অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অসংরক্ষিত শ্রেণির মানুষদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের পক্ষে রায় সুপ্রিম কোর্টের। — ফাইল চিত্র।
তিন বছর আগে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অসংরক্ষিত শ্রেণির মানুষদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের বিল সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়েছিল সংসদের দুই কক্ষেই। কিন্তু, তাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছিল। ৭ দিন ধরে শুনানির পর ১০৩তম সংবিধান সংশোধনীর পক্ষেই রায় দিল শীর্ষ আদালত। অর্থাৎ, অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল অসংরক্ষিত শ্রেণি (ইডব্লিউএস)-র জন্য কলেজ এবং সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করা যাবে। অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল এবং অসংরক্ষিত শ্রেণির জন্য সংরক্ষণ চালু করার ভাবনা এ দেশে অনেক দিনের পুরনো। বিভিন্ন আমলেই তা ফিরে এসেছে রাজনীতির কৌশল হিসাবে। ঘটনাচক্রে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন এবং গুজরাত এবং হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা ভোটের আগে সুপ্রিম কোর্টের এই ঐতিহাসিক রায় ‘সাফল্য’ হিসাবে ধরা দিল বিজেপির হাতে।
নব্বইয়ের দশকে নরসিংহ রাওয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অসংরক্ষিত বর্গের জন্য সংরক্ষণ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু, সেই সময় একটি মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট ৪৯.৫ শতাংশে (১৫ শতাংশ তফসিলি জাতি, ৭.৫ শতাংশ তফসিলি জনজাতি এবং ২৭ শতাংশ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) বেঁধে দিয়েছিল সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা। এর ফলে ব্যর্থ হয় সেই উদ্যোগ। মনমোহন সিংহের সরকারও আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু তাতেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় শীর্ষ আদালতের সেই রায়। সেই উদ্যোগ কার্যকরী না হলেও বিভিন্ন সময়ে ভোটের কৌশল হিসাবে উঠে এসেছে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অসংরক্ষিত শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের দাবি। এই দাবিতে গুজরাত, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রে পাতিদার, জাঠ, গুজ্জর, মরাঠাদের আন্দোলনও দেখেছে দেশ।
এর পর বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স)-র আমলে ২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়ে যায় আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অসংরক্ষিত শ্রেণির জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের বিল। সেই সময় কেন্দ্রের পাশে দাঁড়ায় মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং অসমের মতো রাজ্যগুলি। তবে বিরোধিতার পথে হেঁটেছিল তামিলনাড়ু। কিন্তু, রাষ্ট্রপতির সই হওয়ার পরই তা সংবিধানের ‘সাম্যের অধিকার’কে ভঙ্গ করছে এই অভিযোগ তুলে আদালতে যায় বিভিন্ন সংগঠন।
২০২০ সালের অগস্ট থেকে সেই মামলার শুনানি চলছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত, বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী, বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট্ট, বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী এবং বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালার বেঞ্চে। সোমবার সেই মামলায় সংবিধান সংশোধনীর পক্ষে রায় দিল শীর্ষ আদালত। বিচারপতিরা অবশ্য সকলে সহমত হয়েছেন, এমন নয়। প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত এবং বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট্ট মত দেননি সংশোধনীর পক্ষে।