আর্থিক ভাবে অনগ্রসরদের জন্য সংরক্ষণ বৈধ, মত শীর্ষ আদালতের। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
সুপ্রিম কোর্টে বড় জয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের। অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল শ্রেণি (ইডব্লিউএস)-র জন্য কলেজ এবং সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের পক্ষেই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। দরিদ্রদের জন্য সংরক্ষণ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত যে বৈধ, তা মনে করেন এই মামলায় শীর্ষ আদালতের ৫ বিচারপতির মধ্যে ৩ জনই। সোমবার তাঁদের পর্যবেক্ষণ, অর্থনৈতিক মানদণ্ডের বিচারে এই সিদ্ধান্ত কোনও ভাবেই বৈষম্যমূলক নয়।
এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি উমেশ ললিতের নেতৃত্বে গঠিত ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী, বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট্ট, বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী এবং বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, প্রধান বিচারপতি ললিত এবং বিচারপতি ভট্ট এই রায়ের বিরুদ্ধমত পোষণ করেন। যদিও রায়দানের সময় বিচারপতি মহেশ্বরীর পর্যবেক্ষণ, অর্থনৈতিক মানদণ্ডের নিরিখে ইডব্লিউএস সংরক্ষণ আইন কোনও ভাবেই সংবিধানের মূল কাঠামো অথবা সাম্যের নীতিকে লঙ্ঘন করে না। তবে প্রধান বিচারপতি ললিত এবং বিচারপতি ভট্টের মতে, এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা থেকে তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির দরিদ্রদের বাদ দেওয়া অসাংবিধানিক।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে সাংবিধানিক বেঞ্চে একগুচ্ছ আবেদন জমা পড়েছিল। এই মামলা নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে শুনানির পর রায় সংরক্ষিত রেখেছিল শীর্ষ আদালত। সোমবার রায়দানের সময় শীর্ষ আদালতের বিচারপতি রবীন্দ্র ভট্ট ছাড়া বাকিরা এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার পক্ষেই রায় দিয়েছেন। রায়দানের সময় বিচারপতি মহেশ্বরীর সঙ্গে সহমত বিচারপতি ত্রিবেদী। যদিও তিনি বলেছেন, ‘‘বৈষম্যমূলক হওয়ার কারণ দেখিয়ে সংবিধানের ১০৩তম সংশোধনীকে বাদ দেওয়া যায় না। স্বাধীনতার ৭৫ বছরের শেষে আমরা (দেশের) সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে পুনর্বিবেচনা করব।’’ এই বেঞ্চের অপর সদস্য বিচারপতি পার্দিওয়ালার মন্তব্য, ‘‘বিচারপতি মহেশ্বরী এবং বিচারপতি ত্রিবেদীর সঙ্গে সহমত পোষণ করে অপরিবর্তিত সংশোধনী বহাল রেখে বলতে পারি যে, সংরক্ষণই শেষ কথা নয়। এটি একটি পথমাত্রা। কিন্তু একে কায়েমি স্বার্থে পরিণত হতে দেওয়া উচিত নয়।’’ যদিও এই রায়ের বিপক্ষে গিয়ে বিচারপতি ভট্টের মত, ‘‘যাঁরা সামাজিক এবং পিছিয়েপড়া শ্রেণির সুবিধাভোগ করছেন, তাঁরা সমাজের ভাল জায়গায় রয়েছেন।’’ বিচারপতি ভট্টের মতোই প্রধান বিচারপতি ললিতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘অর্থনৈতিক মানদণ্ডের উপর ভিত্তিতে তৈরি এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা সংবিধানের মূলগত কাঠামোকে লঙ্ঘন না করলেও এসটি, এসসি, ওবিসি-দের এর থেকে বাদ দেওয়াটা অবশ্যই তা করে।’’
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১০৩তম সংশোধনীতে এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার প্রস্তাব এনেছিল মোদী সরকার। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য শিক্ষা এবং সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত সংসদে পাশ হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। ঘটনাচক্রে, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পরেই মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ে বিধানসভা নির্বাচনে হারের মুখ দেখে বিজেপি। পাশাপাশি, মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আবেদন জমা পড়েছিল। আবেদনকারীদের দাবি ছিল, এই সংরক্ষণ ব্যবস্থায় সংবিধানের মূলগত সাম্যের নীতি লঙ্ঘিত হয়েছে। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্ধারিত সংরক্ষণের ৫০ শতাংশ সীমা পার করছে মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্ত, এমন দাবিও করেছিলেন আবেদনকারীরা।
মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেনি কংগ্রেস-সহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই। এমনকি, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে যেখানে শিক্ষা ও চাকরিতে অনগ্রসর শ্রেণির সংরক্ষণের মাত্রা অনেক বেশি (৬৯ শতাংশ), সে রাজ্যও এই সিদ্ধান্তে উচ্চবাচ্য করেনি।