দিল্লি-জয়পুর সীমানায় অনশনে কৃষকরা। ছবি: পিটিআই।
দেশ জুড়ে কৃষক আন্দোলনের উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। সোমবার সকাল ৮টা থেকেই দেশের বিভিন্ন সীমানায় অনশনে বসেছে কৃষক সংগঠনগুলো। ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের (বিকেইউ) নেতা রাকেশ টিকায়েতের নেতৃত্বে দিল্লি-উত্তরপ্রদেশের সীমানায় গাজিপুরে অনশনে বসেছেন কৃষকরা। অন্য দিকে, রাজস্থান-হরিয়ানা সীমানাতেও কৃষি আইনের প্রতিবাদে অনশন চালাচ্ছেন কৃষকরা। কৃষকরা যাতে মিছিল করে দিল্লিতে ঢুকতে না পারেন, সে কারণে আগে থেকেই রাজস্থান-হরিয়ানা সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। ফলে জয়সিংহপুর-খেরা সীমানাতেই অনশনে বসে পড়েন কৃষকরা।
বিকেইউ (পঞ্জাব)-এর সাধারণ সম্পাদক হরিন্দর সিংহ লাখোয়াল বলেন, “সরকারকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছি আমরা। আমাদের ৪০ জন কৃষক নেতা দেশের সব সীমানায় সকাল ৮টা থেকে অনশনে বসেছেন। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।” এই আন্দোলন যে বিফলে যেতে দেবেন না এমন হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, কৃষি আইন নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিকেইউ (হরিয়ানা)- র কৃষক নেতা গুরনাম সিংহ চাদুনি। তাঁর অভিযোগ, সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) নিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, “বেশ কিছু দল এই প্রতিবাদ কর্মসূচি তুলে নিয়েছে। তারা সরকারের এই আইনকে সমর্থন করছে। এই দলগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমাদের আন্দোলনকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।”
পঞ্জাবের অল ইন্ডিয়া কিসান সভার কার্যকরী সভাপতি বলকরণ সিংহ ব্রার এই অনশন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের দাবি মানতে চাইছে না কেন্দ্র। তারা নিজেদের অবস্থানেই অনড়।” তাই সরকারকে এটা বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে যে, কৃষকরা বিষয়টি নিয়ে চুপ করে বসে থাকবে না। যত দূর যেতে হয় যাবে। এই অনশন কর্মসূচির মাধ্যমে তাই সরকারকে জাগ্রত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান বলকরণ। অন্য দিকে, রবিবারই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, কৃষকদের সমর্থনে তিনিও অনশনে যোগ দেবেন। এ দিন সকাল থেকেই আম আদমি পার্টি-র নেতারা অনশন শুরু করেছেন। কেজরীবালের এই সমর্থনকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে আক্রমণ করেছেন।
আরও পড়ুন: ব্যবসা বাড়াতে বজরং দলের প্রতি নরম ছিল ফেসবুক, দাবি
গত তিন সপ্তাহ ধরে কৃষক আন্দোলন চলছে। দফায় দফায় সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পরও কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। কেন্দ্রের তরফে কৃষি আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কৃষকদের। কিন্তু তাতেও বরফ গলেনি। কৃষক সংগঠনগুলো বার বারই বলেছে, আইন প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে আরও বড় আন্দোলনের পথে হাঁটবে তারা। এক দিকে যখন কৃষক সংগঠনগুলো কৃষি আইন নিয়ে আন্দোলন জোরদার করছে, অন্য দিকে কেন্দ্রও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই বার্তা দিয়ে যে, এই আইন কৃষকদের স্বার্থেই। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই বার্তা বারংবার দিতে দেখা গিয়েছে।
শুধু তাই নয়, গত পাঁচ দিনে আইআরসিটিসি-র মাধ্যমে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে প্রায় দু’কোটি ই-মেল পাঠিয়েছে কেন্দ্র। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে শিখদের জন্য যে ১৩ দফা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন, তারই সবিস্তার খতিয়ান রয়েছে ওই ই-মেলে। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। রবিবার কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরের সঙ্গে এক দফা বৈঠকও করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিকল্প কোনও পথ আছে কি না তা নিয়েও আলোচনা হয়। সূত্রের খবর, কৃষক আন্দোলন নিয়ে দলের অন্দরেও অস্বস্তিতে বিজেপি। চাপ বাড়ছে দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য।