Russia-Ukraine War

মুম্বইয়ের বাজারে মাছ বিক্রি করতেন! ভারতীয় যুবকদের রাশিয়াতে পাঠানোর ‘চক্রী’ ফয়জলের উত্থান কী ভাবে

ভারত থেকে অন্তত ৩০ জনকে ‘ভুল’ বুঝিয়ে রাশিয়াতে পাঠিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেওয়াতে বাধ্য করানোর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার ইউক্রেনের যুদ্ধে মহম্মদ আসফান নামে এক বছর ৩০-এর হায়দরাবাদি যুবকের মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই এই চক্রের হদিশ মেলে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৯:৪৬
Share:

ফয়জল খান। — ফাইল চিত্র।

মোটা বেতনের চাকরির ‘টোপ’ দিয়ে রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে ভারতীয়দের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর অভিযোগে সরগরম গোটা দেশ। বিদেশ মন্ত্রক দ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছে। ঘটনার তদন্তে নেমেছে সিবিআইও। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা একটি এফআইআর দায়ের করেছে। সেই এফআইআরে একাধিক এজেন্ট এবং কোম্পানির নাম রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেই ‘মানব পাচার’-এর অভিযোগ উঠেছে। সিবিআইয়ের তালিকায় থাকা ১২ নম্বর নামটা নিয়েই যত আলোচনা। এই প্রতারণা চক্রের অন্যতম ‘মস্তিষ্ক’ হিসাবে ‘চিহ্নিত’ করা হয়েছে ফয়সল আবদুল খান ওরফে বাবা নামে এক ব্যক্তিকে।

Advertisement

ভারত থেকে অন্তত ৩০ জনকে ‘ভুল’ বুঝিয়ে রাশিয়ায় পাঠিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেওয়াতে বাধ্য করানোর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার ইউক্রেনের যুদ্ধে মহম্মদ আসফান নামে এক বছর ৩০-এর হায়দরাবাদি যুবকের মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই এই চক্রের হদিশ মেলে। তাঁর পরিবারের দাবি, মহম্মদ এবং তাঁর দুই বন্ধু রাশিয়ায় কাজ করতে যাওয়ার জন্য ফয়সলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে ‘লোভনীয়’ কাজের প্রতিশ্রুতি দেন। তার পরই আসফানরা রাশিয়ায় পাড়ি দিয়েছিলেন।

ফয়সল সমাজমাধ্যমে খুবই জনপ্রিয়। তাঁর ইউটিউব চ্যানেল ‘বাবা ভ্লগ’-এ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভিডিয়ো পোস্ট করে থাকেন তিনি। সেই সব ভিডিয়োর মূল উদ্দেশ্যই ছিল, যুবকদের ভিন্‌দেশে গিয়ে কাজ করতে ‘উৎসাহিত’ করা। রাশিয়া, সার্বিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলিতে গিয়ে কাজ করলে ‘মোটা’ অঙ্কের বেতন পাওয়া যাবে, এমনই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত যুবকদের। সেই ‘প্রতিশ্রুতি’র উপর ভরসা করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন অনেকেই, এমন খবরও মিলেছে।

Advertisement

তবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পোস্ট করা ফয়সলের একটি ভিডিয়োই বিতর্কের জন্ম দেয়। সেই ভিডিয়োয় ফয়সলকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘রাশিয়ান সেনাবাহিনীর কাজ কোনও ভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কখনওই যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে হবে না। এই কাজের জন্য প্রথম তিন মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সে সময় মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় করার সুযোগ থাকছে। পরে সেটাই এক লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এই কাজে যোগ দেওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, প্রত্যেকেই একটা সরকারি কার্ড পাবেন। যা আপনাকে ওই দেশে থাকার সুবিধা দেবে। সেই কার্ড আপনাকে আরও অনেক সুযোগ সুবিধা দেবে।’’

সেই ফাঁদে পা দিয়ে অনেক ভারতীয় দলে দলে রাশিয়া পাড়ি দিয়েছেন। শুধু একা আসফান নন, তার মাস দুই আগে সুরাতের এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। সূ্ত্রের খবর, ফয়সলের মাধ্যমেই ওই যুবক রাশিয়া গিয়েছিলেন। এই চক্রের খবর প্রকাশ্যে আসার পরই ফয়সলের তত্ত্বতালাশ নেওয়া শুরু হয় সমাজমাধ্যমে।

ফয়সল বর্তমানে দুবাইয়ে থাকলেও তাঁর জন্ম মুম্বইয়ে। ছোট থেকেই পড়াশোনায় খুব একটা ভাল ছিলেন না তিনি। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন ফয়সল। তার পর সংসার চালাতে নানা ধরনের ‘জীবিকা’ বেছে নিয়েছেন তিনি। এক সময় বাজারে মাছও বিক্রি করেছেন। সেই সব কাজ করতে করতেই আচমকাই তাঁর সামনে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ চলে আসে।

বিদেশে গিয়ে ফয়সল একটি কোম্পানিতে যোগ দেন। সেই কোম্পানির কাজই ছিল মানুষকে বিদেশে যেতে সাহায্য করা। তার পর নিজেই এই ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৮ সালে মুম্বইয়ের এক পরিবার অভিযোগ করেন যে, ফয়সল নাকি তাদের ২৩ বছরের ছেলেকে ‘ভুল’ বুঝিয়ে দুবাইয়ে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের ছেলেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়। যদিও সেই অভিযোগ শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করা যায়নি। তবে এ বার ফয়সলের বিরুদ্ধে আরও মারাত্মক অভিযোগ উঠল।

কী ভাবে রাশিয়ায় এই চক্র কাজ করছে? সংবাদমাধ্যম সূ্ত্রে খবর, ‘মানব পাচার’ চক্রের ‘কিংপিন’ রমেশ নামে এক ব্যক্তি। তিনি রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। সেই রমেশ সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের এক রেস্তরাঁর মালিক। তিনি তাঁর বন্ধু খুশপ্রীতকে ‘সেনাবাহিনীতে নিয়োগ’ সম্পর্কে জানান। তিনিই বিভিন্ন এজেন্টকে সেই খবর দেন। সেই সূ্ত্র ধরেই ফয়সলের কাছে খবর পৌঁছয়।

তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মানতে নারাজ ফয়সল। সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে দুবাই থেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি এখনও পর্যন্ত মোট ৩৫ জনকে রাশিয়ায় পাঠিয়েছি। কিন্তু আমি নিজেও জানতাম না, এই সবের নেপথ্যে এত বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে। আমিও এই ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল এই বলে যে, কাউকেই যুদ্ধের প্রথম সারিতে পাঠানো হবে না। শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর সাহায্যকারী হিসাবে কাজ করতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাশিয়ায় পৌঁছনোর পর তাঁদের সঙ্গে যা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ আমার দায়ের বাইরে ছিল।’’ ফয়সল এ-ও দাবি করেছেন যে, তিনি ঘটনার কথা জানতে পেরেই ‘ভুক্তভোগী’দের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, পারেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement