Air Pollution

বিষবাষ্প

প্রজাতন্ত্র দিবসে কলকাতার বালিগঞ্জ, যাদবপুর, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের বাতাসের গুণমান ‘খারাপ’-এর পর্যায়ভুক্ত ছিল। গুণমান ‘মাঝারি’ ছিল বিধাননগর, ভিক্টোরিয়া চত্বরে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:০১
Share:

শীতকাল, প্রজাতান্ত্রিক ছুটি এবং রবিবার— ত্র্যহস্পর্শে শহরের খোলা জায়গাগুলিতে যে ভিড় উপচে পড়বে, তাতে সন্দেহ ছিল না। বাস্তবেও তা-ই হয়েছে। কিন্তু সেই আনন্দ শেষ পর্যন্ত ‘নির্মল’ হতে পেরেছে কি? কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নির্মিত ‘ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স’-এর পরিসংখ্যান তেমন আশ্বাস দিচ্ছে না। প্রজাতন্ত্র দিবসে কলকাতার বালিগঞ্জ, যাদবপুর, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের বাতাসের গুণমান ‘খারাপ’-এর পর্যায়ভুক্ত ছিল। গুণমান ‘মাঝারি’ ছিল বিধাননগর, রবীন্দ্র সরোবর, ভিক্টোরিয়া চত্বরে। পার্শ্ববর্তী হাওড়ার অবস্থা আরও কিছুটা মলিন। পরিসংখ্যান বলছে, সেই জেলার পদ্মপুকুর অঞ্চলে বাতাসের গুণমান ছিল ‘খুব খারাপ’ পর্যায়ভুক্ত। দাশনগর, ঘুসুড়ি ‘খারাপ’, এবং ‘মাঝারি’ ছিল বেলুড় মঠ, শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন। বাস্তবিকই কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী হাওড়ায় সাম্প্রতিক কালের দূষণ এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, খোলা জায়গায় ভোরের আলোয় বিশুদ্ধ অক্সিজেনের খোঁজ মেলে না, বরং প্রতি বার শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে নানাবিধ ক্ষতিকর কণা, যার প্রভাবটি মানবদেহে স্বস্তিদায়ক নয়।

Advertisement

শীতের দিনে দূষণের বাড়বৃদ্ধির সম্ভাবনাটি অস্বাভাবিক নয়। বিজ্ঞানীদের মতে, গরমকালে উষ্ণ বাতাস যতখানি উপরে উঠতে পারে, শীতের ঠান্ডা ভারী হাওয়া ততখানি পারে না। এর সঙ্গে বাতাসের গতি কম থাকলে দূষক কণাগুলি সরে যেতে পারে না। এর পরিণতিতে যানবাহন, কলকারখানা, এবং নির্মাণকার্যের কারণে নির্গত দূষক কণা শ্বাস নেওয়ার বাতাসেই থেকে যায়। বৃষ্টি একমাত্র সাময়িক ভাবে ভাসমান দূষক কণাগুলিকে সরিয়ে বাতাসকে কিছুটা নির্মল করতে পারে। কিন্তু কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সম্প্রতি বৃষ্টি না হওয়ায় বায়ুদূষণে লাগাম পরানো যায়নি। বৃষ্টির অভাবে পথে ধুলো ওড়া বন্ধ করতে পুরসভার পক্ষ থেকে রাস্তায় জল ছিটোনোর কাজটি করা হলেও সর্বত্র নিয়মিত ভাবে হয়নি। তা ছাড়া এই পদক্ষেপ সামগ্রিক ভাবে দূষণের পরিমাণকে হ্রাস করতে কতটা কার্যকর, সে প্রশ্ন থেকে যায়। তদুপরি, নির্মাণকার্যের কারণে উদ্ভূত ধূলিকণার ক্ষতিকর প্রভাবের কথা জানা সত্ত্বেও প্রশাসনিক উদাসীনতা অব্যাহত। এই বিষই ঢুকছে কলকাতা ও হাওড়াবাসীদের প্রত্যেক বার শ্বাস নেওয়ার সঙ্গে।

চিকিৎসকরা একমত, শীতের শহরে বায়ুদূষণের প্রকোপ বৃদ্ধি শ্বাসযন্ত্রের বিবিধ সমস্যার কারণ। ইতিপূর্বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বায়ুদূষণকে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করেছে। মাঝারি গুণমানের বাতাসও হার্ট, অ্যাজ়মা বা ফুসফুসের সমস্যায় ভোগা মানুষদের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ‘খারাপ’ মানের বাতাসে দীর্ঘ ক্ষণ থাকলে সুস্থ মানুষেরও শ্বাসজনিত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এই বিষ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে এক দিকে ব্যক্তিগত পরিবহণের ব্যবহার কম করে গণপরিবহণ ব্যবহারে মানুষকে উৎসাহ দেওয়া, এবং অন্য দিকে নির্মাণস্থলের দূষণ এড়াতে যথাযথ ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন। অথচ, উভয় ক্ষেত্রেই প্রশাসনিক গাফিলতি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। একমাত্র মেট্রো ব্যতীত শহরের অন্য গণপরিবহণগুলি সরকারি ভুল নীতির কারণে ধুঁকছে। নির্মাণ-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও পুরসভা তার স্বভাবোচিত জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিষবাষ্প বুকে নিয়ে কোনও ক্রমে বেঁচে থাকা ছাড়া নগরবাসীর অন্য উপায় কই?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement