বিষয়টা আমাদের দৈনন্দিন খাবারের সঙ্গে যুক্ত, সিস্টেম ফেল করলে সবার পেটেই জ্বালা ধরবে।
যতই প্রযুক্তি উন্নততর হোক না কেন, প্রকৃতি ছাড়া মানুষের খাবার জোগান দেওয়ার কিন্তু দ্বিতীয় আর কোনও শক্তি নেই। আর প্রকৃতির হাত থেকে আমাদের প্লেট পর্যন্ত খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার একমাত্র ভরসা হচ্ছেন কৃষক। বহুজাতিক কর্পোরেট যতই আপেল বা মুসম্বি বা আঙুর বা কমলালেবুর রস বেচুক না কেন, তার ফ্যাক্টরি যত বড়ই হোক না কেন আর মেশিনগুলো যতই আধুনিকতম হোক না কেন, কৃত্রিম মাটিতে কৃত্রিম গাছে কৃত্রিম ফল ফলানোর ক্ষমতা তাদের কারও নেই। ওই একটা জায়গায় কৃষকের কোনও বিকল্প নেই বলেই ওঁরা আমাদের সকলের অন্নদাতা। কৃষক নেই মানে খাদ্য নেই আর খাদ্য নেই মানে মানবসভ্যতা নেই, এই বিষয়টি প্রথমেই খুব ভাল ভাবে বুঝে নেওয়া দরকার।
ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে উন্নয়নের সমস্ত পলিসি তৈরি হওয়া উচিত ছিল কৃষি ও কৃষককে কেন্দ্রবিন্দু করে। দুর্ভাগ্যবশত, স্বাধীনতার পর থেকে সরকারতন্ত্র কৃষককে কেবল নির্দেশ দিয়ে এসেছেন তাঁদের কী করনীয় এবং ভারতবর্ষের অন্নদাতা শুধুমাত্র সেই আদেশ পালন করেছেন মাত্র। ফলে কৃষি অলাভজনক হয়ে পড়েছে , জমি বন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে, খাদ্য বিষে পরিণত হয়েছে, ভূগর্ভস্থ জলস্তর তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, পরিবেশ দূষিত হয়েছে আর কোটি কোটি কৃষক ভূমিহীন, রোজগারহীন হয়ে অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ করার জন্য গ্রামছাড়া হতে বাধ্য হয়েছেন। বিজ্ঞানের নামে, উৎপাদন বৃদ্ধির নামে আর আধুনিক প্রযুক্তির নামে ভারতের দশ হাজার বছরের কৃষি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার পরিকল্পিত চেষ্টা চলেছে এত দিন। সরকারের পর সরকার এসেছেন, কৃষককে ভর্তুকি দিয়েছেন, ঋণ মাফ করেছেন, সম্মাননিধি দিয়েছেন, বিনাশুল্কে বিদ্যুৎ দিয়েছেন, ন্যূনতম সহায়তা মূল্য দিয়েছেন, আত্মহত্যা করলে ক্ষতিপূরণ পর্যন্ত দিয়েছেন কিন্তু কৃষিক্ষেত্রকে আত্মনির্ভর এবং স্বাবলম্বী হতে দেননি। গত সত্তর বছরের কৃষিনীতির নিট ফল হল ভারতের এককালের স্বাধীন স্বাভিমানী কৃষক আজ পুরোপুরি সরকারি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল একটি পরাধীন পরজীবী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছেন। এই ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল বৈকি। তাই কৃষি আইনগুলির পরিমার্জন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
‘অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স’, ‘ফারমার্স প্রডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রমোশন অ্যান্ড ফ্যাসিলিয়েশন) বিল’ এবং ‘ফারমার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন) এগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস বিল’— এই তিনটির মাধ্যমে সরকার মূলত তিনটি উদ্দেশ্য সাধন করতে চাইছেন:
১. কৃষিক্ষেত্রে ফড়ে বা দালালদের আধিপত্য কমিয়ে কৃষকের আয় বাড়ানো।
২. রাজ্যগুলিতে চুক্তি-ভিত্তিক চাষব্যবস্থা আইনসিদ্ধ করা।
৩. কৃষিপণ্য বিপণন নিয়ে যে আইন রয়েছে তা দূর করে আন্তঃরাজ্য কৃষিপণ্যের অবাধ বাণিজ্যের রাস্তা খুলে দেওয়া।
আরও পড়ুন:‘কৃষক বিরোধী’ মমতা: চিঠি লিখে, টুইট করে তোপ ধনখড়ের
সরকার চাইছেন কৃষিকাজ লাভজনক হোক এবং কৃষকের রোজগার দ্বিগুণ হোক আর যাঁরা বিরোধিতা করছেন তাঁরা মনে করছেন যে বিপণন পুরোটাই যেহেতু লগ্নিভিত্তিক, এতে কৃষক কোথাও নেই, এর লাভ পুরোটাই কর্পোরেটের ঘরে উঠবে। এই কর্পোরেট তাঁরা, যাঁরা রাজনীতিকে অর্থ জোগান, বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং অনেকাংশই পাবলিক পলিসিকে প্রভাবিত করেন। ইদানিং তো সামাজিক ক্ষেত্রেও কর্পোরেটদের সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যাঁরা বিলগুলির বিরোধিতা করছেন তাঁদের শঙ্কা যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তা হলে কিন্তু সরকার যা করতে চাইছেন, বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটি হবে এবং ব্যাপক জনরোষ সৃষ্টি হবে। বিষয়টা যেহেতু আমাদের দৈনন্দিন খাবারের সঙ্গে সম্পর্কিত, সিস্টেম ফেল করলে সবার পেটেই জ্বালা ধরবে। কে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক, তার সাথে খাদ্য আইনের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। কারণ আমাদের পাতের খাবারটি শেষমেশ আমাদের গরিব অন্নদাতারাই দেবেন, কোনও রাজনেতা বা বিত্তশালী কর্পোরেট কর্তা নন। অথচ এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পার্টিলাইন অনুযায়ী নানা রকম সমর্থনসূচক বা বিরোধিতাসূচক মন্তব্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা বহুলাংশে শুধুই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। দলগুলি দলের ব্যাপারটা বুঝে নিক, সাধারণ মানুষের কাছে নিশ্চয় কৃষকের স্বার্থই সর্বোপরি, কারণ তাঁরা মাঠে না গেলে দলমত নির্বিশেষে আমরা সবাই না খেয়ে মরব। এমনিতেই আজকাল ক্ষেতে পাখি বসে না, মৌমাছি ওড়ে না, জোনাকি জ্বলে না, জল দূষিত, বায়ু দূষিত, ব্যাপক হারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে উপভোক্তার শরীরে বিষের মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সেই সূত্রেই সাধারণ খাদক হিসেবে গোটাকতক মৌলিক প্রশ্ন তুললাম, যেগুলির উত্তর খুঁজলে হয়তো কৃষকের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
এক) দেশে বার্ষিক প্রায় ত্রিশ লক্ষ কোটি টাকার কৃষি উৎপাদন হয়। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-তে সরকার খুব বেশি হলে তার মধ্যে থেকে দেড় থেকে দুই লক্ষ কোটি টাকার অনাজ কেনেন। বাকিটা এখনও পুরোটাই খোলা বাজারে বিক্রি হয়। বস্তুত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যই বকলমে সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য হয়ে গিয়েছে, তার উপরে কৃষকরা সচরাচর ফসলের দাম পান না। এই বিলগুলির ফলে কৃষকরা চাইলে নিজের মণ্ডির বাইরে দেশের যে কোনও জায়গায় উৎপাদন বেচতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু দাম ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের চেয়ে বেশি পাবেন তার নিশ্চয়তা কোথায়? একমাত্র সরকার সঠিক দামে কিনবেন আর বাকি বাজারের কোনও দায় নেই, এটা কী রকমের কথা? খোলা বাজার যদি কৃষিপণ্যের সঠিক দাম ধার্য করতে সমর্থ হতো, তা হলে কি সরকারকে এমএসপি নির্ধারণ করে দিতে হতো? তার মানে কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় ফাঁক আছে এবং বাবুরা সেটা জানেন। আখেরে কটা ফসলের ক্ষেত্রে এমএসপি ধার্য হয়? বাকিগুলোর দাম তা হলে কি কৃষকের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে বায়ার কার্টেলের দ্বারাই নির্ধারিত হবে?
দুই) চুক্তিভিত্তিক চাষ করার খোলা ছুট খুবই ভাল কথা, এতে নিঃসন্দেহে কৃষক আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হবেন। কিন্তু যেখানে জমিতে বর্গাদার বা ভাগচাষি আছেন, সেখানে মালিকের সাথে কোম্পানির চুক্তির মূল্য কী? আর যদি মালিককে এড়িয়ে বর্গাদার বা ভাগচাষিদের সাথে অলিখিত চুক্তি করতে হয়, সে ক্ষেত্রে স্থানীয় ফড়ে ধরা ছাড়া দাদনদারের অন্য কোনও উপায় আছে কি? তা হলে স্থানীয় ফড়ে সেই থাকছেই? দ্বিতীয়ত, চুক্তিভিত্তিক চাষ ব্যবস্থার ফলে কৃষক কখন কী ফলাবেন এবং কী ভাবে চাষ করবেন, সেই নির্ণয়ক্ষমতাটাও হয়তো আর তাঁর হাতে থাকবে না। কর্পোরেট কালচারে সর্বোচ্চ লাভই যেখানে একমাত্র লক্ষ্য, সেখানে কৃষিকাজে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে স্বাভাবিক ভাবেই আরও কৃষিশ্রমিক উদ্বৃত্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছে। উদাহরণ স্বরূপ, একটা হারভেস্টর মেশিন প্রতিদিন ২০০ জন কৃষিশ্রমিককে অপাংক্তেয় করে দেয়। তা হলে কি কৃষিক্ষেত্রে যুক্ত ব্যক্তির যে সংখ্যাটি এখন ছদ্মকর্মহীনতায় ঢাকা, ভবিষ্যতে তার চেয়ে অনেক বেশিমাত্রায় কৃষিকর্মী অধিকৃতভাবে কর্মহীন হয়ে পড়বেন?
তিন) মাঠ থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত পৌঁছনোর পথে পচনশীল কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে কোল্ড চেন একটি মস্ত বড় ভূমিকা পালন করে। সরকারের ঘোষিত বাজেট অনুযায়ী দেশ জুড়ে এক লক্ষ কোটি টাকার কোল্ড স্টোরেজ গড়ে তোলা হবে এবং কোল্ড ট্রেনও কৃষিপণ্য পরিবহণে সহায়তা করবে। কবে হবে? যত দিন না হচ্ছে, তত দিন কি পচনশীল পণ্য বেচা-কেনা বন্ধ থাকবে? সে ক্ষেত্রে কর্পোরেট কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? আর একবার তারা সাপ্লাই চেন সিস্টেমে ঢুকে পড়লে, কৃষক পণ্য বিপণনের জন্য কর্পোরেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে, ক্ষেত থেকেই ফসল বিক্রির নিশ্চয়তা বাড়লে, আখেরে তাতে কৃষকের রোজগার বাড়বে তো? এই যে এখন আমরা ৩৫ টাকা কেজি পাইকারি দরে আলু কিনছি, সেগুলো কোল্ড স্টোরেজে ঢোকার সময় কৃষকের কাছ থেকে কী দামে কেনা হয়েছিল কেউ কি ভেবে দেখেছেন? এতে কি কৃষকের আয় এক পয়সাও বেড়েছে?
চার) কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলছিলেন যে আগামী পাঁচ বছরে ১০ হাজার এফপিও বা ফার্মার প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন গড়ে তোলা হবে। এখন যে কয়েকশ এফপিও আছে, সেগুলোর মধ্যে কতগুলো আসলে লাভজনক? হাতে গুনে বলা যাবে। এগুলি বেশিরভাগই মূলধন, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং আর ভ্যালু চেন ইনভেস্টমেন্টের অভাবে ধুঁকছে। ফলে সরকার এ বার কর্পোরেটকে এফপিও-র সদস্য হবার খোলা ছুট দিলেন। ভাল কথা। কিন্তু এই বিলগুলির মূল উদ্দেশ্য তো কৃষকের আয় বৃদ্ধি, সেই উদ্দেশ্য কি কর্পোরেট পূরণ করবে? যে সমস্ত কর্পোরেট সরাসরি কৃষিকাজের সাথে যুক্ত নয়, তাদের কেন এফপিও-র সদস্য হতে দেওয়া হবে, এই মৌলিক প্রশ্নটি ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ তুলেছে। কিন্তু যতদূর জানি, এখনও সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
পাঁচ) কৃষিপণ্যের বাণিজ্য ও বিপণনের লাভ কৃষকের ঘরে পৌঁছানোর জন্য তো কৃষকের কাছেই সংরক্ষণ (কোল্ড স্টোরেজ), যানবাহন (ট্রান্সপোর্টেশন) এবং বাজারের উপর সম্পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে, যার জন্য মূলধন এবং সমবায় প্রয়োজন। সেটা কোথায়? এখনকার সমবায় আইন অনুযায়ী, সদস্যতা যেহেতু এলাকাভিত্তিক, তার মূলধন এবং কর্মক্ষেত্রও সীমিত। অন্যদিকে কর্পোরেট সারা দেশে অবাধে ব্যবসা করতে পারে আর ব্যাঙ্কের সহায়তায় তাদের মূলধনেরও কমতি নেই। ফলে আখেরে এই বিলগুলির মাধ্যমে ভারতের কৃষি বহুজাতিক সংস্থা ও বড় বড় কর্পোরেটের অধীন হয়ে পড়বে এবং কৃষি ব্যবসা লাভজনক হলেও, কৃষক হয়তো তার সুফল থেকে বহুলাংশে বঞ্চিতই থাকবে। যখন কর্পোরেটকে কৃষি উৎপাদন এবং বিপণনে সারা দেশ জুড়ে অংশীদারীর জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে, তখন সাথে সাথে ফেয়ারপ্লের জন্য কৃষি সমবায় সমিতিগুলিকেও ভৌগোলিক সীমারেখার বাঁধন খুলে দিয়ে সারা দেশ থেকে সদস্যতা গ্রহণ ও বাণিজ্যিক লেনদেনের খোলা ছুট দেওয়া উচিত ছিল, তাই না? কৃষককে সরাসরি নিজের মালের লাগাম নিজের হাতে নেওয়ার সেই বহুকাঙ্খিত বিলটি কি বিপণন ব্যবস্থায় কর্পোরেট গেঁড়ে বসে যাবার পর আনা হবে?
