প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে ধুন্ধুমার দিল্লিতে। —ফাইল চিত্র।
একাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করার তীব্র নিন্দা করল এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়া। ওই সংগঠনের মতে, সাংবাদিক হিসেবে কৃষক আন্দোলনে হিংসার ঘটনা তুলে আনার জন্যই তাঁদের নিশানা করা হচ্ছে। এমনকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁদের ভয়ও দেখানো হচ্ছে বলে দাবি ওই সংগঠনের। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা সমস্ত এফআইআর অবিলম্বে তুলে নেওয়ার দাবিও জানিয়েছে তারা। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের তীব্র সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
গত ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিল ঘিরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। অনেক সাংবাদিক সেই ঘটনার কথা সমাজমাধ্যম-সহ নিজেদের সংবাদ সংস্থায় প্রচার করেন। এর পরেই রাজদীপ সরদেশাই, মৃণাল পান্ডে, বিনোদ হোসে, জাফর আঘা, পরেশনাথ, অনন্ত নাথের মতো সাংবাদিকের পাশাপাশি কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে একাধিক মামলা দায়ের হয়। দেশদ্রোহ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং শত্রুতায় ইন্ধন জোগানোর মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয় তাঁদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে শুক্রবার সকালে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে গিল্ড। সংগঠনের সভাপতি সীমা মুস্তাফা এবং সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কপূর স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২৬ জানুয়ারি রাজধানীতে কৃষি আন্দোলন চলাকালীন হিংসা নিয়ে খবর করায় অভিজ্ঞ সম্পাদক এবং সাংবাদিক-সহ এডিটর্স গিল্টের বর্তমান এবং প্রাক্তন পদাধিকারিকদের ভয় দেখাতে উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশে যে ভাবে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা করছি’। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আন্দোলনকারী এক কৃষকের মৃত্যু সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং নিজদের সংবাদ সংস্থায় তুলে ধরেন যাঁরা, নির্দিষ্ট করে সেই সাংবাদিকদেরই নিশানা করা হয়েছে। মনে রাখা দরকার, ওই দিন বিক্ষোভ চলাকালীন প্রত্যক্ষদর্শী এমনকি পুলিশের কাছ থেকেও নানা রকম তথ্য আসছিল। যে ভাবে সেগুলো হাতে এসে পৌঁছচ্ছিল, সাংবাদিক হিসেবে সে ভাবেই সমস্ত তথ্য তুলে ধরাটাই স্বাভাবিক। সাংবাদিকতার নীতি নিয়ম অন্তত সে কথাই বলে। কিন্তু এফআইআরে বলা হয়েছে, আক্রোশ দেখাতেই ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই ধরনের টুইট করা হয় এবং তা থেকেই লালকেল্লার পরিবেশ কলুষিত হয়। এর চেয়ে বড় মিথ্যে হতে পারে না’।
সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখানো এবং চোখ রাঙানোর এই চেষ্টা উদ্বেগজনক বলেও মনে করে গিল্ড। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ওই দিন চারদিক থেকে নানা রকমের তথ্য আসছিল। তাই বিভিন্ন রাজ্যে দায়ের হওয়া এফআইআরগুলি সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখানো, হেনস্থা করা, চোখ রাঙানো এবং কণ্ঠরোধের চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এফআইআরে দেশদ্রোহ, সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে ইন্ধন জোগানো, ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করা যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাংবাদিকদের এ ভাবে নিশানা করা আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে শুধু লঙ্ঘনই করছে না, তাকে পদদলিত করছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে সংবাদমাধ্যমের উপর আঘাত হানা হচ্ছে যাতে ভারতীয় গণতন্ত্রে নজরদারি চালাতে স্বাধীন ভাবে কাজ করার ক্ষমতা হারায় সংবাদমাধ্যম’।
অভিযুক্ত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত যতগুলি মামলা দায়ের হয়েছে, তাতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩-এ (ধর্ম এবং জাতপাতের নিরিখে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতায় ইন্ধন জোগানো), ১৫৩-বি (জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি নষ্ট), ২৯৫-এ (ইচ্ছাকৃত ভাবে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানা এবং উত্তেজনা তৈরি করা), ২৯৮ (ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানতে ইচ্ছাকৃত ভাবে অপশব্দের প্রয়োগ), ৫০৪ (শান্তিভঙ্গের উদ্দেশে প্ররোচনামূলক মন্তব্য), ৫০৬ (অপরাধমূলক ভাবে ভয় দেখানো), ১২৪-এ (দেশদ্রোহ), ৩৪ (অনেকে মিলে ষড়যন্ত্র), ১২০-বি (অপরাধমূলক ষড়য্ন্ত্র), ৬৬ (কম্পিউটার ব্যবহার করে অপরাধ ঘটানো)-সহ অন্যান্য ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এ নিয়ে শুক্রবার সকালে মমতা টুইট করেন। তিনি লেখেন, ‘অভিজ্ঞ সাংবাদিক রাজদীপ সরদেশাইয়ের সঙ্গে যা হচ্ছে তাতে স্তম্ভিত আমি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমই এ ব্যাপারে নীরব। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আওয়াজ তুলতেই হবে আমাদের। কারণ সংবাদমাধ্যমই গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ’।