EWS Reservation

সব গরিবই কি সুবিধা পাবেন? উচ্চশিক্ষা এবং চাকরিতে ১০ শতাংশ নতুন সংরক্ষণের আওতায় কারা

ইডব্লিউএস ব্যবস্থায় কি জাতি, বর্ণ বা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ভাগবাঁটোয়ার থাকবে? কারা এর আওতায় রয়েছেন? কবে থেকে চালু হল ইডব্লিউএস? এই ব্যবস্থার সুবিধা পেতে হলে কী কী শর্তপূরণ করতে হবে?

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ১৬:০২
Share:

ইডব্লিউএস আইন নিয়ে একগুচ্ছ আবেদনের শুনানির পর এর পক্ষে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ হারে সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন সমাজের গরিবরা। অর্থাৎ, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণি (ইডব্লিউএস)-ভুক্ত হলেই ওই দুই ক্ষেত্রে সংরক্ষণের আওতায় ঢুকে পড়বেন তাঁরা। তবে প্রশ্ন উঠছে, সমাজের সমস্ত গরিবই কি এই সুবিধা পাবেন? এই ব্যবস্থায় কি জাতি, বর্ণ বা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ভাগবাঁটোয়ারা থাকবে? কারা এর আওতায় রয়েছেন? কবে থেকে চালু হবে ইডব্লিউএস? এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার সুবিধা পেতে হলে কী কী শর্তপূরণ করতে হবে?

Advertisement

এ দেশে অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণির নানা বর্ণের মানুষজনের জন্য শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সংরক্ষণের বন্দোবস্ত রয়েছে। যেমন, তফসিলি জাতি (এসটি)-র ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ, তফসিলি উপজাতি (এসসি)-দের জন্য ৭.৫ শতাংশ এবং অন্যান্য জাতি (ওবিসি)-রা পান ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের সুবিধা। তবে এ নিয়ে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন সরব তথাকথিত উচ্চবর্ণের অথচ আর্থিক ভাবে দুর্বলেরা। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, এঁদের কথা মাথায় রেখেই সমাজের সর্বস্তরের দরিদ্রদের জন্য এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার গোড়ার কথা:

Advertisement

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন এনডিএ সরকারের আমলে এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, সে বছরের এপ্রিল-মে মাসে লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এসেছিল সেই প্রস্তাব। সরকারের দাবি ছিল, সমাজের গরিবদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট নাগরিকের মাসিক আয় এবং জমিজমা, সম্পত্তির পরিমাণই স্থির করবে, তিনি এই সংরক্ষণের আওতায় আসবেন কি না। যদিও সমালোচকদের দাবি ছিল, ভোটবাক্সের কথা মাথায় রেখে উচ্চবর্ণের খুশি করতেই এই বন্দোবস্ত। কারণ, সে সময় দলিত বা তফসিলি জাতি-উপজাতির মতো সমাজের তথাকথিত বঞ্চিতেরা ইতিমধ্যেই সংরক্ষণের আওতায় ছিলেন।

ইডব্লিউএস আইন:

২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের স্বাক্ষরের পর সংবিধানের ১০৩তম সংশোধনী বিলটি আইনে পরিণত হয়। ওই বিলে সংবিধানে ১৫(৬) এবং ১৬(৬) ধারা দু’টি সংশোধন করে সরকারপক্ষ জানায়, সমাজের আর্থিক ভাবে দুর্বলদের জন্য এমন সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা হল যাতে তাঁরা শিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে সুবিধা পাবেন। তবে এর সুবিধা পেতে হলে কয়েকটি শর্তও পূরণ করতে হবে।

১০ শতাংশ সংরক্ষণের জন্য কী কী শর্তপূরণ করা জরুরি?

১) এই সংরক্ষণের সুবিধা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট নাগরিকের পরিবারের বার্ষিক আয় ৮ লক্ষ টাকার কম বা মাসে ৬৬,৫০০ টাকার মতো হতে হবে।

২) জমিজমার পরিমাণ হতে হবে ৫একরের কম।

৩) ১,০০০ বর্গফুটের কমে ফ্ল্যাট বা বাড়ির মালিক। পুরসভা এলাকায় ১০০ গজের কম এবং পুর এলাকার বাইরে ২০০ গজের কম বসতজমির মালিক হলেও এই সংরক্ষণের সুবিধা নিতে পারেন।

বিতর্ক:

এই বন্দোবস্ত নিয়ে সমালোচনা, বিতর্ক কম হয়নি। সংবিধানে ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণের মাত্রা বাড়ানো যাবে না বলা হয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশ অনুযায়ী, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গনা বা মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে তারও বেশি সংরক্ষণের সুবিধা রয়েছে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যার ভিত্তিতে এমন করতে পারবে রাজ্যগুলি। যদিও কেন্দ্রীয় স্তরে সেই বন্দোবস্ত ছিল না।

বস্তুত, সরকারের দাবি, স্বাধীনতার পর এই প্রথম আর্থিক ভাবে পিছিয়েপড়াদের জন্য সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া হল। যদিও এর থেকে তফসিলি জাতি বা উপজাতি এবং অন্যান্য বর্গের মানুষদের বাদ রাখা হয়েছে।

অবশ্য চলতি বছরে কর্মী ও কর্মিবর্গ মন্ত্রক জানিয়েছিল, সমস্ত জেনারেল ক্যাটেগরির নাগরিকই এই সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন। এমনকি, রাজ্যস্তরে ওবিসিরা শর্তপূরণ করলেও কেন্দ্রের এই সংরক্ষণের সুবিধা নিতে পারবেন। তবে এসসি, এসটি-রা সে সুবিধা পাবেন না। মোদী সরকারের দাবি ছিল, যে সমস্ত নাগরিকেরা একবেলা খাবার জোটাতে অপারগ, তাঁদের জন্যই ইডব্লিউএস-এর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। যাতে কোনও ব্যক্তি ক্ষুধার্ত না থাকেন। অথবা যাঁরা ঝুপড়িতে থাকেন কিংবা কর্মহীন, তাঁরাও যাতে সম্মানের সঙ্গে চাকরিবাকরি করতে পারেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement