'করোনা জোক শেয়ার করলেই গ্রেফতার', হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে এই মেসেজ।
কী ছড়িয়েছে?
একটি মেসেজ, যেখানে বলা হচ্ছে, ‘‘কোনও হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে ভুল করেও করোনা সংক্রান্ত কোনও জোক শেয়ার করলে সেই গ্রুপের সকলে সমস্যায় পড়তে পারেন, গ্রুপ অ্যাডমিন এবং গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৬৮, ১৪০ এবং ১৮৮ ধারায় মামলা হতে পারে। তাই গ্রুপ অ্যাডমিনকে অনুরোধ করা হচ্ছে, যাতে তিনি দু’দিনের জন্য গ্রুপটি বন্ধ করে রাখেন।’’ এর পর বলা হয়েছে যে, ‘‘আজ রাত থেকেই সারা দেশে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট আইন বলবৎ করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী সরকারি কোনও দফতর ছাড়া কোনও নাগরিকের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কোনও খবরের আপডেট দেওয়ার অধিকার নেই। তার পর সমস্ত গ্রুপ অ্যাডমিন তাদের সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলিতে এই মেসেজটি শেয়ার করতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গেই দেওয়া হয়েছে একটি খবরের লিঙ্কও।’’
কোথায় ছড়িয়েছে?
হোয়াটস্অ্যাপে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়েছে এই বার্তা। আর তাতেই ঘুম উড়েছে বিভিন্ন গ্রুপ অ্যাডমিনের।
হুবহু এই মেসেজ ছড়াচ্ছে হোয়াটঅ্যাপে।
এই তথ্য কি সঠিক?
না, এই তথ্য ঠিক নয়।
সত্যি কী এবং আনন্দবাজার কী ভাবে তা যাচাই করল?
প্রথমত, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এমন কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, দু’ধরনের আইনে এই মামলাগুলি দায়ের হয়। এক, ভারতীয় দণ্ডবিধি। অন্যটি, তথ্যপ্রযুক্তি আইন। এ ক্ষেত্রে স্পষ্ট নয়, উল্লেখিত ৬৮, ১৪০ এবং ১৮৮ ধারাগুলি ঠিক কোন আইনের। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয়, এখানে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারার কথা বলা হচ্ছে, তা হলে দেখা যাচ্ছে যে সেখানে ৬৮, ১৪০ এবং ১৮৮— এই তিনটি ধারার কোনওটিতেই মেসেজ ছড়ানোর জন্য কোনও শাস্তির কথা বলা নেই।
যদি ধরে নেওয়া হয়, এখানে তথ্য প্রযুক্তি আইনের কথা বলা হচ্ছে, তা হলে সে ক্ষেত্রেও ৬৮ নম্বর ধারায় এমন কোনও বিষয়ের উল্লেখ নেই। আর তথ্যপ্রযুক্তি আইনে সব মিলিয়ে আছেই ৯০টি ধারা। ফলে, ১৪০ বা ১৮৮ ধারার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে খাটে না।
ভাইরাল হওয়া ওই মেসেজে যে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে সেটাও পুরোপুরি ঠিক নয়। গত ২৪ মার্চ রাত আটটায় জাতির উদ্দেশে বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন। ওই দিন রাতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৬ ধারার ২ (আই) অনুচ্ছেদ লাগু করে। গোটা আইনটি মোটেও বলবৎ করা হয়নি।
বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ২০০৫ এর ৬(২)(আই) অনুচ্ছেদ
কিন্তু ওই আইনের কোথাও বলা নেই যে, করোনাভাইরাস নিয়ে তথ্য আদান প্রদান দণ্ডনীয় অপরাধ।
খোদ ‘প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো’ ৬ এপ্রিল, সোমবার টুইট করে জানিয়েছে এই মেসেজটি ভুয়ো।
এই মেসেজ পড়ে অনেকেই ভাবতে পারেন যে, কী ভাবে দু’দিনের জন্য হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ বন্ধ করা যায়? এখানে বলে রাখা ভাল যে, কোনও হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ সাময়িক ভাবে বন্ধ করা যায় না। হয় আপনি গ্রুপ ডিলিট করতে পারেন, নয় আপনি গ্রুপ থেকে কাউকে বাদ দিতে পারেন।
যে পোর্টালটির লিঙ্ক এই মেসেজের সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে, তারাও টুইট করে ওই মেসেজটি শেয়ার করতে বারণ করেছে এবং জানিয়েছে ওই মেসেজটি ভুয়ো।
সম্প্রতি প্রায় একই ধরনের একটি ভুয়ো মেসেজ ভাইরাল হয়েছিল।
তা হলে শাস্তি কখন হতে পারে?
বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫৪ নম্বর ধারায় শাস্তির কথা বলা আছে।
বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, আতঙ্ক তৈরি করতে পারে, বিপর্যয় সংক্রান্ত এমন কোনও ভুয়ো তথ্য ছড়ালে তা দণ্ডনীয় অপরাধ। সে ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত জেল অথবা জরিমানা অথবা দুটোই হতে পারে।
বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ২০০৫ এর ৬৮ ধারা
এই ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৫ ধারার (১)(বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ীও আপনার বিরুদ্ধে মামলা রুজু হতে পারে।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৫ ধারার (১)(বি) অনুচ্ছেদে রয়েছে, কেউ যদি কোনও ব্যক্তিকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করেন, কোনও গোষ্ঠীকে আতঙ্কিত করেন বা এমন কোনও অপরাধে ইন্ধন জোগান, যার ফলে সমাজের সম্প্রীতি নষ্ট হয় বা রাষ্ট্র ব্যবস্থার উপর আঘাত আসে, তবে এই ধারায় অভিযুক্ত করা হবে। দোষী ব্যক্তির ছ’বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানা হতে পারে।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৫ (১)(বি) যা বলছে
আনন্দবাজারের তরফে এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ), মুরলিধর শর্মা ফেক নিউজ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ভুয়ো খবর বা তথ্য ছড়ালে আমরা কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতিমধ্যেই একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত কী উদ্দেশ্যে এবং কী ধরনের ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছেন তার উপর নির্ভর করছে কোন আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।” তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অশান্তি ছড়াতে বা সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরি করতে কোনও ভুয়ো খবর ছড়ান এবং তার ফলে যদি সরকারি কর্মীদের উপর হামলা হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩, ১৫৩এ, ২৯৫এ ধারায় মামলা করা হচ্ছে। অন্য ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৫(১)(বি) ধারায় মামলা করা হচ্ছে।”
ফলে করোনা নিয়ে কোনও খবর বা জোক আদানপ্রদান করলে আপনি গ্রেফতার হবেন, তা ঠিক নয়। শুধু ভুয়ো খবর ছড়াবেন না, তা হলেই বিপদ।
হোয়াটস্অ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারে যা-ই দেখবেন, তা-ই বিশ্বাস করবেন না। শেয়ারও করে দেবেন না। বিশেষত এই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় তো তো নয়ই। এ ভাবেই ছড়িয়ে পড়ে ভুয়ো খবর। যাচাই করুন। কোনও খবর, তথ্য, ছবি বা ভিডিয়ো নিয়ে মনে সংশয় দেখা দিলে আমাদের জানান এই ঠিকানায় feedback@abpdigital.in