ছয়) দেশে জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান। কৃষিতে আয় কমে যাওয়ার ফলে কৃষকের সন্তান আর কৃষক হতে চাইছেন না, বহু ছোট বড় কৃষিজমি নিষ্ফলা হয়ে পড়ে থাকছে অথবা সেগুলোর ল্যান্ড ইউস পাল্টে ফেলা হচ্ছে। আবার অন্যদিকে দীর্ঘদিন রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে বহু জমি বন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে, ফলে অদ্ভুত ভাবে একদিকে মাটি কেটে ইটভাটাকে বেচে দেওয়ার প্রক্রিয়াও যেমন চলছে, অন্যদিকে অবৈধ ভাবে জঙ্গল কেটে সাফ করা বা নদীর চর দখল করার চেষ্টাও চলছে। গোযুক্ত বিষমুক্ত কৃষি এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়। আমাদের দেশে ৫.৭৮ কোটি হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে মাত্র ১৫ লক্ষ হেক্টরে, অর্থাৎ ২.৫৯ শতাংশ কৃষিজমিতে, অর্গানিক বা জৈব কৃষি হয়। এই ধরণের কৃষিকাজে অর্গানিক সার্টিফিকেশন আবশ্যিক, কারণ গোটা ভার্মিকম্পোস্টের প্রক্রিয়া বহুজাতিক কর্পোরেটের হাতে, বীজও তাই। বাকি ভারতের পারম্পরিক গোযুক্ত বিষমুক্ত সার্টিফিকেটের প্রয়োজনহীন দেশীয় বীজের কৃষি উৎপাদের কথা কিন্তু কোনও স্তরে কোথাও আলোচিত হচ্ছে না। অথচ সাধারণ বুদ্ধি বলে— বাড়ির গরু, বাড়ির গোবর-গোমূত্র, বাড়ির নিমগাছ, ফসলের এঁখোগুড় আর খড়, দেশীয় বীজ, দেশীয় কেঁচো ইত্যাদি ব্যবহার করে ইনপুট কস্ট অনেকটা কমে গেলে কৃষকের আয় এমনিই বাড়বে, জমিগুলোও বন্ধ্যাত্বমুক্ত হবে, মানুষ বাঁচবে, পরিবেশ বাঁচবে, কৃষকও বাঁচবে। তাই বিলগুলিতে শুধু একতরফা আউটপুট সাইড না দেখে ভারতের কৃষিসংস্কৃতির অঙ্গ যে ট্র্যাডিশনসল ইনপুট সাইড, সেটাও কি দেখা উচিত ছিল না?
আরও পড়ুন: জেএমবি-র ছাতা বদল, রাজ্যে এল আল কায়দা
বাবুরা বাজার খুলে দিলেন অথচ বাজারে পৌঁছনোর রাস্তাটি এখনও তৈরি করলেন না। কোল্ডচেনের দায়িত্ব যদি সরকারি সমবায় সমিতি না নেয়, তা হলে কিছু গ্রাম্য ছাপোষা ফড়ের জায়গায় এ বার কোটপ্যান্ট পরা রাঘববোয়াল ফড়েরা আসবেন, পয়সা ঢালবেন, দাদন দেবেন, মাল কিনবেন আর ব্র্যান্ডিং করে গ্রাহকের কাছে অনেক বেশি দামে বিপণন করে লাভের সব গুড়টুকু নিয়ে চলে যাবেন। সমস্ত দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে, খোলা মনে বিলগুলিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনের কথা ভাবলে হয়তো ভারতের কৃষি ব্যবস্থাকে আবার কৃষক ও খাদ্যকেন্দ্রিক করা তোলা যাবে, যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একাধিক বক্তব্য অনুযায়ী, সরকারের মূল উদ্দেশ্য। তাই বিষয়টি নিয়ে সর্বস্তরে আরও বিস্তৃত আলোচনার অবকাশ আছে বৈকি।
(লেখক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সমাজকর্মী)