ফাইল চিত্র।
ভোজ্য তেল ও ডালের চড়া দাম সামলাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যগুলিকে আরও বেশি করে ডাল ও তৈলবীজ চাষে জোর দেওয়ার ‘উপদেশ’ দিয়েছিলেন। রাজ্যগুলি পাল্টা দাবি তুলল, চাষিরা যাতে ডাল ও তৈলবীজে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) পায়, আগে তা নিশ্চিত করুক কেন্দ্রীয় সরকার।
আজ নীতি আয়োগের বৈঠকে অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল, ধান-গমের বদলে তৈলবীজ ও ডালের মতো ফসলে জোর দেওয়া। এ দিকে খারাপ আবহাওয়ার জন্য গমের পরে এ বার চলতি মরসুমে ধানের উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কায় কৃষি মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে আরও বেশি জমিতে ধান-গম চাষ করতে বলছে। রাজ্যগুলির প্রশ্ন, দু’টো একইসঙ্গে কী ভাবে সম্ভব?
দেশের বাজারে সর্ষে, সূর্যমুখী, বাদাম বা পামের মতো ভোজ্য তেলের যতখানি প্রয়োজন, তার প্রায় অর্ধেকই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বছরে খরচ হয় প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা। ডালের ক্ষেত্রেও বিদেশ থেকে চাহিদার ৭ থেকে ৮ শতাংশ আমদানি করে দেশের বাজারের চাহিদা মেটাতে হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সমস্যা হলেই রোজকার খাবারের ডাল ও ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যায়। আজ নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে তাই দু’টি প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল, ধান-গমের বদলে অন্য ফসল চাষে জোর দেওয়া এবং তৈলবীজ-ডালে স্বনির্ভর হওয়া। বৈঠকের গোড়াতেই প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে জোর দিয়েছেন। নীতি আয়োগের সদস্য রমেশ চাঁদ বলেন, ‘‘অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ নিজেদের সাফল্যের কথা বলেছে। রাজ্যগুলি বলেছে, তাদের যদি সাহায্য করা হয়, তা হলে আরও দ্রুত গতিতে কাজ হতে পারে।’’
রাজ্যগুলির বক্তব্য, কেন্দ্র ডাল, তৈলবীজের জন্য এমএসপি বা ফসলের ন্যূনতম দাম ঘোষণা করে ঠিকই। কিন্তু চাষিদের তা খোলা বাজারে বেচতে হয়। ফলে এমএসপি-র নিশ্চয়তা থাকে না। তাই অধিকাংশ রাজ্যেই চাষিরা ধান-গমের বাইরে অন্য কিছু চাষ করতে চান না। কৃষক সংগঠনগুলি এমএসপি-র আইনি নিশ্চয়তার দাবি তুলেছে। তা খতিয়ে দেখতে যে সরকারি কমিটি তৈরি হয়েছে, তাতে বিজেপি-আরএসএসের লোক রয়েছে বলে সংযুক্ত কিসান মোর্চার প্রতিনিধিরা কমিটিতে থাকছেন না। আজ পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বলেন, ‘‘আমরা ধান-গম চাষে আটকে রয়েছি। আমাদের ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে যাচ্ছে। আমরা চাষিদের জন্য এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টির দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই, সরকারি কমিটি নতুন করে সাজানো হোক। কারণ তাতে চাষিদের কোনও প্রতিনিধি নেই।’’
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, এ বছর খারাপ আবহাওয়ার জন্য গমের ফলন কম হয়েছে। এখন আবার বৃষ্টির অভাবের জন্য উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে ধানের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা। ফলে কৃষি মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে সে দিকে নজর দিতে বলেছে। এর মধ্যে নীতি আয়োগ তৈলবীজ, ডাল চাষে জোর দেওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। নীতি আয়োগ সদস্য রমেশ চাঁদ অবশ্য জানিয়েছেন, তৈলবীজ উৎপাদনের কোনও লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে কৃষি মন্ত্রক আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে বিদেশি আমদানির উপর নির্ভরতা ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার লক্ষ্য নিয়েছে।