাষিরা কৃষি আইনের সমর্থক। বহু কৃষক সংগঠনও একে সমর্থন করছে। কিন্তু কৃষক নেতাদের বক্তব্য, ওই সব সংগঠনের মুখোশ খুলে দেওয়া হবে।